দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সরকারবিরোধী শক্তি বাড়াতে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করতে চান তারা। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ৯টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি কোনো উদ্যোগ নিলে তাতে ২০ দলের সমর্থন থাকবে কি না, সে সম্পর্কে শরিকদের মনোভাব জানার চেষ্টা করা হয়। বিকাল ৪টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক হয়। এতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুজ্জামান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) শাহাদাত হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের শওকত আমিন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) আবু তাহের, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের এহসানুল হুদা, সাম্যবাদী দলের নুরুল ইসলাম, মুসলিম লীগের জুলফিকার বুলবুল উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার জন্য নির্দেশনা থাকায় কেউ নাম উদ্ধৃত করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, আমরা যা বুঝেছি তা হচ্ছে, বিএনপি একটি বৃহত্তর ঐক্যের জন্য কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতকে প্রতিবন্ধক মনে করছেন কেউ কেউ। বিএনপি এ প্রতিবন্ধকতা টপকানোর কৌশল খুঁজছে। ঐক্যের স্বার্থে তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে ২০-দলের শরিকরা যেন একমত থাকে।’ পাঁচটি প্রতিশ্রুতি নিয়ে সমমনা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে গতকাল থেকে আলোচনা শুরু করল বিএনপি। একসঙ্গে এক দফা আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন, সরকারের কাঠামো ও পরিচালন পদ্ধতি এবং রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের কথা বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে। অতঃপর এক দফা দাবির পক্ষে একটি রূপরেখা দিয়ে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচিতে যেসব রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে, তাদের নিয়েই বৃহত্তর ঐক্য বা জোট গঠন করা হবে।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের তারিখ নির্ধারণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুটির একটিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে থাকছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। এ কমিটি ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। অপর কমিটিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এ কমিটি বাম ও ইসলামী দলসহ অন্য সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলই আজ একমত। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে কীভাবে সরকার গঠনসহ রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে- এ নিয়ে দলের অবস্থানের বিষয়ে বেশ কিছু অঙ্গীকারের কথা বিএনপির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। সব দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা স্থায়ী কমিটিতে পেশ করবেন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর এই রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে যাচ্ছে বিএনপি। এ ঐক্যে বিএনপি জোটের শরিক দলগুলোর বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চায় দলটি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দল, ইসলামপন্থি দল এবং বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ঐক্যে আনতে চায় বিএনপি।
সে লক্ষ্যে টার্গেট করা দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ছাড়া নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলের সঙ্গেই এ মতবিনিময় করবে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দাবি একটাই- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। সে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ লক্ষ্যে সব গণতান্ত্রিক দল ও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষই এখন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায়। তারা বুঝতে পেরেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। মৌলিক অধিকারও জনগণ ফিরে পাবে না। সে জন্য আমরা সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। সূত্র : বিডি প্রতিদিন