ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে মূর্তির সাথে কুরআন রাখার ঘটনা আমার এলাকার। আমার বাসার পাশেই মণ্ডপ। জানালা থেকেই মণ্ডপ দেখা যায়। এই মণ্ডপেই পবিত্র কোরআন অবমাননা করার অভিযোগ এসেছে। মূর্তির পায়ের কাছে কুরআন শরীফ রেখে পূজা করা হয় এমনটাই বলা হচ্ছে। আচ্ছা এমনও তো হতে পারে যে কুরআন শরীফটা কাল রাতেই কেউ সেখানে রাখছে। যখন কেউ ওই মণ্ডপে ছিল না তখন।
দেখেন, এটা একটা আবাসিক এলাকা। আর এই মণ্ডপটা অস্থায়ী। শুধু দুর্গা পূজা উপলক্ষে ১০ দিনের জন্য বানানো হয়। পূজা শেষ হবার পরেই আবার মণ্ডপ ভেঙে ফেলা হয়। এখানে রাতে মানুষ থাকে না। আর নানুয়া দীঘির পারে রাতে এমনিতেও মানুষ সহজে বাইরে বের হয় না। এমনকি কোনো প্রশাসনের লোকও কাল রাতে মণ্ডপ পাহারা দেয়ার জন্য সেখানে ছিল না। কারণ এই মণ্ডপ কখনো কোনো সমস্যা হয় নাই। তবে কাল রাতে কয়েকবার পুলিশের গাড়ি এসে পুরো এলাকা ঘুরে গেছে। এক জায়গায় কয়েকজন ছেলেকে এক সাথে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। হয়তো প্রশাসনের আগে থেকে কিছু ধারণা ছিল। কারণ এর আগে এতো বছরে কখনোই এই এলাকার পূজায় পুলিশ আসে নাই। ধারণা থাকলে রাতে কেন পুলিশ মণ্ডপ পাহারা দেয় নাই সেটাও একটা প্রশ্ন।
কুরআন শরীফটা রাখছেও এমনভাবে যেন সবার চোখে পড়ে। একদম সামনের দিকে হনুমান মূর্তির কোলের উপর। আর পূজার জন্য তৈরি করা মূর্তির উপর কুরআন রাখা হয় নি। মণ্ডপ এর বাইরের দিকে রাস্তার পাশে দর্শনের জন্য রাখা আলাদা মূর্তি রাখা হয়েছিল। যেটার কাছে যে কেউ যেতে পারবে। হিন্দুরা তো এতো বলদ না যে এভাবে কুরআন রাখবে। তারা স্বেচ্ছায় কেন নিজেদের পূজা নষ্ট করতে চাইবে?
কাল রাতে পূজা মণ্ডপ খালি ছিল সম্পূর্ণ। রাত প্রায় ৩-৪ টার দিকেই মণ্ডপ খালি করে সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। সকালে পূজা শুরু হবার আগেই কুরআন শরীফটা এলাকাবাসীর নজরে পড়ে। শুনা যায় তখনও পুরোহিত আসে নাই। পুরোহিত আসার পর পুরোহিত নিজে অনুরোধ করেছে যাতে এই কুরআন শরীফটা সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এলাকাবাসী সেটা না করে প্রশাসনকে খবর দিয়ে পুজাই বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। প্রশাসন থেকে বলাও হয় যেন পূজা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু হিন্দুরা এটায় বাধা দেয় এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এরপরই প্রথমে বাইরে থেকে লোকজন এসে পুরো মণ্ডপ ভাঙ্গছে, প্রতিমা ভেঙে দীঘিতে ফেলে দিসে, এরপর যেই হিন্দুদের সামনে পেয়েছে তারেই পিটাইছে। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে।
এই মণ্ডপটাতে হিন্দুদের থেকে মুসলিমরা বেশি যায়। বছরের পর বছর ধরে আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলিম একসাথে মিলে মিশে থাকে। পূজায় হিন্দু মুসলিম একসাথে আনন্দ করে। কখনো কোনো সমস্যা হয় নাই। এলাকায় বিপুল পরিমাণে হিন্দু লোকজন বসবাস করে। যাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। সবাই এক সাথে বসবাস করে। আর এটাই কিছু মানুষ এর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছা করে এই কাজটা করা হইছে দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করার জন্য। বড় কোনো ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস মনে হচ্ছে।
আর কুরআন শরীফটা রাখছেও এমনভাবে যেন সবার চোখে পড়ে। একদম সামনের দিকে হনুমান মূর্তির কোলের উপর। আর পূজার জন্য তৈরি করা মূর্তির উপর কুরআন রাখা হয় নি। মণ্ডপ এর বাইরের দিকে রাস্তার পাশে দর্শনের জন্য রাখা আলাদা মূর্তি রাখা হয়েছিল। যেটার কাছে যে কেউ যেতে পারবে। হিন্দুরা তো এতো বলদ না যে এভাবে কুরআন রাখবে। তারা স্বেচ্ছায় কেন নিজেদের পূজা নষ্ট করতে চাইবে? এটা একটা মুসলিম প্রধান দেশ। এই দেশে পবিত্র কুরআন অবমাননা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না এটা তাদেরও জানার কথা।
এটা যে কেউ ইচ্ছা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্যে করসে সেটা সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু ক্ষেপা পাবলিককে এটা বুঝবে কে। তারা একটার পর একটা গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। কুরআন শরীফ নাকি দুর্গার পায়ের নিচে রাখছে, কুরআন রেখে পূজা হইছে, পুরোহিতকে বলার পরও পূজা বন্ধ হয় নাই। এইগুলো বলে বলে মানুষকে আরো বেশি উসকে দিচ্ছে। অথচ কালকে রাতের পর এখানে আর পূজা হয় নি। সকালের পরিস্থিতি যেমন ছিল প্রশাসন যদি শক্ত না হতো তাহলে রামু ট্র্যাজেডির মত ভয়াবহ কিছু হতে পারত। প্রশাসনের আন্তরিক চেষ্টার জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হয়। পুরো বিষয়টা ভালোভাবে তদন্ত করে দেখা উচিত। এর পিছনে যেই থাকুক তার বিচার দাবি করছি।
যদি কোনো হিন্দু এই কাজ করে থাকে তাহলে তার বিচার হোক। কিন্ত একজনের দোষের জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দোষী করা কোনভাবেই ঠিক না। ইসলাম আমাদের এই শিক্ষা দেয় না। এই বাংলাদেশ সবার। এখানে সবাই শান্তিতে থাকবে এটাই সবার চাওয়া। যেই এই কাজ এর সাথে জড়িত তার আসল উদ্দেশ্য ছিল এলাকার এত বছর ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা। তার উদ্দেশ্য যেন কোনভাবেই সফল না হয়। এলাকার সকল মুসলিম ভাইদের কাছে অনুরোধ তারা যেন হিন্দু পরিবার গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আর প্রশাসন এর কাছে অনুরোধ করছি এই ঘটনার সাথে জড়িত দের দ্রুত খুঁজে বের করে বিচার এর ব্যাবস্থা করা হোক।
বাংলার বুকে ইসলাম এর অপমান যেমন কোনভাবেই সহ্য করা হবে না, ঠিক তেমনিভাবে কোনো নির্দোষ মানুষ যেন শাস্তি না পায় এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
- কাজী তানিম। অনলাইন একটিভিস্ট ও কুমিল্লার আলোচিত মণ্ডপের প্রতিবেশি।