ইউকে বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
হেডলাইন

ধর্ষক ছাত্রলীগ-ধর্ষক যুবলীগের জননী শেখ হাসিনা আপনাকে অভিনন্দন

◻️রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী◻️

২০১৪ এর ঘটনা। লন্ডনে আমি তখন খুবই জনপ্রিয় প্রেজেন্টার, চ্যানেল আই ইউরোপের মালিক। রাস্তাঘাটে হাটতে পারিনা। যেখানে যাই মানুষ ঘিরে ফেলে। আমার অনুষ্টান ষ্ট্রেইট ডায়লগ লোকে দেখে। লন্ডনে জনপ্রিয়, সমান সময়ে ইউরোপেও জনপ্রিয়। তো একদিন পূর্ব লন্ডনে এক বিয়ে বাড়ীতে গিয়েছি। ড্রয়িংরুমে প্রচুর লোকজন বসা। আমাকে দেখে অনেকেই উঠে দাড়িয়েছেন। কেউ কেউ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছেন আমি এখানে কি করে এলাম? কার মেহমান। যে বাড়ীতে গিয়েছিলাম সে বাড়ীর মুরুব্বী আমাকে দেখতে চান। কারন তিনি আমার বাবার বন্ধু। যেহেতু সবাই আমাকে চিনেন। কথা শুরু হতে সময় লাগেনি। হঠাৎ এক বয়স্ক মহিলা রুমে ঢুকলেন। বয়স হলেও মহিলা যে সুন্দরী ছিলেন সেটি বুঝা যায়। বয়স ৮৫/৯০ এর কাছাকাছি। সবাইকে তুই তুকারী করছেন। যাকে চিনতে পারছেন তার সাথে কথা বলছেন। যাকে চিনতে পারছেন না তাকে জিজ্ঞেস করেছন তোর বাবার নাম কি? বাবার নাম বললেই বলে উঠছেন তুই অমুখের পোলা। তোর বাপ এই ছিল সেই ছিল ইত্যাদি।

সর্বশেষ আমার পালা। আমাকে একনজর আড়চোখে দেখলেন। বললেন তোমাকে তো টেলিভিশনে দেখি। বাড়ী কোথায়? বলেছিলাম বাড়ী। দেশের বাড়ীর কাউকে চিনতে পারলেন না। বাবার নাম বলেছিলাম, বললেন না চিনতে পারছিনা। বলেছিলাম আমরা ছোট বেলায় সিলেট শহরের কাজীটুলায় বসবাস করেছি। ১৯৭৬/৭৭ সাল থেকে ১৯৯০ সিলেট শহরেই কেটেছে আমার জীবন। তারপর তিনিই একজনের নাম বলে জিজ্ঞেস করলেন চিনি কি-না? বলেছিলাম চিনি। কি বলবো চিনি, বললেন সে তো ডাকাত ছিল। রুমের প্রত্যেকটি লোক হেসে উঠেছিল। মানুষ আমাকে ভূল বুঝতে শুরু করলো। ডাকাতের সাথে খাতির। যায় কোথায়। আমার তো ইজ্জতের উপর হাটু পানি। আমি উপায়ন্তর না দেখে মহিলাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কি করে উনাকে চেনেন? মহিলা বলেছিলেন চেনা লাগে নাকি? খারাপ লোকদেরকে  সবাই চিনে। বলেছিলাম আপনি যেভাবে বলেছেন তাতে তো সবাই ধরে নিচ্ছে আমি উনার আত্মীয় এবং আমিও ডাকাত। ভদ্র মহিলা বলেছিলেন পাপ একজন করে প্রায়শ্চিত্ত অনেকেই ভোগ করে। তুমি যখন চিনো তখন সে তোমার আত্মীয়  না হলেও আত্মীয়। আমার তো মান সম্মান গেল। সেই বেইজ্জতি নিয়ে কিভাবে পালাবো ভেবে পাইনি। মহিলাও একের পর এক প্রশ্ন করছেন, তিনি আমার পাশ থেকে উঠছেন না। পাবলিক মজা নিচ্ছে। দুএকজন মৃদুস্বরে বলেছিল টেলিভিশনে বসে লম্বা লম্বা কথা বলেন নানি-দাদি দিয়েছে বাশ। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো। বলেছিলাম আপনি যাকে ডাকাত বলছেন হয়তো উনার কাছে আপনি বিয়ে বসতে চেয়েছিলেন উনি বিয়ে করেননি অথবা পাত্তা দেননি যার কারনে এখন যা ইচ্ছে তাই বলছেন। মহিলা আমার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে আমাকে একটা বকা দিয়ে স্থান ত্যাগ করেছিলেন। আমি অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচি।

প্রিয় পাঠক, এ গল্পের অবতারনা কেন করলাম অনেকেই হয়তো ভাবছেন। ভাবার কোনো কারন নেই। আজকের যারা ধর্ষক, যারা এমসি কলেজে ধর্ষন করেছে, তারা কারা? তারা ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যে মহিলাকে উলঙ্গ করে ভিডিও করে আবার সে ভিডিও ভাইরাল করেছে তারা কারা? তারা যুবলীগের সোনার ছেলেরা। যারা ক্যাসিনো সম্রাট তারা কারা? তারাও যুবলীগের সোনার ছেলেরা। তাদের জননী আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগ বলে, সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার দায় দায়িত্ব তারা নেবেনা। কে নেবে দায়িত্ব? পরিস্কার বক্তব্য এসেছে-সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার জন্য দায়ী এমসি কলেজের সামনের এলাকা যেটি পরিচিত টিলাগড় গ্রুপ হিসেবে। সেখানে গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদ গ্রুপ ও রঞ্জিত গ্রুপ। এদের গড ফাদার কে? এদের গড মাদার কে? সিলেটের এমপি বলেছেন কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। সিলেটের এমপি কে? মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কি জানেননা তার সিলেটে কি হয়? সিলেটের পুলিশ প্রশাসন জানেনা সিলেটে কি হচ্ছে? আওয়ামীলীগ জানেনা তাদের দলে কে সন্ত্রাসী কর্মাকান্ড ঘটায়? সব জেনে শুনে আবার যখন বলে তারা দায়িত্ব নেবেনা তাহলে আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা কে নেবে দায়িত্ব? জায়গার দালালী থেকে শুরু করে আদম পাচার, নারী ব্যবসা, খুন ছিনতাই সিলেটে কারা করে? মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানেন না? ওরা সবাই ব্যবসা করে। শুনেছি সত্যি মিথ্য জানিনা, আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীও নাকি এখন ভালো ব্যবসা করেন। ব্যবসা করা ভালো। জায়গার দালালী, খুন, রাহাজানী, ছিনতাই, পুলিশের ওসির বদলী, নারী ধর্ষন সবই তো ব্যবসা। শেয়ার মার্কেট কেলেংকারী, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পাওয়ার প্লান্ট, বাংলাদেশ ব্যংকের রিজার্ভ চুরি সবই তো ডিজিটাল ব্যবসা। ব্যবসা করবেন, টাকা কামাই করবেন, আবার কোনো অঘটন ঘটলে বলবেন দায়িত্ব নেবেন না তা তো হয়না। দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব এড়াতে পারেন না আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সিলেটের ঘটনার দায় আওয়ামীলীগের, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ঘটনার দায়ও আওয়ামীলীগের।

শেষ কথা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অভিনন্দন, আপনাকে অভিবাদন। আপনার সোনার ছেলেরা দুনিয়া জোড়া নাম করেছে। আমি আপনার এবং আপনার সোনার ধর্ষক ছেলেদের উজ্জল ভবিষ্যত কামানা করি। আপনি আপনার সোনার ছেলেদেরকে নিয়ে সুখে থাকুন, শান্তিতে থাকুন। আর ধর্ষিতরা আরো ধর্ষিত, ধর্ষনের কারনে মহিলারা গর্ভবতী হোক, সেখান থেকে বাইবর্ন-জন্মগত আওয়ামীলীগ জন্মাক এটাই প্রত্যাশা। কারন জন্মগত আওয়ামীলীগ হলে আপনার সাবেক চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ আর বলতে পারবেন না যারা ধর্ষন করেছে তারা বিএনপি জামাতের লোক। তখন বলা যাবে ধর্ষকের বাচ্চা ধর্ষক। তখন বলা যাবে আওয়ামী ধর্ষকের বাচ্চা——–।

লেখক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যনেল আই ইউরোপ

সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব

Email faisollondon@yahoo.co.uk

লন্ডন ৫/১০/২০২০ ইংরেজী সোমবার।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব। ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ এর নয়। - সম্পাদক

সর্বশেষ সংবাদ