◻️রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী◻️
আমি বঙ্গবন্ধু হতে আসিনি। আমি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান হতে আসিনি। আমি সিলেটের জাতীর পিতা হতে আসিনি। আমি ওসমানী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী হতেও আসিনি। আমি রব, শাহজাহান সিরাজ, মাখন, সিরাজুল আলম খান, রাজ্জাক, তোফায়েল হতে আসিনি। আমি আসিনি পতাকা উত্তোলন করতে। আমি আসিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হতে। আমি আসিনি নিজামী, কাদের মোল্লা, গোলাম আযম হতে। আমি আসিনি খন্দকার মোশতাকের মত মীরজাফর হতে। আমি আসিনি, স্বৈরশাসক এরশাদ, জেনারেল মইনুদ্দিন, ফখর উদ্দিন হতে। আমি আসিনি নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান, ফেনির জয়নাল হাজারী হতে। আমি আসিনি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মোজাম্মেল বাবু, পীর হাবিব, সৈয়দ বোরহান কবীর হতে। আমি আসিনি কবি শামসুর রহমান, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিন, শাহরিয়ার কবীর, সুলতানা কামাল, মুনতাসির মামুন হতে। আমি আসিনি হলমার্ক, ডেস্টিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ হতে। আমি আসিনি বার বার শেয়ার মার্কেটের টাকা তুলে নিতে। আমি আসিনি ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের জীবন্ত বোবা সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকতে। আমি আসিনি অন্যায় অত্যাচারের সাক্ষী হতে। আমি আসিনি ইলিয়াস আলীর গুমের সাক্ষী হতে। আমি আসিনি কাজল, মোশতাকসহ অসংখ্য সংবাদ কর্মীদের রাতের অন্ধকারে তুলে নেয়ার সাক্ষী হতে। আমি আসিনি মুরগী মিলন, কালা জাহাঙ্গীর, সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হান্নান, লেদার লিটন হতে। আমি আসিনি বুয়েটের আবরার হত্যার নীরব সাক্ষী হতে। আমি আসিনি সজীব ওয়াজেদ জয়, তারেক রহমান হতে। আমি আসিনি তারানা হালিম, জুনেদ আহমদ পলক হতে। আমি আসিনি বঙ্গবন্ধু স্যটেলাইটের নীরব দর্শক হতে। আমি আসিনি সরকারের অন্যায় অত্যচারের পক্ষে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ হতে। আমি আসিনি ক্যসিনোর শাহানসা হতে। আমি আসিনি পাপিয়ার খদ্দের হতে।
বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম, কিন্তু আমি সে প্রেম পাইনি। এ নীরস বাংলাদেশ আমাকে প্রেম দেয়নি। আমি উপায়ন্তর না দেখে দেশ ছেড়েছিলাম সেই ৯০ ইংরেজীর মে মাসে। লন্ডনে এসে আমি আমার নতুন ঠিকানা খোঁজে নেই। ইষ্ট লন্ডন হয় আমার স্বপ্নের ঠিকানা। সময় গড়াতে থাকে। আমি পথ চলি।
আমার মনে পড়ে প্রথম লন্ডনে এসে আমরা আমাদের চাচার বাসায় উঠেছিলাম। ইষ্ট লন্ডনের ব্রাডি সেন্টারের কাছেই ছিল চাচার বাসা।সেখান থেকে ওয়াটারলু। ওয়াটারলু থেকে আবার ইস্ট লন্ডনের মেনর পার্ক। তারপর আবার ইষ্ট লন্ডনের লাইম হাউস। এখন আমার নিবাস টেমসের পারে। কথা ছিল আমি হাটবো সুরমা বুড়িগংঙ্গা পদ্মা মেঘনা যমুনা গোমতী তীতাসের তীর ঘেষে। আমি পড়বো “কুমিল্লার শ্যমল মায়া মেঘনার উদাস কন্ঠ তার মনিহার গোমতী তিতাস“ কিন্তু আমার সে সৌভাগ্য হয়নি। আমি পারিনি দেশে থাকতে। দেশ আমার নয়। দেশের আলো বাতাস আমার জন্য সুখকর ছিলনা। দেশে যারা বসবাস করে যারা বাংলাদেশের হর্তা কর্তা বিধাতা তারা মানুষ হিসেবে যত না দরিদ্র তার চাইতে দরিদ্র তাদের মন মানসিকতা। আমি দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।
সে যাক, কিছু লেখালেখি করতাম। ব্যাক্তিগত জীবনে খুবই স্বাধীনচেতা ছিলাম। যা সত্য তা মুখের উপর বলতে আমি কোনো কার্পন্য করিনি কখনো। লন্ডনে আসার পর নতুন এক জীবনের সন্ধান পেয়েছিলাম। শুনেছিলাম মানুষের আর্তনাদ। লন্ডন প্রবাসীদের হয়রানীর করুণ কাহিনী। স্বদেশী মানুষরাই তাদেরকে সমালোচনা করে। কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেকে শিক্ষিত মনে করে। করতেই পারে। যে শিক্ষিত সে তো বলবেই। অন্যকে মনে করে আনকালচারড। ইষ্ট লন্ডনে দেখেছিলাম বাংলা সংস্কৃতিকে ধারন করেনা আমাদের ছেলে মেয়েরা। তারপর দেখি সমালোচনায় পরিণত হতে চলেছে। ইন্ডিয়ান জিটিভি সনি টিভির কারনে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। যারা সমালোচনা করে তারা নিরাপদ দুরত্ব থেকেই সমালোচনা করছে। তারা বলতো আমরা ইষ্ট লন্ডনে যাইনা। ইষ্ট লন্ডনের বাঙালী কালাচার ভালো না ইত্যাদি। তখন আমি আমার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব মিলে গঠন করি দেশ বিকাশ নামে একটি সংগঠন। সেটি ১৯৯১ ইংরেজীর কথা। আমরা বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করি। মেলার প্রচার প্রসারের জন্য তৎকালীন বাংলা পত্রিকা এবং রেডিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তৎকালীন সুরমা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন অগ্রজ নজরুল ইসলাম বাসন। বাসন ভাই একদিন বলেছিলেন স্পেকট্রাম রেডিওতে তোমাকে যেতে হবে আমি ইন্টারভিউর ব্যবস্থা করেছি। স্পেকট্রাম রেডিওর তৎকালীন কর্ণদার ছিলেন য়ায়যায়দিন এবং ভালোবাসা দিবসের আবিস্কারক শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান সাহেব। স্মৃতি যদি আমার সাথে প্রতারণা না করে তাহলে খুব সম্ভবত শফিক ভাই আমাকে ব্রান্ট ক্রস ষ্টেশন থেকে পিক করেছিলেন। শফিক ভাইয়ের একটি মিনি গাড়ীতে করে পৌঁছে ছিলাম রেডিও অফিসে। আমার জীবনের প্রথম ইন্টারভিউ, তা–ও শফিক রেহমান সাহেবের সাথে। মনে মনে ভয় পেয়েছিলাম, আবার ডেম কেয়ার ভাবও ছিল। শফিকভাই বিভিন্ন কথার ফাঁকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন ইষ্ট লন্ডনে তো প্রচুর সিলেটি মানুষ বসবাস করে তুমি কি সিলেট থেকে কোনো বিশেষ জিনিষ পত্র কিনে এনেছ মেলায় প্রদর্শন এবং বিক্রি করার জন্য? আমি উত্তরে বলেছিলাম শফিক ভাই সিলেট তো বাংলাদেশেরই একটি অংশ, একটি জেলা। আমরা নাম দিয়েছি বাংলাদেশ মেলা। শফিক ভাই মেলার সাফল্য কামনা করে আমাকে বিদায় দিলেন। আমি আসতে আসতে ভেবেছিলাম এ প্রশ্ন কেন? সময় গড়ালো, আমিও বড় হতে লাগলাম। বুঝার চেষ্টা করেছিলাম কি ঘটতে যাচ্ছে।দেখলাম মানুষের মন মানসিকতা। দিনে দিনে বেলা বেড়েছে। ঋনের পাল্লা ভারী হচ্ছে। কিছু সংখ্যক মানুষের হুদাই সমালোচনা, আমরা বাঙালী সমাজের সাথে মিশিনা। শুনতে শুনতে একজনকে একদিন বলেছিলাম আপনি যে প্রায়ই বলেন আপনি বাঙালী সমাজে মিশেননা। আপনি কে? কি আপনার পরিচয়? কোথা থেকে এসেছেন? এ কমিউনিটির প্রতি আপনার কি কোনো দায়িত্ব নেই? তিনিছিলেন নিরুত্তর। সেই থেকে বাঙালী সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। জিটিভি সনি টিভি হিন্দি ফিল্ম থেকে বাঙালী সমাজকে বের করে আনার যে কাজটি বিভিন্ন সময়ে যারা লন্ডনের বাংলা পত্রিকা, রেডিও এবং সর্বশেষ টেলিভিশনে কাজ করেছেন, মিছিল দিয়েছেন সেই মিছিলের আমি এক নগন্য কর্মী। আর যারা সারাজীবন নিরাপদ দুরত্ব থেকে ইষ্ট লন্ডনের বাঙালী সমাজের সমালোচনা করেছেন এবং এখনো করছেন বুঝলাম তাদের ফলস্ প্রাইড। মিথ্যা অহংকারে ভাসছেন তারা। আজো ভাসছেন। তাদের কথা বার্তায় মনে হয় তাদের জন্মই যেন হয়েছে লন্ডনের সিলেটিদের সমালোচনা করার জন্য। বুকে হাত দিয়ে বলেন কে কি করেছেন এ কমিউনিটির জন্য? না সারক্ষন নিজের আখের গুছিয়েছেন?
আমি কথা বাড়াতে চাইনা। আমার যে অভিজ্ঞতার ভান্ডার এই– মধ্যে– বয়সে– উপনীত হয়েছে। সেটা থেকে বলছি সিলেটের সাথে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চলাফেরা আচার আচারনের বেশ সমস্যা হচ্ছে। সিলেটিরা অশিক্ষিত, সিলেটিরা পড়ালেখা জানেনা।সিলেটিরা আনকালচারড। সিলেটিরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। পান খেয়ে পিক ফেলে দেয় যত্রতত্র, লন্ডনকে মনে করে তার বাপ দাদার সম্পত্তি ইত্যাদি। আমি দুএকটি উদাহারন দিয়ে আজকের লেখা শেষ করি। সম্প্রতি গাফফার ভাই বলেছিলেন সিলেটিরা লাঙ্গল টু লন্ডন। সেদিন কিন্তু অন্য জেলার যারা লন্ডনে বসবাস করেন তারা প্রতিবাদ করেননি। যে রাতে তিনি কথাটি বলেছিলেন সেটি ছিল আমার সাথে চ্যানেল আইয়ের লন্ডন ষ্টুডিওতে তাঁর জস্মদিনের উৎসব। সেখানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। যক্তরাজ্যে আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান শরীফ সাহেব ছিলেন, সাবেক প্রেস মিনিষ্টার বন্ধুবর নাদেম কাদের সাহেব ছিলেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক ফাস্ট সেক্রেটারী বন্ধুবর মনিরুল কবীর ছিলেন, ছিলেন অনেকেই। কেউ টু শব্দটি করেন নি। আমি ছিলাম বিব্রত।
সে যাক, আরেকজন লেখক ছিলেন নাম এম আর আখতার মুকুল– তিনি নেই পৃথিবীতে। বই লিখে গেছেন “লন্ডনে চক্কু মিয়া“। আমি তখন দেশে। সেই বইটি আমি টাকা দিয়ে কিনে ডাষ্টবিনে ফেলেছিলাম। তাছাড়া তো আছে সিলেটিরা আলু পিয়াজ চুলাইন্না পার্টি, লন্ডনে যদি না আসতো তাহলে রিক্সা চালাতো, মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের সেই বিখ্যাত উক্তি। আমি ইতিহাস বলতে চাইনা।
আমার প্রস্তাব হচ্ছে:
(এক) এত অপবাদ এত সমালোচনা যেখানে– সেখানে তো ঘর সংসার করা যায়না। বার্নিং বেডে- জলন্ত বিছানায় কেউ শুইতে পারেনা।
(দুই) আমি উপরে উল্লেখ করেছি আমি স্বাধীনতার ঘোষনা করতে আসিনি। আমি জাতীর পিতাও হতে আসিনি। এসেছিলাম প্রেম নিতে, প্রেম দিতে। ভালোবাসা দিতে। ভালোবাসা পেয়েছি অনেক। আমি মানুষের ভালোবাসায় শিক্ত। সেই ভালোবাসা নিয়েই বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। আমি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। মাননীয় সরকার সিলেটকে কি আলাদা করে দেয়া যায়? কারন আমি যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে। সমস্যা হলে তখন স্বাধীনতার ঘোষনা আসবে। আমার মনে হয় সরকারের কর্তা ব্যাক্তিরা যদি এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে খুবই উপকার হবে। কি দরকার সম্পর্ক নষ্ট করার? অষ্ট্রেলিয়ান ষ্টাইলে সরকার চলতে পারে। প্রয়োজনে আমরা সিলেটিরা বাংলাদেশ সরকারকে অষ্ট্রেলিয়া কানাডার মত টেক্স দিলাম। যেমনিভাবে বৃটেনের রয়েল ফ্যামেলীকে ওরা টেক্স দেয়। বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।
শেষ কথা: সিলেটের লোকেরা অশিক্ষিত আপনারা সবাই ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর। সিলেটের লোকেরা আনকালচারড, আপনারা কালচারড। সিলেটের লোকেরা আলু পিয়াজ চুলাইন্না পার্টি আপনারা সলিসিটর ব্যারিষ্টার তাতে আমাদের কোনো কিছুই যায় আসেনা। আমাদেরকে আমাদের মত করে থাকতে দিন প্লিজ। আমারা আপনাদেরকে বিরক্ত করতে চাইনা। আশা করি আপনারাও বিরক্ত করবেননা। কি দরকার এ সব সমালোচনা আর ঝামেলা করার। এমনিতেই করোনা ভাইরাস তার উপর আপনাদের অত্যচার। ভালো লাগেনা এসব।
লেখক:
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি–বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক সভাপতি–ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক–চ্যানেল আই ইউরোপ।
১৩ মে ২০২০ ইংরজেী বুধবার লন্ডন
rafcbanglastatement@yahoo.com