◻️রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী◻️
লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার অবস্থা কি? বাংলা মিডিয়া কি একটি ইন্ডাষ্ট্রি হিসেবে গড়ে উঠেছে? যারা সমাজের বিত্তবান তারা কি মিডিয়া ইন্ড্রাষ্টিতে আছেন? লন্ডনে যে সব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িরা রয়েছেন তারা কি করেছেন এ কমিউনিটির জন্য? বাংলা মিডিয়ার জন্য?
যে সব লেখক সাংবাদিক দেশ থেকে বিয়ে করে লন্ডনে এসেছেন। এসে আমাদের বোন ভাগনীদের বদৌলতে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন তারা কি দু’টাকা মিডিয়ার জন্য খরছ করেছেন? আমি জানিনা।
আমার আজকের এই লেখা মাহি ফেরদাউস জলিলের পক্ষে উকালতি করার জন্য নয়। আমি বাস্তব একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টাকরবো। সম্প্রতি মাহি জলিল একটি মন্তব্য করেছেন, একটি সম্প্রদায়কে তিনি টেনে নিয়ে এসেছেন। না আনলেই পারতেন। কিন্তু চলে এসেছে। তিনি পানের ব্যপারে বলতে গিয়ে বলেছেন আমাদের মানুষরা কমজাত। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে সরাসরি গালি দেননি। ব্যপারটি বুঝতে হবে। তিনি গালি দিয়েছেন যারা পাচটা পানের জায়গায় তিনটা দিয়ে দেয়। তাদেরকে তিনি বলেছেন কমজাত ——-। আমি সে বিতর্কে যেতে চাইনা। মাহি জলিল টেলিভিশনে বসে ক্ষমা চেয়েছেন। আমি ভেবেছিলাম সেটার সুরাহা হয়ে যাবে। কিন্তু না কিছু সংখ্যক আঁতেল সেটিকে পুজি করে লিখেই চলছেন। আমাদের সমাজের অনেকেই আছেন যারা বলে বেড়ান আমি তো টিভি দেখিনা। ও অমুখ নাকি সে তো উপস্থাপনা করতে পারেনা। টাকার বদৌলতে টেলিভিশনের মালিক হয়ে গেছে। সাংবাদিকতার স ও জানেনা ইত্যাদি। মনে হয় তিনি খুবই জানেন। লন্ডনে বাংলা কমিউনিটির যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার সবটুকু প্রশংসার দাবীদার আমাদের পূর্ব পুরুষরা, আমাদের বাবা চাচারা। সিলেটের বাইরের লোকেরা ক্রীম খেয়েছেন। সিলেটিদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খেযেছেন। সিলেটেরও কিছুসংখ্যক অশিক্ষিত মানুষরা আছেন যারা সিলেটের বাইরের লোকদেরকে তোষামোদি করে চলে। আমাকে একবার এক নন–সিলেটি মহিলা জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনার পরিবারে কি সংগীত চর্চ্চ করেন। আমি বলেছিলাম না আমি গান গাইনা গান গাওয়াই। আমি নাচিনা আমি নাচাই। পরবর্তীতে তিনি হিসেব পেয়ে আমাকে বলেছিলেন আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। মনে মনে বলেছিলাম চিনতে না পারলে কথা বলবেন কেন? চেহারা ছুরতের কোনো বালাই নেই, লম্বা লম্বা কথা। নন সিলেটি কিছু মানুষ আছে এই লন্ডনের সমাজে এমনভাব দেখায় যেন সে অনেক কিছু, আসলে খুঁজলে তো কিছুই পাওয়া যায়না।
প্রিয় পাঠক মাহি ফেরদাউস জলিল ব্যক্তিগত জীবনে আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন এক সময়। সময়ের বিবর্তনে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যে জায়গায় দাঁড়ানোর কথা ছিল সেটি হয়তো হয়নি। তবে বন্ধুত্ব আছে। বেশ কয়েক বছর আগে শফিক আহমদ জুবায়ের এক সময় চ্যানেলআই ইউরোপের ডিরেক্টর ছিলেন। বর্তমানে তিনি পূর্ব লন্ডনের গ্রীন ষ্ট্রীটে ট্রেভেলসের ব্যবসা করছেন। দেখা হলে তাকে প্রায়ই বাংলাদেশের মালিক বলি। কারন তিনি ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী মান্নান সাহেবের ভাগনা। মামা যেখানে মন্ত্রী সেখানে ভাগনা লন্ডনে থাকবে কেন? আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই তো এখন লন্ডনে নেই। কারন দল ক্ষমতায় থাকলে ব্যবসা আছে না? সে যাক জুবের ভাই আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন জলিল ভাই, তাজ ভাই, তাজ চৌধুরী– এমডি চ্যানেল এস –হাফিজ আলম বক্স- এটিএন, সাদেক আলী শিপু- ডিরেক্টর চ্যানেল আই ইউরোপ আপনারা কি ঘনিষ্ট বন্ধু? বলেছিলাম কেন? জুবের ভাই বলেছিলেন একটি চুক্তিনামায় দেখলাম আপনার নামের সাথে লিখা বন্ধু। জুবের ভাই সেদিন অনুরোধ করেছিলেন আপনারা যে যাই করুন বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যেন নষ্ট না হয়। সম্পর্ক কতটা আছে আমি জানিনা। তবে ব্যক্তিগত জীবনে আমি কারো সাথেই সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইনা। কারন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট হচ্ছে সম্পর্ক দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা। কমজাতরা সম্পর্ক নষ্ট করে। আজে বাজে কথা বলে।
মাহি ফেরদাউস জলিলের একটি উক্তি নিয়ে যেভাবে সোস্যাল মিডিয়ায় কেম্পেইন চলছে আমি সেটির তীব্র বিরোধিতা করছি। মাহি যদি ভূল করে থাকেন তাহলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তিনি যদি ক্ষমা না চান তাহলে হার্ডলাইনে যেতে পারেন। চ্যানেল এস বয়কট করতে হবে এসব ফালতু কথা না বলাই ভালো। নিজে তো বাবার জন্মে টিভি ষ্টেশন একটি প্রতিষ্টা করতে পারবেননা। অতবএ টেলিভিশন কাকে বলে বুঝবেন কি করে?
আমি আজ সত্য কিছু কথা বলে যাই। বাঁচবো কি মরবো জানিনা। করোনা ভাইরাস আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহই জানেন। প্লিজ নোট করুন। লন্ডনে সিলেটি নন সিলেটি একটি মারামারি অনেকদিন থেকেই লেগে আছে। মারামারির সুত্রপাত কে করেছিল আমি জানিনা। তবে আমার কেন জানি মনে হয় মারামারির সুত্রপাত হয়তো বা শুরু করেছিলেন আমাদের ঢাকা থেকে যে সব বড় বড় কু শিক্ষায় শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা লন্ডনে এসেছেন তারা। কয়েক বছর আগে চ্যানেল আই ইউরোপে আমি একুশে গানের রচিয়তা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর জন্মদিন পালন করছি। হঠাৎ করেই গাফফার ভাই মাহি জলিলের সমালোচনা করা শুরু করে দিলেন। শুধু মাহি জলিলের সমালোচনা নয় তিনি সিলেটের মানুষদেরকে বলেছিলেন লোকে নাকি বলে, সিলেটিরা “লাঙ্গল টু লন্ডন“। আমি গাফফার ভাইর সেদিনের কথায় খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু গাফফার ভাইকে মুখ ফোটে কিছুই বলতে পারিনি। এ নিয়ে কমিউনিটিতে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য গাফফার ভাই ক্ষমা চেয়েছিলেন। ক্ষমা চাওয়ার পর আর কিছুই থাকেনা। বড় বড় মানুষেরাও ভুল করেন।
মাহি জলিলের মুখের লাগাম নেই। লাগাম আমারও নেই। সম্প্রতি আমিও একটি অনুষ্ঠানে ফাউল করতে করতে বেঁচে গেছি। বাচিয়েছেন লন্ডন বাংলা টিভির শাহ ইউসুফ, এবং বর্তমান এবি পার্টির নেতা আইনজীবি তাজুল ইসলাম। একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক করতে যেয়ে আমার মনে হয়েছে আমি টেম্পার লস্ট করে ফেলছি। সে যাক টক শোতে তাজুল ইসলাম সাহেব যখন বলেছিলেন আমরা এ টপিকস থেকে বেরিয়ে যাই এবং শাহ ইউসুফ যখন আমাকে মেসেজ দিয়ে বলেছিলেন ফয়সল ভাই টেম্পার লস্ট করবেন না তখনই আমি অফ হয়ে যাই। সেদিন নির্ঘাত একটি দুর্ঘটনা থেকে আমি এবং এই কমিউনিটি বেচে যায়। সমস্যা হয় কি– টক শোতে বসে একজন রাজনিতীবীদ যখন বাস্তবতা বিবর্জিত কথা বলেন তখনই রাগ উঠে। প্রেজেন্টার তো আর ফেরেশতা না। সেও রক্ত মাংসের মানুষ। মাহি ফেরদাউস জলিল পান ব্যবসায়িদের সমালোচনা করতে গিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় চলে এসেছে। বাস্তবতা কি আমরা তো বেশীরভাগ মানুষই হিন্দু ছিলাম।চৌধুরী বংশের লোকেরা বেশী ছিল। আমার এক হিন্দু বন্ধু সিলেটে একবার বলেছিল দাদা আমাকে পারমিশন দিলে দুএকটা মুসলমানকে মার দেই? দাদা বলেছিলেন না আমরা হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই। আমরা মারামারি করতে পারিনা।
আমি অবাক হয়েছি মাহি ফেরদাউস জলিলের সমালোচনা করতে গিয়ে চ্যানেল এসকে বয়কটের আহবান জানিয়েছেন আমাদের বেশকিছু লোকেরা। এই লন্ডনে যারা এসেছেন তারা কিন্তু বেশীরভাগ লোকই উন্নত জীবনের জন্য এসেছেন। এসে টাকা পয়সা কামাই করেছেন। কেউ এক টাকা কমিউনিটির জন্য, মিডিয়ার জন্য ব্যয় করেননি। লন্ডনে বাংলা মিডিয়ায় যারা কাজ করে তাদের জন্য আমি বা আমরা কেউই কিছুই করতে পারিনি। একজন ক্যামেরাম্যান, একজন রিপোর্টার কয়টাকা বেতন পায়? মিডিয়ায় যারা কাজ করে তাদেরকে উল্টো সমালোচনা করে। ভাই সমালোচনা করার আগে নিজের অবস্থান সম্পর্কে একটু সচেতন হোন। একটি টেলিভিশন মিডিয়া লন্ডনে চালাতে কত খরচ হয় জেনে নিন। হুদাই একজন উপস্থাপক কিছুই জানেনা আপনি ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর এ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আরেকটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি। সিলেটি ভাষাকে নিয়ে অনেকেই ব্যঙ্গ বিদ্রোপ করেন। ২০১২ সালের কথা তখন চ্যানেল আই ইউরোপে সিলেটি একজন রিপোর্টার আমি নাম ভুলে গেছি। ঢাকা চ্যানেল আইতে নিউজ পাঠালেন– নিউজ ঢাকা অথরিটি দেয়নি। শাইখ সিরাজ সাহেব লন্ডনে আসলেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা লন্ডন থেকে নিউজ পাঠালে নিউজ দেননা কেন? শাইখ সিরাজ সাহেব বলেছিলেন সিলেটি ভাষা চলে আসলে তো সে নিউজ দেয়া যাবেনা। ৯০ এর দশকে বিবিসি’র একজন পলিটিক্যাল রিপোর্টার ছিলেন স্মৃতি যদি আমার সাথে প্রতারণা না করে তাহলে সম্ভবত নাম ছিল জন সার্জেন্ট। তিনি যখন রিপোর্ট করতেন তখন তাঁর স্কটিশ এক্সেন্ট চলে আসতো। স্কটিশরা টেনে টেনে কথা বলে। তো শাইখ সিরাজ সাহেবকে বলেছিলাম বিবিসিতে সমস্যা হয়না আঞ্চলিক ভাষা চলে আসলে আপনাদের সমস্যা হয় কেন? সিরাজ ভাই আমাকে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।
শেষ কথাঃ যারা মাহি জলিলের বিষয়টি নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন তাদেরকে বলবো অযথাই কমিউনিটিতে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আর আঁতেল যারা তারা শুধু ভর্তা দিয়ে ভাত খাবেন আর লম্বা লম্বা কথা বলবেন, আর ফেইসবুকে লিখবেন। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নৃত্য করতে পারবেন না। কারন আপানদের লন্ডন জীবনে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতে পারেন নি, শুধু সিলেটিদের অহেতুক সমালোচনা ছাড়া। অতএব সমসালোচনা না করে সিলেটিদের সাথে মিশে যান। সিলেটিরা মানুষ হিসেবে খারাপ না। তাঁদের মন অন্তর খুবই ভালো। ভালো মানুষের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সিলেটি নন সিলেটি হিন্দু মুসলিম হওয়ার আগে মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
বিঃদ্রঃ আমি নিজেও টিভিতে দীর্ঘদিন উপস্থাপনার কাজ করেছি। এখনও করছি। সত্য কথা বলে যাই। এই লন্ডনে টিভি প্রেজেন্টার হিসেবে যাদের নাম স্বীকার করে নিতে হবে তাদের মধ্যে মাহি ফেরদাউস জলিল, রিয়েলিটি উয়িথ মাহি। শামসুল আলম লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিন। উর্মি মাজহার ফ্রাইডে প্লাস। বুলবুল হাসান জনতার মঞ্চ। জেরিন, সৈয়দ গোলাম দস্তগীর নিশাদ, নাশিত রহমান, ফারহান মাসুদ খান অভিমত, সৈয়দ তানভীর আহমেদ একাত্তর টিভি অন্যতম। এরাই মুলত প্রেজেন্টিং করে মোটামুটি নাম করেছেন। সবার প্রতি শুভ কামনা রইলোা।
লেখক:
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি – বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক সভাপতি – ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক – চ্যানেল আই ইউরোপ
লন্ডন ৯ মে ২০২০ ইংরেজী
rafcbanglastatement@yahoo.com