
◽️খালেদ রাজ্জাক ◽️
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের পর দেশ লকডাউনে আছে। উৎপাদনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ইতোমধ্যেই। কৃষি খাতে উৎপাদন হয়তো টিকে আছে ধুকে ধুকে। কিন্তু লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে কৃষিখাতেও উৎপাদনের আকাল পড়বে। পৃথিবীর মানুষের খাদ্যের যোগান কৃষি থেকেই আসে। কম্পিউটার বা পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে খাদ্য উৎপাদন করা যায় না! খাদ্যশস্য, শাকসবজি, তেলবীজ এবং মসলা উৎপাদন ছাড়স তো জীবন কল্পনাও করা যায় না। আমরা হয়তো এক/দুই বছর পুরনো কাপড়-জুতা দিয়ে চালিয়ে যেতে পারবো, কিন্তু খাদ্যের যোগান বন্ধ হলে, কিংবা কমে গেলে দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ লেগে যাবে। দেখা যাবে— অনেক দেশেই জনগণের হাতে অর্থ আছে কিন্তু বাজারে খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে না!
এখন আমরা কীভাবে সম্ভাব্য খাদ্যসঙ্কট মোকাবিলা করবো? করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বার শুরুতেই লিখেছি, পুনরায় লিখতে হচ্ছে। খুব সহজ ভাষায়— এখন আমাদের কিপ্টে হতে হবে। হবেই। এছাড়া অন্য উপায় নেই। খাদ্যের ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। অল্প কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাস রপ্ত করুন। এক পদের রান্নায় খাবার সেরে ফেলুন, কোনো অবস্থায় খাদ্যের অপচয় করা চলবে না। আমার ভোজনরসিক বাবা পর্যন্ত আমাদের পরিবারে এ ব্যবস্থা মেনে নিয়েছেন। বিলাসিতা পরিহার করুন। বহু পদের ব্যঞ্জন দিয়ে টেবিল না ভরালে যাদের আহারে রুচি আসে না, তাদের উদ্দেশে বলছি— এবার ক্ষান্ত দিন। বিলাসিতার সময় ফিরে আসার অপেক্ষাটুকু আপনাকে মেনে নিতেই হবে। পরিমিত কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খেয়ে জীবনটা বাঁচুক আপনার এবং আপনার ক্ষুধার্ত প্রতিবেশীর। এমনও হতে পারে, এক কেজি চালের জন্য—যারা এখন আপনার কাছে হাত পাতে—তাদের কাছেই আপনাকে হাত পাততে হবে! কোনোকিছুই এখন আর অসম্ভব নয়। বাজারে ইতোমধ্যেই বহুকিছুর সংকট দেখা দিয়েছে। সামর্থ্যবানরা দরিদ্র প্রতিবেশীদের খোঁজ রাখুন। খাদ্যশস্য—যেগুলো সংরক্ষণ করা যায়—সংরক্ষণ করুন সাধ্যমতো। এবং যাদের সুযোগ আছে বাড়িঘরের আশেপাশে জমি আছে তারা সবজি ফলানোর উদ্যোগ নিন এখনই। খেয়াল করে দেখেছেন— খুব সামান্য যায়গায় বেড়ে ওঠা একটা পেঁপেগাছ আমাদের কী পরিমাণ সবজির যোগান দিতে পারে! সুতরাং হাত গুটিয়ে বসে না থেকে একটা কিছু উৎপাদনে অংশ নিন। আপনিও সুখে থাকুন, আপনার প্রতিবেশীরাও সুখে থাকুক।
পরম করুণাময় মানবজাতিকে এ মহাদুর্যোগ থেকে উদ্ধার করুক। মানবজাতির মঙ্গল হোক।
[খালেদ রাজ্জাক: কবি, শিক্ষক]