
◽️রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী◽️
(এক)
করনার কারনে বৃটিশ সরকার জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে, যার কারনে মসজিদে মুসল্লীদের নামায পড়তে খুবই অসুবিধে হচ্ছে। আমি পাঁচওয়াক্তের নামাজ ঘরে পড়ার চেষ্টা করি। জুমআ’র নামায আমি আমার বাসার পাশের মসজিদে আদায় করে ফেলি। আজ ২ সপ্তাহযাবত কোনো জুমআ’ নেই। কেমন জানি লাগে। মনে হয় কি একটা কাজ অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। যারা সারাক্ষণ ঘুরে এ বাড়ী ও বাড়ী পাড়াঘোরানো যাদের অভ্যাস ছিল তাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। লন্ডনে ফেসবুকে যে সব মহিলারা সারাক্ষন ছবি পোষ্ট করতো তাদেরও সমস্যাহচ্ছে। নিজেকে শুয়ে দাঁড়িয়ে বুক টান করে লোকজনকে দেখানোটাও সমস্যা হচ্ছে। সভা সমাবেশও নেই। নিজের বাড়ী রেখে পরেরবাড়ীতে, নিজের সন্তান রেখে অন্যের সন্তানকে লালন পালনে যারা সিদ্ধহন্ত ছিল তাদেরও সমস্যা হচ্ছে। করনা কিছু সমস্যা করে ফেলেছেএসব পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ানো পুরুষ মহিলাদের। তবে যাদের আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন তাদের সুগরীব আর মাগরীব সবই সমান।তারা কিন্তু করনা কেন অন্য বড় কোনো গজব আসলেও মানবেনা। তারা ফেসবুকে ছবি পোষ্ট দিবেই এতে কোনো সন্দেহ নেই।
(দুই)
জুমআ’র নামায এভাবে মিস করা ঠিক নয়। আমি গতকাল রাতে অনেক চিন্তা করেছি। ইমাম সাহেবরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।মসজিদ তো বন্ধ। শুধু ইমাম সাহেবদের জন্য প্রতি শুক্রবার মসজিদ খুলে দিতে পারেন। খতিব আব্দুল কাইযুম সাহেব লন্ডন মুসলিমসেন্টার থেকে, পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন মসজিদ থেকে নজরুল ইসলাম সাহেব, পূর্ব লন্ডনের বেথনালগ্রীনের বায়তুল আমান মসজিদথেকে মওলানা আব্দুল মালিক সাহেব সরাসরি খুতবা এবং জুমআ’র নামায পড়ালেন, মুসল্লীরা বাসা থেকে লাইভে ইমাম সাহেবদেরসাথে জয়েন করলেন। লাইভ তো এখন ফেসবুকে হয়। অথবা যে সমস্ত বাংলা টেলিভিশন রয়েছে তারাও লাইভ জুমআ’র নামাযেরব্যবস্থা করতে পারেন। এই করনার লাইভ না করে দেখুন এটা করা যায় কি–না? এই করনার লাইভ করে কি লাভ হয়? বিষয়টি ভেবেদেখার অনুরোধ রইলো। আর যদি সরকার অথবা লকেল কাউন্সিল মসজিদ খোলার অনুমতি না দেয় তাহলে ইমাম সাহেবরা বাসাথেকেও লাইভ করতে পারেন। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এ বিষয়টি কাজে আসবে। যতদিন পর্যন্ত মসজিদ না খুলে ততদিন এভাবেইচলুক। আমরা তো হাত পা গুটিয়ে বাড়ীতে বসে আছি। করনার ভয়ে নামায রোজা ছেড়ে দিলে তো চলবেনা। যেহেতু টেকনোলজিররেভুলেশন হয়েছে গোটা পৃথিবীতে সেহেতু আমরা সেটির সুবিধা নিতে পারি। শুধু লন্ডন নয় বার্মিংহাম, মানচেষ্টার, লিডস, লুটন, ব্রাডফোর্ড, লেস্টার, লাফবরা, কেন্টসহ গোটা পৃথিবীর যে সব জায়গায় মুসলমনরা রয়েছেন সে সব জায়গায় এভাবে জুমআ’র নামাযআদায়ের ব্যবস্থা করা যেতে পাারে। মুসলিম কাউন্সিল অব গ্রেট বৃটেনকেও বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানাই। সাথে সাথে যে সবজানাযা হচ্ছে কবরস্থান থেকেও লাইভ জানাযায় অংশ নেয়া যেতে পারে। টিভি মিডিয়াগুলো ভালো ভুমিকা রাখতে পারে। মসজিদকমিটির যারা সভাপতি সেক্রেটারী রয়েছেন তারা আজই মিটিং করে আগামী সপ্তাহ থেকে জুমআ’র নামায এভাবে লাইভ করতেপারেন। প্লিজ ব্যপারটি জরুরী মনে করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন।
(তিন)
বাংলাদেশে নাকি মসজিদে এখনো জুমআ’র নামায আদায় করছেন মুসল্লিরা। আমার কাছে খুবই অবাক লাগছে ব্যাপারটা। মহামারিদেখা দিলে সব জায়গায়ই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। অবশ্য এখন আর সেই দিন নেই। এখন সব কিছু সমান হয়ে গেছে।আগেকার দিনে আমাদের মুরুব্বীরা বলতেন সন্ধ্যার সময় ঘর থেকে না বেরোনোর জন্য। ভরা দুপুরে বাড়ীর ভেতরে থাকার জন্য। রাতেজীন ভুতরা চলাচল করে ইত্যাদি। গর্ভবতী মহিলাদের বেলায় তো ছিল আরো কড়াকড়ি। তখন কিন্তু সবাই মানতো কথা। এখন তোসবাই ব্যারিষ্টার হয়ে গেছে। কেউ কথা শুনেনা। আমি বাংলাদেশে বড় হয়েছি। তৎকালীন সময়ে কয়টা ছেলে মেয়ে ছিল লেরা লুংড়াআতুর অন্ধ প্রতিবন্ধী? খুবই কম। এখন তো প্রতিবন্ধীর অভাব নেই। কেন এসব হয়েছে? বাংলাদেশে এক মহিলা সন্তান প্রসব করেছিলসিনেমা হলে! পরবর্তীতে দেখা গেল সন্তান প্রতিবন্ধী। আগে তো এত ডাক্তার নার্স ছিলনা। ধাই মহিলারা নার্সের কাজ, মিড ওয়াইফেরকাজ করে ফেলতো। আচ্চা এই মিড ওয়াইফের মানেটা কি? ঐ মিড ওয়াইফদের মাধ্যমে কিন্তু ফুটফুটে বাচ্চাও হতো। আগে অবশ্য পাপকামও কম হতো। এখন তো স্মার্ট ফোনের কারনে হ্যালো আর বলো। আল্লাহ আমাদেরকে এসব থেকে কি মুক্তি দেবেন? কে জানে। তবেবাংলাদেশে অনেকেই বলছেন কিছুই হবেনা। কত যুক্তি যে অর্ধশিক্ষিত মানুষরা দাড় করে। বাংলাদেশে নাকি করনা গরমের চটেপালাবে। সেদিন আমার এক বন্ধু বললেন করনা পালিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নেবে। ইটালী কিন্তু গরমের দেশ। লন্ডনের মত ঠান্ডা না।তাছাড়া গরমের কারনে যদি করনা পালিয়ে যায় তাহলে তো সৌদী আরব থেকে সবার আগেই পালানোর কথা ছিল। এসব ফালতু কথালিখে লাভ নেই। এখন তো শুনছি ইসরাইলেও করনা হানা দিয়েছে। আমি জানিনা কবে করনা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। অনেকেই তোস্বাভাবিক জীবনে খুবই তাড়াতাড়ি ফিরতে চান। তিনি ফিরে শুরু করে দিতে চান তার আগের কুকাম। আমার মনে হয় সেটি আর হবেনা।স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসতে সময় লাগবে। তাছাড়া যে অর্থনৈতীক ধ্বস নেমেছে পুরো পৃথিবী জুড়ে, আমার কাছে মনে হচ্ছে দুর্ভিক্ষ কিলেগে যাবে? আমি জানিনা। এর জন্য কে দায়ী? আমেরিকার মহামান্য রাষ্টপতি বলেছেন এটা নাকি চায়নিজ ফ্লু। চায়না আমদানীকরেছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে অনেকেই এটার সাথে জড়িত। যে বা যারাই এই কুকাম করেছেন তারা কিন্তু ভালো করেননি। মোটমুটিশান্ত পৃথিবীকে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য অশান্ত করে তুলেছেন। কি দরকার ছিল ওসব করার?
(চার)
পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন জামে মসজিদের খতিব মওলানা নজরুল ইসলাম সাহেব করনা থেকে রেহাই পেয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।দীর্ঘদিন নজরুল ইসলাম সাহেব চ্যানেল আই ইউরোপের ‘আই ফর ইসলাম’ অনুষ্টানটিতে শুক্রবারে অতিথি হয়ে আসতেন ।অনুষ্টানটির উপস্থাপক ছিলেন মওলানা আব্দুল কুদ্দুস সাহেব। স্মার্ট লম্বা এবং সুটাম দেহের অধিকারী মওলানা সাহেবকে যখন করনাধরে ফেলেছিল আমি ফেইসবুকে বন্ধুবর ডঃ আনিসুর রহমান আনিসের ষ্টেটাস দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম। কারন এই হুজুরকে তোধরার কথা না। হুজুররা হচ্ছেন আল্লার খাস বান্দা। করনা ধরবে তো যারা পাপ করে তাদেরকে। যারা দুর্নীতি করে তাদেরকে, কে একজনফেইসবুকে প্লেকার্ড বহন করছে, সেখানে লেখা – করনা রোগীরা দুর্নীতিবাজদেরকে দেখলে জড়িয়ে ধরুন। ওসব করে কোনো লাভ নেই।করনা থাকলেও দুর্নীতি করবে না থাকলেও দুর্নীতি করবে, দেখছেননা বাংলাদেশে রিলিফের চাল বাড়ীতে ঢুকিয়ে রেখেছে। চুর না শোনেধর্মের কাহিনী। এটা কি এমনিতেই বলা হয়েছে? আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে করনা কাউকেই বোধহয় ক্ষমা করেনা। সুযোগ পেলেইসে ঢুকে পড়ে। আল্লাহ আমদের সবাইকে হেফাযত করুন। সবাই একথাটি সহজেই বলে। কিন্তু আল্লাহ যে হেফাযত করবেন আমরা কিআল্লার কাজ করছি? আমরা তো আল্লাহ চিনার আগে শুরু করি কার্ল মার্কস, লেনিন, ফিদেল কাস্ট্র, মাও সেতুং, চারু মজুমদার, গরুছাগল চিনা। নামায পড়ার কথা বললে বলে বেটা মুসল্লী হয়ে গেছে। আমি নিজেও পড়িনি। বাবা তো সব সময় বলতেন নামাজ পড়, নামাজ পড়। মাকে বলতেন যে নামায পড়বেনা তাকে ভাত দিবানা। আমার এক বন্ধুর স্ত্রী বলেছিল তার স্বামী বিয়ের পর চায় সে হিজাবপরুক। আমি বলেছিলাম তো তুমি কি করলে? বলে না আমি হিজাব পরবো কেন? আমি বলেছিলাম তাহলে তুমি সব কিছু দেখিয়েনাচতে থাকবে, পাচা দেখিয়ে। ফাযিলের ফাযিল। করনা আসার পর এখন আর কাউকে বলতে হয়না কে কি পরবে। এখন মাস্ক হিজাবকোনো কিছুই বাকী রাখে না। এখন শুধু জিকির। ঐ যে বলে ‘নয়া নয়া ফকির ঘন ঘন জিকির’। নতুন ফকির হলে দেখা যেত আল্লাহআল্লাহ বলতো, আলহামদুলিল্লাহ পড়ে দুরুদ পাঠ করে তারপর ভিক্ষা চাইতো। পুরোনো হলে আর জিকির ঠিকির কোনো কিছু না বলেইসরাসরি ভিক্ষা চাইতো। এখন অনেকের হয়েছে সেই অবস্থা। এখন হয়েছে ইয়া নফসী ইয়া নফসী। আসলে আমরা কেউই কারো কবরেশুইবোনা। যে যার কবরে শুয়ে থাকবে।সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রবিন্দ্রসংগীত, কবিতা, কালচার এগ্রিকালচার, রাজাকার আলবদর, হাসিনা ,খালেদা, জয়, তারেক জিয়া, নারীবাদী, পুরুষবাদী, আস্তিক, নাস্তিক, গে, লেজবিয়ান কোনো কিছুই কাজে আসবেনা। শুধু কাজকরবে ঈমান আর আমল।
শেষ কথা:
মাননীয় ইমাম সাহেবরা আপনারা বিষয়টি সদয় বিবেচনা করেন প্লিজ। আমার কাছে মনে হচ্ছে করনার কারনে আপনারাও হলিডে নিয়েফেলছেন। সামনে রমজানও আসছে। এই রমজানে তারাবীর নামাজও লাইভ পড়াতে হবে। বৃটেনে আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছেআগামী মাস পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। কারন পূর্ব লন্ডনের এক্সেলে করনা রোগীদের জন্য নতুন করে নাইটিংগেল হাসপাতাল গতকালউদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশে সবে মাত্র হাসপাতাল খোলা হচ্ছে। যদিও গরু ছাগলরা আমাদের প্রবাসীদের উপর দোষ চাপানোরঅপচেষ্টা করছে। তাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই গোটা পৃথিবীতে করনা ভাইরসা দেখা দিয়েছে, কোনো দেশই তার প্রবাসীদের উপর এই দোষচাপানোর চেষ্টা করছে না। আওয়ামীলীগ ব্যস্ত ছিল মুজিব বর্ষ নিয়ে। ৪০০ কোটি টাকার লুটপাঠ চলছিল এই মুজিব বর্ষ নিয়ে। এই ৪০০কোটি টাকা কোথা থেকে আসলো? উহান শহর থেকে যে ৩১২ জন প্রথম ফ্লাইটে ঢাকা এসেছিল তারা করনা জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশে। যেসব চায়নীজরা বাংলাদেশে কাজ করে দেখুন তারা জন্ম দিয়েছে কি না? আমাকে বলানোর বা লিখানোর চেষ্টা কইরেননা প্লিজ। তথ্যমন্ত্রীহাসান মাহমুদ সাহেবকে বলুন কথা কম বলতে। বাংলাদেশের পুলিশ আওয়ামীলীগ জনগন যারা প্রবাসীদেরকে নিয়ে বাজে কথা বলেসবাইকে বলে দিতে চাই খবরদার প্রবাসীদের নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেননা। বললে খবর আছে। জিহবা———।
৪ এপ্রিল ২০২০ ইংরেজী শনিবার, লন্ডন
লেখক:
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি বাংলা স্টেটমেন্ট ডট কম
সাবেক সভাপতি ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ
ইমেইল: rafcbanglastatement@yahoo.com