
▪️খালেদ রাজ্জাক▪️
গোটা পৃথিবী আক্রান্ত, গোটা পৃথিবী মানুষ বাঁচানোর অদম্য সংকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবু পৃথিবীতে এপর্যন্ত ৫০ হাজারের উপর মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছে। চীন যখন পরিস্থিতি সামলে উঠেছে তখন বাকি বিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবং আক্রান্ত মানুষ বাঁচাতে প্রাণ পর্যন্ত বাজি রাখছে। ইংল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা স্বেচ্ছায় আবার কাজে যোগ দিয়েছেন বিপদ পরোয়া না করেই, তাদের সরকার স্বেচ্ছাসেবী চেয়েছিল আড়াই লাখ, এগিয়ে এসেছে পাঁচ লাখ যুবক-যুবতী। জনজীবন যখন বিপন্ন হয় তখনই মানবতা দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়, মানবতা দেখাতে হয়। মানুষ নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যের জীবনরক্ষায় এগিয়ে যায় বলেই সে সৃষ্টির সেরা জীব।
গোটা বিশ্বের মতো বাঙলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। কী পরিমাণ মানুষ এপর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে কেউ জানে না। দেশের সচেতন ব্যক্তিমাত্রই আতঙ্কিত। কারণ, সরকারের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ মানুষ। ফলে দেশকে এগিয়ে দিচ্ছে একটি অকল্পনীয় বিপর্যয়ের দিকে। দিকে দিকে গণসংক্রমণ শুরু হয়ে গেলে কী করবো আমরা? আমাদের তো সামর্থ্যই নেই, যেটুকু আছে তার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল।
এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন যন্ত্রণা। দলবেঁধে বিভিন্ন যায়গায় হাসপাতালে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে! কেন? কারণ, লোকজন তাদের পাড়ায় বা এলাকায় করোনার চিকিৎসা করতে দেবে না! আকিজ গ্রুপ অতি দ্রুত করোনা-আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানের জন্য একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিলো, সাথে সাথে গুণ্ডাপাণ্ডা সবাই তেড়ে এলো, তারা হাসপাতাল করতে দেবে না! কী বিস্ময়কর লীলা! আরেকদল গোরস্থানে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিলো— এখানে করোনায় মৃত কারো কবর দিতে দেয়া হবে না! এর চেয়ে বিস্ময়কর, এর চেয়ে লজ্জার কিছু কি আছে? আমরা কী করে এতোটা অমানুষ হয়ে গেলাম রাতারাতি!
যখন মানুষের কাঁধে প্রকৃতি দায় চাপিয়ে দেয় তখন সে দায় গ্রহণ করতে হয়, দায় শোধ করতে হয়। মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছে নিজেদের, এ বিপর্যয়ের সময় যদি বাঙালি নিজেদের দায় ভুলে অবিমৃষ্যকারী আচরণ করে তাহলে তা হবে ‘মানুষ’ হিশেবে আমাদের লজ্জা।