ইউকে রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

খামারবাড়ি


ফায়সাল আইয়ূব: অনেকে আমার খামারবাড়ির নাম দিয়েছে রহস্য মহল। তাদের ধারণা, এ বাড়িতে যারা ঢোকেন তাদের একটি অংশকে আর বেরোতে দেখা যায় না। কিন্তু উঁচুস্বরে তারা কেউ মুখ খুলে না।তবে, এ ধারণা যে একেবারে অমূলক আমি তা বলতে পারি না। কারণ, কেউ না-জানুক আমিতো জানি আমার খামারবাড়িতে আমি কী করি, কেনো করি, কাকে ধরি, কীসের চাষ হয়। আত্মঘাতী হতে চাই না বলে এ রহস্য উন্মোচন করি না কোনোদিন।

একবার আমার এ বাড়ি নিয়ে আট কলামের একটি রঙিন রিপৌর্ট হয়েছিল একটি জাতীয় খবরের কাগজে। রহস্য মহল নামটি মূলত সেদিন থেকেই ধীরেধীরে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে; সুখ্যাতি কুখ্যাতি পায়। কিছুটা সত্যাশ্রিত হলেও রিপোর্টের বেশিরভাগই ছিল অনুমাননির্ভর। আর অনুমাননির্ভর যেকোনো বিষয় আমাকে খুব পীড়া দেয়; আমার রক্ত উজানে বয়।

আমি রিপৌর্টারের সাথে যোগাযোগ করি আমার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো একটি নতুন মোবাইল ফোনে আমরা একটি নতুন সিম ব্যবহার করি। দৈনিক পত্রিকায় রিপৌর্টের পর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমার সহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। যথারীতি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকদেরকে আমার সহকারি আলাদা আলাদা সিম নাম্বার দিয়ে দেয়।

ওই রিপৌর্ট আমার দৈনন্দিন কাজে কয়েকদিন খুদে বাধার সৃষ্টি করে। টেলিমিডিয়ার দুজন রিপৌর্টারও আমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সব কারণে কাগজের রিপৌর্টারকে একদিন আমার খামারবাড়িতে সাদর আমন্ত্রণ করি। তিনি আমার ঘরে বসতে না বসতেই তার কালো ব্যাগ থেকে বড়ো লেন্সের একটি কালো ক্যামেরা ও একটি শাদা নৌটবুক টি-টেবিলে রাখেন।অবশ্য, রিপৌর্টারের সাথে আমার বাড়ির রিপৌর্ট নিয়ে কোনো কথা হয়নি। নৌটবুক হাতে নিয়ে যদিও তিনি কয়েকদফা কথা তোলার চেষ্টা করেন। তবে সে দিকে যেতে পারেন নি; মূলত আমি দিই নি।

বাইশ একর বাড়ির ঠিক মধ্যিখানে দুই একরের পুকুর; অনেক দীঘির চেয়ে বড় হলেও একে আমি পুকুরই বলি। কারণ, আমার একটি দীঘি করার ইচ্ছে আছে এর চেয়ে কয়েক গুণ বড় করে। এজন্য রাজধানীর উপকণ্ঠে ইতোমধ্যে ৫০ একর জমি না-কিনেও আমার হয়ে গেছে।

পুকুরের পাঁচিলে বসে আমরা খোশগল্প করছি। কথায় কথায় রিপৌর্টার আমাকে জানালেন আজ তার চল্লিশতম জন্মদিন। এ জন্যে আমার খারাপ লাগলো এবং তার জন্যে কিছুটা মায়া হলো। মনে পড়ে গেলো ইউরোপীয় কনসেপ্ট লাইফ বিগিন্স এ্যাট ফৌরটির বিষয়টি।
উঁচু পাঁচিল থেকে পুকুরে ধাক্কা দেওয়ার আগে আমার মনে হলো পৃথিবীর খুব কম লোকেরই জন্মদিনে মৃত্যু হয়। রিপৌর্টার সেই সৌভাগ্যবানদের একজন হয়ে গেলেন আজ।

মানুষভক্ষক আমার কুমিরগুলোকে সান্ত্বনা দিই; বলি, দুই একদিন সবুর করো! এবার পুলিশ আসবে, আসবে গোয়েন্দা; তোমাদের খাবারের অভাব হবে না আর। কুমিরের পেটে রিপৌর্টারের মোবাইল সিগনাল পাবে কিনা সহকারীকে জিজ্ঞেস করি। সে আমার দিকে তাকায়। কিছুই বলে না।

পুকুরে কুমিরগুলোর সাময়িক আনন্দের ছলাৎ ছলাৎ শুনতে শুনতে আমরা ঘরমুখী হই। সহকারী আমাকে বলে, স্যার, একটু আগে একটি ইমেইল পেয়েছি অস্ট্রিয়া থেকে। তারা আমাদের এগারো বছর বয়সী দুটি কুমির কিনতে চায়। ওয়েব ফটোস ও ডিটেইলস তাদের আকৃষ্ট করেছে। আমি বলি, সুখবর। এপোইন্টমেন্ট ফিক্সড করে ইমেইল রিপ্লাই করো!

অক্টোবর ২২, ২০১৯ ।। প্যারিস, ফ্রান্স ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব। ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ‘মুক্তমত’ বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় ‘ইউকে বাংলা অনলাইন ডট কম’ এর নয়। - সম্পাদক

সর্বশেষ সংবাদ