
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ ( সদর) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে এরশাদের প্রতিবন্ধী সন্তান এরিক এরশাদকে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নেতাদের তোপের মুখে পড়েছে এস এম ইয়াসির। তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টিরও সাধারণ সম্পাদক।
এ ব্যাপারে ইয়াসির বলেন, ‘আমি বহু দিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছি। গত নির্বাচনে স্যার (এরশাদ) অসুস্থ থাকায় তার হয়ে আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। যে পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে রংপুর সদর উপজেলা গঠিত, সেসব ইউনিয়নে আমার সমর্থন রয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩২ জন কাউন্সিলরের সমর্থনও রয়েছে আমার পক্ষে।’
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। সেখানে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তার বড় ছেলে রাহগীর আল মাহী সাদ। এর আগে এরশাদের বোন মেরিনা রহমানের মেয়ে ও দলের নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রী মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পা মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
এছাড়া এরশাদ বেঁচে থাকতে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া সাবেক সাংসদ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফও প্রার্থী হতে চান বলে শোনা যাচ্ছে। এজন্য আসিফ দলের সদস্যপদ ফিরিয়ে নিতে তোড়জোড় করছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
সব মিলিয়ে এ আসনের উপনির্বাচনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে এ পর্যন্ত চার জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন। আরও কয়েকজন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তার জন্য বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম জমার শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তবে সব সমীকরণ উল্টে যেতে পারে যদি এরশাদ ও রওশন দম্পতির একমাত্র সন্তান সাদকে যদি দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তার মা দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ চাইছেন, নিজের ছেলেকে রাজনীতির ময়দানে নিয়ে আসতে।
এরশাদের জীবদ্দশায় সেভাবে সামনে না এলেও এখন মায়ের সব অনুষ্ঠানেই সাদকে পাশে দেখা যাচ্ছে। সাদ এরশাদের মনোনয়নের বিষয়টি নিয়ে জাপার ভেতরে জোর আলোচনা চললেও মুখ খুলতে নারাজ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বলা ঠিক না।
রংপুর-৩ আসনে এরশাদ প্রার্থী হওয়ায় আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। তবে এবার প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায়, এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও প্রার্থী দেওয়ার বিপাকে পড়তে পারে জাপা।
তবে রংপুরকে জাতীয় পার্টির ‘শক্ত ঘাঁটি’ দাবি করে ইয়াসির বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও সুবিধা করতে পারবে না। ভোটের মাঠে কোনো গণ্ডগোল না হলে রংপুরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির পার্থক্য আরও বড় হয়ে দেখা দেবে।
১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সিদ্দিক হোসেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জয় পান বিএনপির রেজাউল হক সরকার রানা। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল গণি স্বপন জেতার পর থেকে এই আসনটি আর কখনো হাতছাড়া হয়নি তাদের।
১৯৮৮ সালে মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০১ সালে জি এম কাদের, ২০০৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০৯-এ (উপনির্বাচন) রওশন এরশাদ, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই আসনে নির্বাচিত হন।
রংপুর-৩ আসনে আগামী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ সেপ্টেম্বর।
একাদশ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ ৯০ বছর বয়সে ১৪ জুলাই মারা যান। তার মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ১-৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন। এই আসনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৩০টি, ভোটকক্ষ ৯১০টি।
রংপুর-৩ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে বলে ইতোমধ্যে ইসি জানিয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে আওয়ামী লীগ। ফলে রংপুরের আসনে তাদের প্রার্থী না থাকলেও উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা করছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তোলা বিএনপি এরইমধ্যে এই উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।