
ফরীদ আহমদ রেজা: ধনবাদী ব্যবস্থা এক অর্থে লুটেরা শাসন। যত পারো এবং যেভাবে পারো লুটেপুটে খাও, যত পারো ভোগ করো। শুধু প্রতিষ্ঠিত আইন প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করলে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। এর সাথে শিক্ষা ও আইনের শাসন থাকলে পুঁজিবাদী সমাজও সহনশীল পর্যায়ে চলতে পারে। কিন্তু ধনবাদী ব্যবস্থায় আইনের শাসন ও শিক্ষা না থাকলে সে সমাজে বসবাস কঠিন হয়ে পড়ে। হত্যা, লুন্ঠন, সন্ত্রাস এবং ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়তে থাকে। ধ্বংসাত্মক সে গতি প্রতিরোধ করতে হলে বুদ্ধিজীবী, রাষ্ট্র এবং সমাজকে একযোগে কাজ করতে হয়। তবে ইতিহাস সাক্ষী, সমাজের শিক্ষিত তরুণরা-ই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তারা মনে হচ্ছে কোথায় যেন আটকে আছেন। একনায়কতন্ত্রী বা গণতন্ত্রী সরকারে যিনি সরকার প্রধান থাকেন এবং যারা দেশ পরিচালনা করেন তিনি বা তাঁরা অন্তত এটা বুঝেন, দেশে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা হলে সেটা তিনি বা তাঁদের জন্যে কল্যাণকর নয়। সামরিক সরকারের সময় বাংলাদেশের, আর যা-ই হোক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক উন্নত ছিল। তদানীন্তন সরকারগুলো অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা রোধে দৃশ্যমান পর্যায়ে তৎপর ছিল।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাজারো দোষ থাকলেও তিনি বোকা, এ কথা তাঁর প্রবল শত্রুও বলবে না। তিনি বুদ্ধিমতী এবং কর্মঠ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর সরকারের সময় ধর্ষণ, লুন্ঠন , অরাজকতা, বিচারহীনতা ও প্রহসনের নির্বাচনের জন্যে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, এটা বুঝার ক্ষমতা অবশ্যই তাঁর আছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যে না হয় তিনি প্রহসনের নির্বাচন করলেন। কিন্তু ধর্ষক, লুটেরা, খুনী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণে তাঁর বাঁধা কোথায়? না কি তিনি কোনো গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে আছেন? সরকার প্রধানের কাজ শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া নয়। তাঁকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে এবং দৃশ্যমান হতে হবে যে তিনি এ ব্যাপারে আন্তরিক। তা না হলে সকল অন্যায় ও অপরাধের দায় তাঁর শাসনের কপালে কলঙ্ক-তিলক হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বৃটেন-আমেরিকার সরকার প্রধানরা যা-ই করুন না কেনো, এসব দেশের বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক হিসেবে যে কোনো অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা মনে হচ্ছে ভীরু-কাপুরুষ অথবা কারো কেনা গোলামে পরিণত হয়েছেন। ধর্ষণ ও লুন্ঠন যখন দেশজুড়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলছে তখনো তারা বোবা-শয়তানের ভূমিকা পালন করছেন। অনেকে লেখালেখি করেন, কিন্তু তাদের বন্দুকের নল থাকে লক্ষ্যহীন, ফাঁকা মাঠের দিকে। আমার ভাবতে অবাক লাগে, এটা তো সেই বাংলাদেশ যেখানে মাওলানা আকরাম খাঁ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নির্মল সেন জন্ম নিয়েছেন। তাদের উত্তরাধিকার ধারণকারী সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী কি বাংলাদেশে আর জন্মায়নি?
দেশে যে কোন পরিবর্তনের সর্বশেষ দায় কিন্তু জনগণের এবং শিক্ষিত তরুণদের। কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন রাষ্ট্রের মেরামত কর্মকাণ্ডের জন্যে বাংলাদেশে মাইল ফলক হয়ে আছে। তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে রাষ্ট্রের মেরামতের জন্যে জনগণকে সাথে নিয়ে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে এর কোনো বিকল্প নেই।
লন্ডন, ৯ জুলাই ২০১৯