
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :হিন্দুত্ববাদী বিজেপির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার সম্প্রতি শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলিমকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলছে, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের অনেকে ভারতের নাগরিক এবং সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা।
গতকাল (২৩ জুলাই) নিউইয়র্কভিত্তিক এইচআরডব্লিউ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, চলতি বছরের মে মাস থেকে বিজেপি সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অজুহাতে এই বিতাড়ন অভিযান জোরদার করেছে। তবে এ ধরনের বেআইনি ও জবরদস্তিমূলক বিতাড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত এবং সবার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, “বিজেপি ভারতীয়সহ জাতিগত বাঙালি মুসলিমদের নির্বিচারে দেশ থেকে তাড়িয়ে বৈষম্যমূলক মনোভাব উসকে দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও নিজ দেশের আইনি কাঠামো উপেক্ষারই প্রমাণ।”
সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুনে ৯টি মামলার অন্তত ১৮ জন ভুক্তভোগী ও পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই ভারতে নাগরিক হয়েও বাংলাদেশে পাঠানো হন। কেউ কেউ নিখোঁজ, কেউবা ফিরে আসলেও রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) জানিয়েছে, ৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে ১,৫০০ জনের বেশি নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন।
আসামের সাবেক স্কুলশিক্ষক খায়রুল ইসলাম (৫১) জানান, ২৬ মে বিএসএফ সদস্যরা তাঁকে হাত বেঁধে ও মুখে কাপড় গুঁজে ১৪ জনের সঙ্গে সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, “আমি রাজি না হওয়ায় মারধর করা হয়, এমনকি চারবার ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।”
আসাম, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্রসহ বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষী মুসলিমদের আটক করে সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই না করেই হুমকি, মারধর করে সীমান্ত পার করানো হচ্ছে। পরবর্তীতে কেউ কেউ ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ হওয়ায় ফেরত নিতে বাধ্য হচ্ছে ভারত সরকার।
এইচআরডব্লিউ বলছে, ভারতের এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি ও নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই ধরনের বিতাড়নের আগে যথাযথ তদন্ত, আইনজীবী সহায়তা ও আপিলের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষত নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
৮ মে বাংলাদেশ সরকার এক চিঠিতে এই পুশইনকে “অগ্রহণযোগ্য” উল্লেখ করে জানায়, বাংলাদেশ কেবল যাচাইকৃত নাগরিকদের গ্রহণ করবে এবং তা কূটনৈতিক চ্যানেল অনুসরণে হতে হবে।
মে মাসে আসামের একটি আটককেন্দ্র থেকে প্রায় ১০০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ওএইচসিএইচআর) জানায়, আরও ৪০ রোহিঙ্গাকে সাগরপথে মিয়ানমার সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁদের সাঁতরে উপকূলে যেতে বাধ্য করা হয়, যা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মে মাসে রাজ্যগুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে ‘অবৈধ অভিবাসী’ শনাক্ত ও বহিষ্কারের নির্দেশ দেয় এবং প্রতিটি জেলায় আটককেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশনা দেয়। এর পরপরই বাংলাভাষী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় শুরু হয়।
এইচআরডব্লিউ বলছে, জাতি, ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী। সংস্থাটি নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচার দাবি করেছে।
ইলেইন পিয়ারসন বলেন, “এই পদক্ষেপ ভারতের ঐতিহাসিক আশ্রয়দান সংস্কৃতিকে কলঙ্কিত করছে। মুসলিমদের লক্ষ্য করে যেভাবে বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক।”
বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ