
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রকৃত অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর আইনি পদক্ষেপ দেখতে চায় বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, যে অন্যায়-অপকর্ম করে, সে মূলত অপরাধী। সে দলের নেতাকর্মী হোক বা অন্য কেউ। দলের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, তাতে কিছু যায়-আসে না। অন্যায়-অপকর্মকারীর বিচার হতে হবে আইনের ভিত্তিতে। কেউ অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে বিএনপির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে অপরাধীদের ধরতে সরকারের ‘চিরুনি অভিযান’ শুরুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে দলটি। তবে এ অভিযান যেন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিংবা বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে না হয়, ‘প্রকৃত’ অপরাধীরা যেন ধরা পড়ে, সেটা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী তথা অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কেউ অন্যায় করলে দল তাকে কোনোরকম প্রশ্রয় দিচ্ছে না। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত দল এবং বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৪-৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের ইমেজ যাতে কেউ নষ্ট বা ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সেজন্য সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় শুরু থেকেই এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের মন জয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে দলটি। কিন্তু তারপরও নানা ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। দলটি আরও মনে করছে, মেয়াদের ১১ মাসেও সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি ঘটাতে পারেনি। পুলিশ প্রশাসন এখনো বিভিন্ন জায়গায় নির্বিকার। বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হলেও, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানো হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ড, চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত করা, খুলনায় যুবদলের সাবেক এক নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করাসহ বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে শক্ত অবস্থানে দেখতে চায়। দলটি চায়, যে বা যারা প্রকৃত অপরাধী বা অপকর্মকারী অর্থাৎ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ইস্যু ঘিরে কিছু দল এবং গোষ্ঠীর বিএনপিকে চাপে ফেলার প্রবণতা চলছে বলে মনে করছে বিএনপি। বিশেষ করে মিটফোর্ডে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে বিএনপিকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে। এটাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, শুরু থেকেই যে কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত সোচ্চার। কিন্তু বিএনপিকে ঘায়েল করা, বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করা, সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করা অথবা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে তারা এসব ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে।
দেখা গেছে, মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ডের পর ওই ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল-মিটিং করছে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আরেকটি ৫ আগস্ট ঘটনার হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, যারা দেশে গণতন্ত্র চায় না, অন্য কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, তারাই এসব কথা বলছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা সজাগ এবং সতর্ক রয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিভেদ তৈরি হোক কিংবা মিত্রদের মধ্যে কোনো সংঘাতের সৃষ্টি হোক, সর্বোপরি গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য বিনষ্ট হোক—তারা তা চান না। বিএনপি মনে করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়া এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ সহজ করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে আছেন, আগেও ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য এরই মধ্যে তারা বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সেইসঙ্গে প্রশাসনকেও আহ্বান জানিয়েছেন, যে কেউ অন্যায়-অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তবে যে কোনো ঘটনা ঘটলেই সেটা নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, অপরাজনীতি করা হচ্ছে, তা থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
সরকারের ‘চিরুনি অভিযান’ প্রসঙ্গে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, রাজনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা যেন পরিচালিত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা চাইব, কোনো রাজনৈতিক দলকে দমনপীড়নের উদ্দেশ্যে না হয়ে সুষ্ঠুভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ অভিযান পরিচালিত হবে। বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিযান পরিচালিত হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কালবেলাকে বলেন, অপরাধীদের ধরতে সরকারের এ চিরুনি অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই। সেক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ে এবং কোনো মানুষ বিনা অপরাধে বা শুধু সন্দেহের কারণে অথবা প্রকৃত অভিযোগবিহীন কেউ কোথাও যেন কোনোরকম হেনস্তার শিকার না হয়। যেহেতু এখন কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় নেই, এ সরকার সবার সমর্থিত; সুতরাং সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেন সেভাবেই আচরণটা করেন।