
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :বাংলাদেশে নারী ও পুরুষের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) প্রকাশিত ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি (এসডব্লিউওপি) ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর, সেখানে বাংলাদেশে তা ৭৪ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় ৭৬ হলেও বাংলাদেশে নারীর গড় আয়ু এখন ৭৭ বছর।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ঢাকার গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে এক অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। এর অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ (প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ) মানুষ কর্মক্ষম (১৫–৬৪ বছর বয়সী)। কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ। আর ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি, যা ২৮ শতাংশ।
এই বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বাংলাদেশকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাগত সুবিধা কাজে লাগানোর সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশের ৭ শতাংশ বা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, যা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। ভবিষ্যতে শ্রমশক্তি সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি এই শ্রেণির জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, “আসল সংকট জন্মহার নয়, সংকটটি হলো প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে ব্যক্তি, বিশেষ করে নারী ও তরুণদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অভাব।”
তার মতে, দেশে মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ২.১ হলেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, স্বাস্থ্যসেবার খরচ, সামাজিক বাধা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে অনেকেই ইচ্ছামতো সন্তান নিতে পারছেন না। পাশাপাশি অল্প বয়সে বিয়ে ও মাতৃত্বের চাপ, অবৈতনিক গৃহস্থালি শ্রম এবং জলবায়ু সংকট নারীদের প্রজনন সিদ্ধান্তে বাধা সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেদনে সংকট উত্তরণের জন্য স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাতৃস্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনার সুবিধা বাড়ানো এবং দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া সমন্বিত যৌনশিক্ষা, সাশ্রয়ী আবাসন, মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীর অবৈতনিক কাজের স্বীকৃতি প্রদানকে নীতিগত পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইউএনএফপিএর ডেমোগ্রাফিক ডেটা অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, “৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার এখন ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমশক্তির ঘাটতি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চাপ বাড়বে।”