ইউকে শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

ইরানের পাঁচশ মিসাইলের মধ্যে ২০০টি ঠেকিয়ে ইসরায়েলের খরচ গেল কত?ইরানের পাঁচশ মিসাইলের মধ্যে ২০০টি ঠেকিয়ে ইসরায়েলের খরচ গেল কত?

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :সম্প্রতি ১২ দিনের সংঘাতে ইরান ইসরায়েলের দিকে পাঁচ শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, এর মধ্যে বেশির ভাগই খোলা জায়গায় আঘাত হানে। বাকি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে প্রায় ২০০টি ইন্টারসেপ্টর (ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) ব্যবহার করে প্রতিহত করে।

আইডিএফ ও ওপেন-সোর্স বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৫০০ কোটি শেকেল, যা প্রায় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ আইডিএফের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ইরান ৪২ দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় মোট ৫৩০টির মতো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
ইরানের পাঁচশ মিসাইলের মধ্যে ২০০টি ঠেকিয়ে ইসরায়েলের খরচ গেল কত?

আইডিএফ জানিয়েছে, ১২ দিনে ইরানের ছোড়া ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানে। তাদের দাবি, ইসরায়েলি ও মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ৮৬ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিহত করা গেছে।

সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ৩৩টি হামলার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানায়, ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্রে শতশত কিলোগ্রাম ওজনের ওয়ারহেড ছিল। এর মধ্যে তেল আবিব-জাফায় পাঁচটি, হাইফায় চারটি, হার্জলিয়া/রামাত হাশারনে চারটি, রামাত গানে তিনটি, বের শেভায় তিনটি, পেতাহ টিকভায় দুটি, রেহোভতে দুটি এবং বাত ইয়াম, হলোন, তামরা, রিশন লেজিয়ন, নেস জিওনা, বেনি ব্রাক ও জাভদিয়েল এলাকাতেও একটি করে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।

তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রে ক্লাস্টার ওয়ারহেড ছিল, যেগুলোর প্রতিটিতে কয়েকটি ছোট বোম্বলেটও যুক্ত ছিল। এই বোম্বলেটগুলোর ওজন ছিল সর্বোচ্চ সাত কিলোগ্রাম। একটি ক্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র বের শেভায়, একটি রিশন লেজিয়নে এবং তৃতীয়টি হলোন, আজোর, স্যাভিয়ন, বাত ইয়াম ও ওর ইয়েহুদা এলাকাজুড়ে আঘাত হানে।

মার্কিন স্যাটেলাইট গবেষক কোরি শের ও জ্যামন ভ্যান ডেন হোয়েক আগে আরও ১০টি অপ্রকাশিত হামলার স্থান শনাক্ত করেছেন। আইডিএফ সূত্র হারেৎজকে নিশ্চিত করেছে, তাদের শনাক্ত করা অন্তত একটি স্থানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সত্যি সত্যি আঘাত হেনেছে।
ইরানের পাঁচশ মিসাইলের মধ্যে ২০০টি ঠেকিয়ে ইসরায়েলের খরচ গেল কত?

আইডিএফ বলছে, ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হেনেছে এবং ৮৬ শতাংশ সফল ইন্টারসেপশন করা হয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রায় ২৫৮টি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করে এবং সফলভাবে ২২২টি প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। অন্য ২৭২টি ক্ষেপণাস্ত্র খোলা এলাকায় পড়তে দেওয়া হয়, যেগুলো প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়নি। তবে এ সংখ্যা আনুমানিক, কারণ আইডিএফ তাদের ইন্টারসেপশন কৌশল ও প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

ইসরায়েলের অ্যারো-৩ ও অ্যারো-২ সিস্টেম এবং যুক্তরাষ্ট্রের থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়। গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলে মোতায়েন মার্কিন থাড ব্যাটারি এর আগে ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করলেও এবারই প্রথম ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র থামায়।

এই সিস্টেমে ছিল ৬টি লঞ্চার ও একটি বিশেষ রাডার। হামলার আগে ও হামলা চলাকালে মার্কিন কার্গো প্লেনে করে আরও কিছু থাড ইন্টারসেপ্টর ইসরায়েলে পাঠানো হয়।

জর্ডানের আম্মানে বসবাসকারী ফটোগ্রাফার জাইদ আল-আব্বাদি পশ্চিমের আকাশ লক্ষ্য করে ইরান থেকে ইসরায়েলে ছোড়া আটটি সালভো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দৃশ্য ধারণ করেন। এই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র মোট ৮৪টি ইন্টারসেপ্টর ছুড়েছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে। এই হামলাগুলোর ভিত্তিতে গবেষকরা জানান, ইসরায়েল ৩৪টি অ্যারো-৩ ও ৯টি অ্যারো-২ এবং যুক্তরাষ্ট্র ৩৯টি থাড ইন্টারসেপ্টর ছুড়েছে।

আইডিএফ জানিয়েছে, ওই আট দফার সালভো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরান প্রায় ২২৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ওই হিসাবকে ভিত্তি ধরে পুরো ১২ দিনের হামলার জন্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে প্রায় ১৯৫টি ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০টি অ্যারো-৩, ২২টি অ্যারো-২ ও ৯৩টি থাড। তবে এটি একটি আনুমানিক হিসাব। যেসব হামলার দৃশ্য ফুটেজে পাওয়া যায়নি, সেখানে আরও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করা হতে পারে। মার্কিন নৌবাহিনীর এজিস যুদ্ধজাহাজগুলোও ইন্টারসেপশনে অংশ নেয়, তবে তার ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বেশ সফল প্রমাণিত হলেও প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যয় হয়েছে বিপুল অর্থ। প্রতিটি ইন্টারসেপ্টরের (ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) খরচ আনুমানিক ৭৫ লাখ শেকেল, অর্থাৎ ২০ লাখ মার্কিন ডলারের মতো। ফলে ১২ দিনে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের খরচ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি শেকেল বা ১.৫ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি বলছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের সামরিক আগ্রাসনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অফিসিয়াল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আমেরিকান ম্যাগাজিন নিউজউইক শুক্রবার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি শাসনকে সমর্থন জানাতে তার উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি বড় অংশ স্থানান্তর করেছে—যা প্রশ্নবিদ্ধ ফলাফল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত রিজার্ভের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।

লোকহিড মার্টিন অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি দ্বারা নির্মিত ‘থাড’ হলো ইসরায়েলের বহুস্তরযুক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রধান উপাদান। এটি ইরান ও ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণ করা মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য নকশা করা হয়েছে। এই মার্কিন নির্মিত সিস্টেমটি স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে তাদের টার্মিনাল পর্যায়ে—পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে বা বাইরে—লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে সক্ষম।

থাড ‘হিট-টু-কিল’ পদ্ধতি ব্যবহার করে, যার অর্থ এটি বিস্ফোরক ওয়ারহেডের পরিবর্তে কাইনেটিক শক্তির মাধ্যমে আগত হুমকি ধ্বংস করে। এটি সর্বোচ্চ ১৫০ কিমি উচ্চতা এবং ১৫০-২০০ কিমি পরিসরে প্রতিরক্ষা করতে পারে। মার্কিন সেনাদের দ্বারা পরিচালিত এই সিস্টেমে যুক্তরাষ্ট্রের আটটি থাড ব্যাটারি রয়েছে, যেখানে মোট প্রায় ৩৫০-৪০০টি ইন্টারসেপ্টর রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গত ২০ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় অষ্টম ব্যাটারিটি সক্রিয় করা হয়, যা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও প্রতিহত করতে সক্ষম।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ