
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না—তা নিয়ে নতুন করে সংশয় ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও ভোটের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচনমুখী কর্মসূচি শুরু করলেও এখন আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন, নির্বাচন আদৌ হবে কি না। অনেকে বলছেন, ‘নির্বাচন’ শব্দটির পেছনে এখনো লেগে আছে সংশয়, সন্দেহ ও ধোঁয়াশা।
১২ জুন যুক্তরাজ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর যৌথভাবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা আসে। এরপর বিএনপি নেতারা আশাবাদী হয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতিও শুরু করেন।
তবে লন্ডন বৈঠকের তিন সপ্তাহ পরও সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা না দেয়ায় বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মধ্যে ফের সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বর্তমান রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে নির্বাচন পদ্ধতি। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা সরাসরি ভোট (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট) ব্যবস্থার পক্ষে থাকলেও জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি এবং কিছু বামপন্থি দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির দাবি তুলেছে।
এই পদ্ধতির পক্ষে দলগুলোর যুক্তি হলো—সব ভোটের সমান মূল্য থাকবে এবং সংসদে সকল রাজনৈতিক শক্তির ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। তবে বিএনপির মতে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা এখনই সম্ভব নয় এবং এতে গণপ্রতিনিধিত্ব দুর্বল হতে পারে।
বিএনপি মনে করে, সরকারের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা সিদ্ধান্তহীনতা আছে। পরিস্থিতির ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তিকর বার্তা তাদের সন্দেহকে বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা গড়ে না ওঠায় এবং সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট রাজনৈতিক রোডম্যাপ না থাকায় সাধারণ মানুষও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থাহীনতায় ভুগছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির প্রস্তাব করলেও তাতেও ঐক্য আসেনি। বিএনপি চাইছে নিম্নকক্ষের ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দ হোক।
সরকার বলছে, নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা তাদের নেই। তবে দলগুলোর মধ্যে ভোটের পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্যের কোনো সমাধান হয়নি এবং তার প্রতিফলন ঘটছে মাঠের রাজনীতিতে।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। পদ্ধতি, সময়সীমা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি মিলিয়ে নির্বাচনী রূপরেখা এখনো অস্পষ্ট। আর সেই কারণেই সংশয়, সন্দেহ আর অনিশ্চয়তা ঘুরেফিরে সামনে চলে আসছে।