
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :পিনপতন নিস্তব্ধতা। হাইকোর্ট বিভাগের ফুল বেঞ্চ সভা চলছে। ব্যারিস্টার আদনান কাদেরী বাঙালি জাতির পক্ষে নানান চরিত্রে সাফাই গাইতে গিয়ে লন্ডনে নানান কমিউনিটির সাথে একের পর এক বাচিক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। যেমন ভাবা তেমন কাজ মনে — দেশে আসামাত্র বৃটিশ প্রদত্ত বাঙালি পাতে রেখে দেয়া,পেনাল কোডের সাথে বাঙালি চরিত্র মানুষের জীবন মানের সাথে সাংঘর্ষিক হাড় হিম করা মনে — কয়েকটা ধারার পরিবর্তন চেয়ে বসলেন। আইন মন্ত্রীর সাথে আলাপ সেরে সংসদীয় কমিটির সাথেও কথা বললেন।
লন্ডনে বেড়ে ওঠা সহজ সরল জীবনে অভাব ও স্তাবকতা কী জিনিস? ব্যারিস্টার সাহেব বুঝতে পারেন নি। হাইকোর্ট ফুল বেঞ্চ সভা দু’মাসের জন্য মূলতবী রেখে বলেন — এ দু-মাসে গ্রামের বাড়িতে থেকে মাঝে মাঝে কবরস্হান পরিদর্শনে যেতে হবে। তারপরে নানান শালিস বিচার করে দু’মাস পরে এসে, ব্যারিস্টার সাহেব হাইকোর্ট ফুল বেঞ্চ সভায় চাক্ষুষ রেফারেন্স উপস্হাপন করতে হবে। তখন ফুল বেঞ্চের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। বাঙালি ঘাড়ে তুলে দেয়া বৃটিশদের কলঙ্ক অপমান শাস্তি ধারাগুলোর বর্ণন নিম্নরূপঃ
(১) কবরস্থান হতে লাশ চুরি করে বিক্রি।
( ২) মৃতদেহের সাথে থাকা টাকা সোনা দামী জিনিস হাতিয়ে নেয়া।
(৩) লাশবাহী গাড়ি কিংবা নৌকা ডাকাতি।
বৃহত্তর সিলেট বিভাগ, জেলা হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সম্ভ্রান্ত পরিবারের আখলিস মেম্বার সাহেবের নাতি — ব্যারিস্টার আদনান কাদেরী। সৌম্য গড়ন,শ্রবণ পবন আলাপন, মাঝারি লিকলিকে স্মিতহাস্য গড়ন,ভ্রমর চোখ — ব্যারিস্টার কলোনী প্রেমের ট্রয়যুদ্ধে জিতে এসে গলেতে পরেছেন এমন সৌভাগ্য মেডেল মনে চুনারুঘাট বাসীর মন জিতে নেন।
সবাই যে যার মতো জমিদার বাড়িতে তাঁকে দেখতে এসেছেন। জীবনে প্রথম বাবা মা ছাড়া গ্রামে পদার্পণ। নিজের গ্রামের বাড়ি। নিজের ঘর। নিজেকে তবুও কেন জানি ভারত সীমান্ত পেরিয়ে আসা — অবসন্ন নীলগাই মনে হচ্ছে এমন।
এই বাঙালি জাতির চরিত্র নিয়ে নতুন করে তাঁর কিছু বলার নেই। যতোটুকু বলে তাঁর বৃটিশ প্রেমিকা
রোজালি তাঁকে উপহাস করে বেড়াতেন, — তার
নিরঙ্কুশ সত্যতার আপসহীন প্রশ্নে অর্ধেকেরও বেশি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। আখলিছ মেম্বার সাহেব কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোত্থেকে নানান পরিচয়
দিয়ে —সাংবাদিক আত্মীয় টিচার প্রতিবেশী জমিদার বাড়ির উঠোন কাচারি দখল করে দিলেন। তারপর এলেন, কথিত নানা দাদা খালা খালু মামাতো ফুফাতো ভাই বোনের দল। তাদের কারোর হাতে নানান ফুল মিষ্টি বকুল। কারোর হাতে নানান পিঠা পুলি সেমাই মিষ্টি মিষ্টান্ন। কারোর হাতে আম আনারস জাম। জনতা মুখে কারোর নাতি কারোর পুতি কারোর মুখে লাজুক ঠাট্টা গীতি। আবার কারোর মুখে হাছন রাজার গান ও ধামাইল দামান গীতি।
ফেসবুকীয় উস্কানি উজানি গুজব বৃষ্টি, উটকো কানখাড়া বাতাসে কনটেন্ট ক্রিয়েটর দল উজানি কইমাছের মতো সমান্তরালভাবে সুনামগঞ্জ মৌলভীবাজার হতে —দলে দলে উৎসুক মনের জনতা আসতে দেখে আখলিছ মেম্বার বৃটিশ নাগরিক নাতির নিরাপত্তা নিয়ে দুরু দুরু বুকে চুনারুঘাট থানায় খবর দেন। কী এক জাতীয় ভয়ঙ্কর অবস্হা! ব্যারিস্টার সাহেব জ্ঞান ফেরার পরে দেখলেন,—তাঁর পাসপোর্ট,চূড়ান্ত গবেষণা নথি, লাগেজ জুতো টুথ ব্রাশ কোট প্যান্ট ঘড়ি মোবাইল টাই কোনোটাই নাই। পুলিশ এক এক করে লুটপাটের বর্ণনা সিসি ক্যামেরা হতে নিয়ে চলেছেন। স্হির চলমান চিত্রে দেখা যায়,জনা দশেক অজ্ঞাত নারীও গবেষণ ব্যারিস্টার সাহেবকে নানানভাবে যৌন উৎপীড়নে লিপ্ত ছিলেন।
এবার মব আত্মীয় স্বজন কথিত সুধীজন ওসি দারোগা পুলিশ সামলে আখলিছ মেম্বার কিছুটা শান্ত হলেন। একরাশ হতাশ দুঃখভরা মুখে জর্দা পান চিবিয়ে পিক ফেলে চিৎকার করে বলে চলেছেন —
” বান্দির পুতাইন। আমার যৌনকেশ গেলো কই? ”
— নানা,থামেন। আমার বাকি মান ইজ্জত টাও এইবার গেলো বুঝি!?
: নাতি। আমি তোমার দাদীকে বেশি বেশি ভালোবাসতাম। সে কারণে আমার যৌনকেশ কেউ দেখবে বলে হেফাজতে রাখতাম। তোমার দাদীর মৃত্যুর পরে আমি বিয়ে করিনি। কাঁচা পাকা বালগুলো (যৌনকেশ) রাংতা কাগজে মুড়িয়ে আলমারিতে রেখেছিলাম।
বাঙালি চরিত্রে ইংরেজ জন শোরের বিবরণঃ
আজ থেকে প্রায় আড়াই দশক আগে ১৭৮৪ সালে স্যার জন শোর (তিনি লর্ড কর্নওয়ালিসের সহকর্মী ছিলেন এবং কর্নওয়ালিসের পর ২৮ অক্টোবর ১৭৯৩ সালে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। প্রথম কর্মজীবনে তিনি মুর্শিদাবাদে রাজস্ব বোর্ডের ও পরে রাজশাহীতে রেসিডেন্টের সহকারী হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেছিলেন।) তিনি ইংল্যান্ডে পাঠানো এক বিবরণীতে লিখেছিলেন — “বাঙ্গালীরা ভীরু ও দাসসুলভ। নিজেরা কিন্তু অধন্তনদের কাছে উদ্ধত। অথচ উপরওয়ালার কাছে এরা সাধারণত বাধ্য থাকে। তবে যেখানে শাস্তির ভয় নেই সেখানে মনিবের কাছেও দুর্বিনীত হয়ে উঠতে পারে। ব্যক্তি হিসেবে এদের মানসম্মান বোধ খুব কম। জাতি হিসেবে এদের জনকল্যাণমূলক মতোভাব একেবারে নেই। যেখানে মিথ্যা কথা বলতে এদের একটুও বাধে না। এদিকে কিন্তু হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই সর্বদা নিজেদের গুণগরিমার কথা বড়াই করে বলেন। বাইরের লোকের কাছে বলতে হয় তাই বলেন ; এর বেশী তাদের কাছে কোন মূল্য নেই।
এরা মনে করে চালাকি ও কূটকৌশল জ্ঞানের পরিচায়ক। লোকঠকানো ও ফাঁকি দেওয়া জ্ঞানী লোকের গুণ। এদের কাছে সবচেয়ে অপমানকর হল জাতিচ্যূত হওয়া। ধর্মের বিধান অমান্য করলে ধর্মগুরু এই শাস্তি দিয়ে থাকেন।
এদের সমাজে মিথ্যা কথা বলা, চুরি করা, ধর্ষণ বা নরহত্যা করা জাতিচ্যুত হওয়ার মত গুরুতর অপরাধ নয়।
হিন্দুরা সব সময় আত্মকেন্দ্রিক। আত্মস্বার্থই এদের চালিত করে, উচ্চাকাঙ্খা অনেক পরের কথা। অর্থ লালসা এদের প্রেরণার উৎস। এরা যে ডাহা মিথ্যা কথা বলতে পারে, চাকরের মত তোষামোদ করতে পারে, ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকি দিতে পারে এবং তা করেও থাকে সে-কথা বিশ্বাস করতে হলে এদের মধ্যে বেশ কিছু কাল কাটাতে হবে আমরা অযথা এদের মধ্যে সংস্কারমুক্ত মন, গভীর চিন্তাশীল ও যুক্তিবাদী মানুষ খুঁজে মরি। হিন্দুদের শিক্ষা তাদের নিজ ভাষা পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মুসলমানদের শিক্ষাবস্থা কিছুটা উন্নত। তাদের কিছু নীতিকথা, রাজকার্যের কিছু মূল সূত্র শিখতে হয়, যদিও কার্যকালে সেগুলি মেনে চলে না। তাদের রাষ্ট্রশাসনের জ্ঞান ঐ পর্যন্তই। এর ব্যতিক্রম অতি বিরল। অত্যাচার ও বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে নেটিভরা যে পর্যায়ে নেমে যেতে পারে একজন ইংরাজের পক্ষে তা সম্ভব নয়; সে-কথা ভাবলেও তার মন বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। এ কথা যদি মেনেও নিই যে কোনও কোনও ইংরাজ স্বভাবদোষে বা প্রয়োজনের তাগিদে ভ্রষ্টাচারী হয়, তৎসত্ত্বেও তাদের মনে যে সামান্য নীতি ও সম্মানবোধ থাকে তাতে করে বাংলার একজন নেটিভ যে পর্যায়ে নেমে যেতে পারে তারা তা পারে না। সাধারণত রায়ত থেকে আরম্ভ করে দেওয়ান পর্যন্ত সকলেরই কাজ হল কথা গোপন করা, অন্যকে ফাঁকি দেওয়া। একটা সাদা কথার ওপরে এরা এমন একটা আবরণ জুড়ে দেয় যা মানুষী বুদ্ধির দ্বারা ভেদ করা কঠিন।”
বাঙালি চরিত্রে চার্লস গ্রান্টের প্রতিবেদনঃ
এর প্রায় এক দশক পরে চার্লস গ্রান্ট এশিয়াবাসী ব্রিটিশ প্রজাকূলের সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে এক প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ করেন। রচনাকাল প্রধানত ১৭৯২ সাল। তবে ১৭৯৭ সালের ১৬ আগস্ট তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কোর্ট অব ডাইরেক্টরের কাছে সভার আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য এটি প্রেরণ করেন। গ্রান্ট এ দেশে কোম্পানীর বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থেকে প্রায় ২০ বছর কাজ করেন। ১৭৭০ সালে যখন দেশে ফিরে যান তখন তিনি ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিসের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা। তিনি নিজেই বলেছেন এ দেশে কাজ করবার সময় তাঁর অধিকাংশ কাল কেটেছে প্রদেশের অভ্যন্তরভাগে দেশীয় লোকদের মধ্যে। লন্ডনে ফিরে যাবার চার বছর পর তিনি কোম্পানির ডিরেক্টার নির্বাচিত হন এবং ১৭৯৭ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত (১৮২৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়) যে ছয় বার ডিরেক্টর বোর্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার প্রত্যেক বারেই তিনি জয়ী হন। তিনি তিনবার কোম্পানীর চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তৎকালে তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী পুরুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সর্ব বিষয়ে ঈশ্বরপ্রেরিত প্রতিনিধি হিসেবেই তিন কাজ করছেন। গ্রান্ট তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন, —
“নেটিভদের স্বভাব-চরিত্র অত্যন্ত শোচনীয়, অশ্রদ্ধা ও করুণার উদ্রেক করে। তবে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিশাল সমাজে যে ভালমন্দ থাকবে না এমন নয়, নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা প্রায় একই।
ঐ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলার অধিবাসীদের স্থান সর্ব নিম্নে। সমাজের নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য যে সমস্ত গুণাবলী প্রয়োজন বাঙ্গালীদের মধ্যে সেগুলি প্রায়শই বিস্ময়কররূপে অনুপস্থিত। তাদের মধ্যে সততা, সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার বড়ই অভাব। ইউরোপীয় সমাজে এর নজির মেলা ভার। সেখানে এই সব নীতিবোধকে চরিত্রবল ও সুনামের ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়; যাদের এসব গুণ নেই তারাও অন্তত থাকার ভান করে। যারা এসব গুণে একেবারে বঞ্চিত তাদেরকে সবাই ঘৃণা করে। বাংলায় কিন্তু এমনটি ঘটে না। এই সব গুণাবলী এখানে এমনভাবে লোপ পেয়ে গিয়েছে যে সমাজে তার একটা ছদ্মবরণ রাখারও প্রয়োজন বোধ হয় না। এই গুণ অর্জনের বা রক্ষার চেষ্টাও নেই। আবার এইসব গুণ সামাজিক সম্পর্কও নিয়ন্ত্রিত করে না। যাদের এসব গুণ নেই, তা যতই প্রকট ও ঘৃণ্য হোক না কেন, সাধারণের চক্ষে তারা হেয় বলে গণ্য হয় না, অথবা এই কারণে পরিচিতদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কচ্ছেদও ঘটে না। মিথ্যাচারিতা এদের এমন স্বভাব যে কোনও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে এদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মিথ্যা কথা বলা এমন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে এতে কেউ উত্তেজিত বোধ করে না। মনে করে এসব মেনে নিতে হয়। এই আচরণ মেনে চলার ফলে এটা যে দোষের সে বোধটাই চলে গিয়েছে। সাধারণ কাজেও লোক ঠকানো, ফাঁকি দেওয়া, ধোঁকা দেওয়া, চুরি করা এমন একটা সাধারণ ঘটনা যে, মুসলিম হিন্দুরা একে স্বাভাবিক অনাচার বলে মনে করে। নিজেকে এ সবের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে, কিন্তু এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে না। সত্য ও সততার লজ্জাকর অপলাপ ঘটলেও সমাজে তার কোন স্থায়ী বা গভীর প্রভাব পড়ে না।