
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :তামিম ইকবালের অভিযোগ, কিছু মানুষ তার পিছু নিয়েছেন এবং তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তাদের প্রতি দেশের সাবেক অধিনায়কের বার্তা, “কখনো আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।”
কোন ঘটনা প্রেক্ষিতে বা কেন হঠাৎ এমন বার্তা, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তামিম। তবে সামাজিক মাধ্যমে তার লেখাতে ফুটে উঠেছে, ২০২৩ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের নানা অংশ সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার প্রেক্ষিতেই এমন কথা বলেছেন তিনি।
সেই তদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। পরে সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদও বলেছিলেন, এই প্রতিবদন প্রকাশ করা হবে। শেষ পর্যন্ত তারা কেউই তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেননি। বিসিবিতে সাম্প্রতিক পালাবদলের পর এখন সেই প্রতিবেদন নানাভাবে পৌঁছে গেছে সংবাদমাধ্যমের কাছে।
সেই প্রতিবেদনের একটি অংশে আছে, বিশ্বকাপ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অভিযোগ, বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান (তখন প্রধান ছিলেন জালাল ইউনুস) ও তামিম ইকবাল ফোন করে নাসুম আহমেদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছিলেন কি না। সাকিবের অভিযোগ, এই দুজনই খবরটি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দিয়েছেন হাথুরুসিংহে বরখাস্ত করার পথ তৈরি করতে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের চরম ব্যর্থ বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হওয়ার কিছুদিন পর কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, বিশ্বকাপ চলার সময় একদিন নাসুমের গায়ে হাত তুলেছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে। সেই সময়ে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান ও অন্য বোর্ড কর্তারা বরাবরই এটা উড়িয়ে দিয়েছেন এবং হাথুরুসিংহেকে দায়িত্বে রেখেছেন। হাথুরুসিংহেও এটা অভিযোগকে বরাবরই মিথ্যা বলে আসছেন।
পরে ফারুক আহমেদ গত অগাস্টে বিসিবি প্রধানের দায়িত্বে আসার পর আবার ব্যাপারটি খতিয়ে দেখেন এবং গত অক্টোবরে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে বিসিবি। সেই সময়ের বিসিবি সভাপতি ফারুক তখন বলেছিলেন, “মিসকন্ডাক্ট উইথ আ প্লেয়ার অ্যান্ড মিসকন্ডাক্ট অ্যাজ আ এমপ্লয়ি, দুই কারণেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
এখন ফাঁস হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঘটনার একমাত্র প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন সেই সময়ের ট্রেনার নিক লি এবং তিনি ঘটনাটি তদন্ত কমিটির কাছে বলেছেন।
ফারুক আহমেদ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিক লির সঙ্গে আবার কথা বলেছেন এবং তার কাছ থেকে একটি লিখিত নিয়েছেন, যেখানে উল্লেখ আছে, হাথুরুসিংহে এক পর্যায়ে নাসুমের কলার চেপে ধরেন এবং হাত দিয়ে আঘাত করেন, তা এই বাঁহাতি স্পিনারের ঘাড়ের পাশে গিয়ে লাগে।
সেই ঘটনাই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করেছেন, জালাল ইউনুস ও তামিম ইকবাল এমন অভিযোগ তদন্ত কমিটির কাছে করেছেন সাকিব।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সেটিই বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার।
তামিম সামাজিক মাধ্যমে কড়া বার্তা দিয়েছেন শুক্রবার দুপুরে।
“আমি আপনাদের সঙ্গে কখনো হাত মেলাব না! যারা আমার পেছনে লেগেছেন, আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন আমাকে হাত করার জন্য, সেই মানুষগুলোকে বলছি, আমি কখনও আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।
“আমি যদি কখনো ক্রিকেট প্রশাসনে আসি, সঠিক পথ ধরেই আসব এবং শুধুমাত্র ক্রিকেটের ভালোর জন্য আসব। প্রয়োজন হলে কখনো ক্রিকেট বোর্ডে আসব না, তবুও আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না।”
তদন্ত কমিটির সেই প্রতিবেদনের বিষয়টি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে সরাসরি তথ্য ফাঁসে দায় দেওয়া হয়েছে তামিমকে, কিছু সংবাদমাধ্যমে আবার সঠিকভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে সাকিবের অভিযোগের কথা।
তামিম নিজের লেখায় ব্যাখ্যা করেছেন সেটিই।
“যারা আমার ভক্ত-সমর্থক ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, তাদের জন্য বলছি, কোনো একজন ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা আর তদন্তে রিপোর্টে অভিযুক্ত হওয়া, দুটির মধ্যে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ধারণার কথা বলেছেন তদন্ত কমিটিতে। সেটা তার ব্যাপার। সেই ব্যক্তি আগেও একটি টিভি চ্যানেলে আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন, নানা সময়ে নানা কিছু বলেছেন। আমি কখনো প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করিনি।”
“শুধু এটুকু বলছি, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কোনো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়নি এবং তথ্য ফাঁস করা সংক্রান্ত কোনো কিছু তারা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেননি। আমি তো তখন দলেই ছিলাম না! তদন্ত কমিটির কাছেও এটা মনে হলে নিশ্চয়ই তারা একবার হলেও সেই প্রসঙ্গ তুলতেন বা জিজ্ঞাসা করতেন! স্বচ্ছতার স্বার্থেই তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার আলোচনার পুরোটাই রেকর্ড করা আছে, তাদের অনুমতি নিয়েই।
ব্যাপারটিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার দায় সেই মানুষগুলোকে দিয়ে আবার তাদেরকে একই বার্তা দিয়েছেন তামিম।
“কোনো এক ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা আর তদন্ত কমিটির অভিযোগের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান আছে, আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন।”
“এই ব্যাপারটিকে যারা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে, তাদেরকে আবারো বলছি, আমাকে কোনোভাবেই আপনাদের কাতারে পাবেন না। আমি হাত মেলাব না।”