ইউকে শনিবার, ৭ জুন ২০২৫
হেডলাইন

ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় হতাশা, অবিশ্বাস

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের যে ১২ টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সেসব দেশের কর্মকর্তারা ও বাসিন্দারা সিদ্ধান্তটি নিয়ে হতাশা ও অবিশ্বাস জানিয়েছেন।

বুধবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বিদেশি সন্ত্রাসী’ ও অন্যান্য হুমকি থেকে সুরক্ষার জন্য এই নতুন নিষেধাজ্ঞা জরুরি।

আগামী সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের ওপর পূর্ণাঙ্গভাবে আরোপ হবে। এছাড়া আরও সাতটি দেশ— বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ভ্রমণে আংশিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপ অনেকটা ২০১৭ সালের সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদকালেও ট্রাম্প সাতটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেন, যিনি ট্রাম্পের পর ক্ষমতায় আসেন, ২০২১ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন। বাইডেন এই নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় বিবেকের ওপর একটি কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে প্রতিক্রিয়া

সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সুদানিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

চাদের প্রেসিডেন্ট মাহামাত ইদ্রিস দেবি ইত্নো পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “চাদের নেই কোনও বিলাসবহুল বিমান বা বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি, কিন্তু আমাদের আছে সম্মান ও গর্ব।”

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রকল্পে কাজ করা অনেকেই ভীত যে তারা এখন আর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাবেন না।

পাকিস্তানে অবস্থানরত ৫৭ বছর বয়সী নারী অধিকারকর্মী ফাতিমা বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত এক রাতেই আমাদের আশা-ভরসা ধূলিসাৎ করেছে।”

আইনগত চ্যালেঞ্জ ও ব্যাখ্যা

ট্রাম্প জানিয়েছেন, যে দেশগুলো সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে তারা ‘সন্ত্রাসীদের বড় ধরনের উপস্থিতিকে’ আশ্রয় দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল, তারা ভিসা নিরাপত্তায় সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে আর ভ্রমণকারীদের পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের অক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি এসব দেশগুলোর অপরাধমূলক রেকর্ড সংরক্ষণ অপর্যাপ্ত এবং তাদের নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানের হার উচ্চ।

তিনি রোববার কলোরাডোর একটি ঘটনায় একজন মিশরীয় নাগরিকের হামলার উদাহরণ টেনে বলেছেন, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নিষেধাজ্ঞা জরুরি— যদিও মিশর নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই।

“মিশরের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারা বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে,” বলেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় অনুযায়ী ২০২৫ এর ৯ জুন (আগামী সোমবার) রাত ১২টা এক মিনিট থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আদেশে আরও বলা হয়েছে, এই তারিখের আগে ইস্যু করা ভিসাগুলো বাতিল করা হবে না।

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে এই নিষিদ্ধ দেশগুলোর নাগরিকদের প্রায় এক লাখ ৬২ হাজার ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল।

তবে নিষেধাজ্ঞায় কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে, যেমন—মার্কিন নাগরিকদের নিকটাত্মীয়, দ্বৈত নাগরিক, স্থায়ী বাসিন্দা ও বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা অ্যাথলেটরা এর আওতায় পড়বে না।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিগ্রেশন আইনের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক স্টিফেন ইয়েল-লোয়ের বলেন, “আগের ভুল থেকে ট্রাম্প শিক্ষা নিয়েছেন, এবার তিনি অনেক স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও ব্যতিক্রম রেখেছেন, যা আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি এক বিবৃতিতে বলেন, “সোমালিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে শ্রদ্ধা করে আর উত্থাপিত উদ্বেগগুলি মোকাবেলায় সংলাপে অংশ নিতে প্রস্তত আছে।”

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ