
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জুন ২০২৫ মাসজুড়ে সারা দেশে পালিত হচ্ছে ‘আষাঢ়ের উৎসব’। কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে নাট্য, সঙ্গীত, নৃত্য, চারুকলা, আলোকচিত্র, গবেষণা ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক নানা আয়োজনে ভরপুর মাসব্যাপী এই উৎসব।
এ আয়োজনে বিভিন্ন কর্মশালা, প্রদর্শনী, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে নির্ধারিত তারিখে, যাতে দেশব্যাপী শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা আরও গভীর ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়।
নাট্য ও প্রযুক্তিনির্ভর কর্মশালা ও প্রদর্শনীসমূহ
সাউন্ড সংক্রান্ত নিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ ও ১৬ জুন, জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। এরপর ১৭ ও ১৮ জুন একই স্থানে আয়োজন করা হবে লাইট সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির নিরাপত্তামূলক ব্যবহারের কর্মশালা।
পুতুল নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ১৫-১৭ জুন শেরপুর, ১৬-১৮ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী, ১৭-১৯ জুন মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও বগুড়া, ১৯-২১ জুন সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া, ২০-২২ জুন জামালপুর, ২১-২৩ জুন এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে, ২২-২৪ জুন নারায়ণগঞ্জ ও লালমনিরহাট এবং ২৩-২৫ জুন বরগুনা ও নওগাঁ জেলায়।
যাত্রাপালা নির্মাণ ও প্রদর্শনী আয়োজন করা হবে ১৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা ও খুলনায়। একই সময়ে নাট্য প্রদর্শনী ‘দেয়াল সব জানে’ পরিবেশিত হবে ১৯ ও ২০ জুন, জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে।
এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মুকাভিনয় উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ও ২০ জুন। ১৯-২১ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে নাট্য রচনা কর্মশালা এবং খুলনায় ২০-২৭ জুন চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা।
অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী আয়োজন করা হবে ২০ জুন যশোর, ২২ জুন গাজীপুর এবং ২৩-২৫ জুন ঢাকার কোনাপাড়ায়। ২৫ জুন জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিলো’।
সঙ্গীত, থিয়েটার ও শিশু-কিশোরদের প্রশিক্ষণ
কাওয়ালি ও সুফি সংগীত বিষয়ক বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে ৮-১০ জুন এবং ১৩-১৪ জুন জেলা পর্যায়ে। কারিগরি থিয়েটার কর্মশালা, যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে থিয়েটার গ্রাফিক্স, মঞ্চ পরিকল্পনা ও আলোক পরিকল্পনা, তা আয়োজিত হবে ১০ থেকে ১৪ জুন।
স্কুলভিত্তিক নাট্য প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে ১৩ ও ১৪ জুন ১৬টি স্কুলে। নাট্যভাষার মাধ্যমে লাঠি খেলাকে তুলে ধরার জন্য ১২ থেকে ২৭ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে নাট্য নির্মাণ কর্মশালা ও প্রদর্শনী, যার বিষয়বস্তু ‘জুলাই অভ্যুত্থান’।
জেলা পর্যায়ে ১৫ থেকে ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বিষয়ক গ্রাফিতি ও ক্যালিওগ্রাফি অঙ্কন কর্মশালা। সংগীত পরিবেশনা কৌশল প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে ১৫ থেকে ১৭ জুন। কিশোর-কিশোরীদের আলোকচিত্র প্রশিক্ষণ চলবে ১৫ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত।
বাদ্যযন্ত্র (দোতরা ও বাঁশি) বিষয়ক দুটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ১৯ জুন। একই সময়ে ঢাকায় আয়োজন করা হবে মাইম বিষয়ক কর্মশালা।
মৃৎশিল্প বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে জেলা পর্যায়ে। এর মধ্যে ৫ দিনের টেপা পুতুল কর্মশালা চলবে ২০ থেকে ২৪ জুন এবং ৭ দিনের সিরামিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে ২০ থেকে ২৬ জুন। গবেষণা পরিচালনা কৌশল বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত।
চারুকলা বিভাগের কর্মসূচি
ছাপচিত্র কর্মশালা আয়োজিত হবে ১৩-২১ জুন জাতীয় চিত্রশালা ভবনে, ১৮-১৯ জুন টাঙ্গাইলে, ২০-২১ জুন নেত্রকোনায়, ২৫-২৬ জুন বান্দরবানে এবং ২৮-২৯ জুন খাগড়াছড়ি জেলায়।
বাঁশ ও বেত শিল্প প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলবে ১৫ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত। ১৬ জুন আয়োজিত হবে ‘স্বদেশনামা’ শীর্ষক সেমিনার এবং একই দিনে একটি ছাপচিত্র কর্মশালাও হবে।
টাঙ্গাইলে ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স। ২১-২৩ জুন ঢাকায় আয়োজন করা হবে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর বাংলা অক্ষর ও অক্ষর বিন্যাসসহ প্রকাশনা জগতে তাঁর অবদান বিষয়ক প্রদর্শনী এবং সেমিনার।
গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের আয়োজন
আলোকচিত্র শিল্পী আমানুল হক ও নওয়াজেশ আহমেদকে নিয়ে ২১-২৩ জুন এবং আলোকচিত্র শিল্পী রশিদ তালুকদার ও আফতাব উদ্দীনকে নিয়ে ২৮ জুন সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে ২১ থেকে ২৫ জুন এবং ২৫ জুন পরিচালিত হবে লোকসংগীত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম।
সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগ
এই বিভাগের আয়োজনে ১৭-১৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে মনিষীদের স্মরণ অনুষ্ঠান, ২০ জুন হবে প্রযোজনা ভিত্তিক কম্পোজিশন এবং ২১ জুন উদযাপিত হবে বিশ্ব সংগীত দিবস।
প্রযোজনা বিভাগের আয়োজন
১৬-২৫ জুন ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইলে এবং ১৭-২৬ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হবে VR প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে থাকবে ৬ষ্ঠ জাতীয় ভাস্কর্য, পোস্টার, জুলাই অভ্যুত্থান, ঐ নতুনের কেতন ওড়ে, এবং জুলাইয়ের বীর কন্যা বিষয়ক VR উপস্থাপনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সেল-এর আয়োজন
ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক লেকচার ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন মির্জাপুর, শেরপুর ও বগুড়ায় এবং ২৩-২৫ জুন কক্সবাজার ও রাঙামাটিতে।
সমতল ও পাহাড়ী সম্প্রীতি উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে ১৭-১৮ জুন বগুড়ায় এবং ২০-২১ জুন ঠাকুরগাঁওয়ে।
উপসংহার
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে মাসব্যাপী এই ‘আষাঢ়ের উৎসব’ শিল্প, সৃজনশীলতা এবং ঐতিহ্যের সমন্বয়ে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে নতুন প্রাণ।
এই আয়োজন শুধুমাত্র বিনোদনের নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক আন্দোলন হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।