ইউকে বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
হেডলাইন

আমাকে ‘বিদেশি’ বললে অন্যের গায়েও পড়তে পারে: নাগরিকত্ব নিয়ে খলিলুর

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণের যে অভিযোগ উঠেছে, তা উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের ‘নাগরিক নন’ তিনি।

নাগরিকত্ব নিয়ে ওঠা কথাবার্তা থামানোর অনুরোধ জানিয়ে বুধবার তিনি বলেছেন, ‘পরিবারের সঙ্গে’ দীর্ঘদিন আমেরিকায় থাকলেও দেশটির নাগরিকত্ব তিনি ‘নেননি’। তাকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়েও একই রকম কথা আসবে।

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়ক সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর বলেন, “আরেকটি কথা আপনারা শুনেছেন, আমার জাতীয়তা নিয়ে… আমার একটাই জাতীয়তা, নাগরিকত্ব, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।

“আমি এখানে আসার আগে আমার পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় থেকেছি, কিন্তু আমার কোনো আমেরিকান পাসপোর্ট নাই। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের জাতীয়তা আমার নাই, নাই।”

তিনি বলেন, “এখন কেবলমাত্র আমি আমেরিকায় থেকেছি বলে যদি আমাকে বলা হয়, আমি বিদেশি নাগরিক, তাহলে তো কালকে তারেক রহমান সাহেবকেও সে কথা বলতে হয়।

“আমি আবেদন করব, আপনারা বুঝেশুনে কথা বলবেন, আমাকে যদি আপনি দোষারোপ করেন, সে ঢিল কিন্তু অন্যের উপর গিয়ে পড়তে পারে।”

খলিলুর বলেন, “আমি যেটা নই, সেটা বানাবেন না প্লিজ! আর পারলে প্রমাণ করেন, আদালতে গিয়ে প্রমাণ হবে, আমার একটা অধিকার আছেতো বাংলাদেশি একজন হিসেবে, আপনারা যদি সেই অধিকারকেই সম্মান না করেন…

“এটা আপনাদের দোষ নয়, যে কথাটি উঠেছে, এটা খুব দুঃখজনক হবে। সে কথাটি তাহলে যে কোনো লোকের উপর প্রযোজ্য হবে। দয়া করে এটা বন্ধ করুন।”

‘বিদেশি নাগরিক’ হয়েও খলিলুর রহমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সেটা নিয়ে কথা বললে আলোচনা আরও জোরালো হয়।

১৭ মে খুলনায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সরকারপ্রধানের উদ্দেশে বলেন, “আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। হয় তিনি নিজে পদত্যাগ করবেন, না হলে আপনি তাকে বিদায় করবেন।

“এ দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি কোনো নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। আমরা তা হতে দেব না।”

সালাহউদ্দিনের এমন বক্তব্যের পর খলিলুর রহমান প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তারপরও এক উপদেষ্টা পদমর্যাদার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির ‘বিদেশি নাগরিকত্ব’ বিষয়ে বিতর্ক থামেনি।

বিএনপির নেতার বক্তব্যের পরদিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “এই অভিযোগ প্রমাণের দায়ভার অভিযোগকারীর ওপর বর্তায় এবং প্রয়োজনে তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে।”

রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর বলেন, “আমি একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমার পূর্ণাঙ্গ অধিকার ভোগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।”

বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বের আগেই নিজ থেকে সালাহউদ্দিন আহমদের ওই অভিযোগ সরাসরি নাকচ করেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতির ডিগ্রি নেওয়া খলিলুর ১৯৮০-৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। আইন ও কূটনীতিতে এমএ এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন তিনি।

পেশাদার কূটনীতিক খলিলুর ১৯৯১ সালে জেনিভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী ২৫ বছরে জেনিভা ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি।

ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি ২০০১ সালে তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ