
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :আজকের পৃথিবী ডিজিটাল। সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। একটি ক্লিকেই ছড়িয়ে পড়ে ছবি, ভিডিও কিংবা বার্তা। কিন্তু প্রযুক্তির এই অভাবনীয় অগ্রগতি যেমন সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি বিপদও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক যে সমস্যাটি সামনে এসেছে, সেটি হলো গুজব।
আর এই গুজবের গতি আজকাল স্টারলিংকের ইন্টারনেট স্পিডকেও হার মানায়।
একটা সময় গুজব ছড়াতে দিন বা মাস লেগে যেত। এখন? কয়েক সেকেন্ডেই হাজারো মানুষের মুঠোফোনে ভেসে ওঠে একরাশ বিভ্রান্তি। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব শর্টস—সব প্ল্যাটফর্মেই গুজব যেন ছড়িয়ে পড়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি কিছু অঞ্চলে ডাকাতি এবং পকেট্মার এর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, কোন তথ্যপ্রমাণ যাচাইকরণ ছাড়াই নিরীহ পথচারীদের জনতা ধরে মারধর করেছে, যাদের সঙ্গে ঘটনার কোনো সম্পর্কই ছিল না। কোনো সত্যতা যাচাই না করেই মানুষ আজ বিশ্বাস করে ফেলছে স্ক্রিনে দেখা প্রতিটি তথ্যকে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আমাদের জীবনকে সহজতর করেছে ঠিকই, তবে এর অপব্যবহার হয়ে উঠেছে ভয়ানক। এখন তো এআই দিয়ে বানানো যায় নকল ভিডিও (ডিপফেক), ভুয়া অডিও, এমনকি নকল সংবাদও। অসামাজিক কার্যকলাপ করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। একজন রাজনৈতিক নেতার কণ্ঠে বানানো ভুয়া অডিও যদি শেয়ার হয় হাজার হাজারবার, তা হলে ক্ষতির সীমা কীভাবে নির্ধারিত হবে?
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে, ফেক নিউজ বানানোর জন্য তরুণদের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল কাজ করছে। কেউ জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায়, কেউবা প্রতিশোধের আগুনে। এআই যখন এভাবে গুজব তৈরির হাতিয়ার হয়ে যায়, তখন প্রযুক্তির দিকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে হয়—এই হাতিয়ার কার হাতে?
একটা বিশাল প্রভাব পড়ছে কিশোরদের উপর। “কীভাবে ভাইরাল হওয়া যায়”, “কীভাবে টিকটকে ‘হিরো’ হওয়া যায়” এই ভাবনার মধ্যেই গড়ে উঠছে এক নতুন সংস্কৃতি। এই কিশোর গ্যাং কালচার বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
ভুল ও উত্তেজনাপূর্ণ তথ্যের চাপে কিশোরেরা ভাবছে, রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানোই সাহসিকতা, বা গুজব ছড়িয়ে ভয় দেখানো মানেই প্রভাব বিস্তার। এই মানসিকতা থেকে তারা জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়, প্রতারণায়, এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।
তরুণরা আজ দ্বিধায় ভুগছে, কার কথা বিশ্বাস করবে? কোন তথ্যটা সঠিক, কোনটা সাজানো? অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা তাদের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতা দুর্বল করে দিচ্ছে। একবার চোখে পড়লেই সেটাকে ‘সত্য’ ধরে নেওয়ার প্রবণতা জন্ম নিচ্ছে। তারা ভুল পথে হাঁটছে, কিন্তু বুঝতেই পারছে না যে সামনে আছে গভীর অন্ধকার।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কী?
গুজব কখন কোন সংবাদের উপর ভিত্তি করে ছড়াবভে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই গুজব হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে —
ডিজিটাল লিটারেসি: শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে কীভাবে তথ্য যাচাই করতে হয়। তথ্য যাচাই এ পারদর্শী হলে গুজব ছড়ানোর হার কমবে বলে ধারণা করা যায়।
এআই রেগুলেশন: এআই কনটেন্ট তৈরি ও ব্যবহারে কঠোর নীতিমালা থাকা দরকার। এআই এর অপব্যবহার রোধে এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়।
পারিবারিক নজরদারি: অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের অনলাইন কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা। নির্দিষ্ট বয়সের পূর্বে ইন্টারনেট এর অবাধ ব্যবহার এর ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
মিডিয়া ও সচেতনাতামূলক প্রচার: গুজব এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো জরুরি। বিভিন্ন বয়সী মানুষদের এ ব্যাপারে সতর্কীকরণ এ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
যদি সামাজিকভাবে সচেতন না হওয়া যায়, তাহলে আগামী প্রজন্ম বিভ্রান্তি, গুজব ও ভুল তথ্যের অন্ধকারে দিশেহারা হয়ে পড়বে। গুজবের গতি সত্যের চেয়ে যদি বেশি হয়, তাহলে সমাজে আলোর চেয়ে অন্ধকার ছায়া বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।