
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। স্মার্টফোন, কম্পিউটার এসব পণ্য মূলত চীন থেকে আমদানি করা হয়। প্রযুক্তি খাতের জন্য এটি বড় সুখবর হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
অ্যাপল ও ডেল টেকনোলজিসসহ অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে শুল্ক অব্যাহতির এই ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন সংস্থা বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ৯০ দিনের এই শুল্ক অব্যাহতি কার্যকর হবে। বিজ্ঞপ্তিতে ২০টি পণ্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডিস্ক ড্রাইভ, ডেটা প্রসেসিং যন্ত্র, সেমিকন্ডাক্টর, যন্ত্রপাতি, মেমোরি চিপ, ফ্ল্যাট–প্যানেল ডিসপ্লেসহ (৮৪৭১ কোডের আওতাভুক্ত) অন্যান্য পণ্য আছে।
তবে ৫ এপ্রিল বা তার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে অথবা গুদাম থেকে খালাস করা হয়েছে এমন পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই শুল্ক অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম ১০ শতাংশের শুল্কও দিতে হবে না। ফলে ভারতের কারখানায় তৈরি আইফোন ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে খরচ কমবে।
গতকাল শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে পাল্টা শুল্ক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সোমবার এ–বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেব। সেদিন আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলব। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক অর্থ আয় করছে।’ বিষয়টি হলো, চীনের যেসব প্রযুক্তিপণ্যে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেটা মূলত পাল্টা শুল্ক; আগের যে শুল্ক ছিল, তা অব্যাহত থাকবে। ফেন্টানিল নিয়ে সৃষ্ট সংকটের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, তা অব্যাহত থাকবে।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভস বলেন, প্রযুক্তি খাতের জন্য চলতি সপ্তাহে এটি সবচেয়ে ইতিবাচক খবর। পাল্টা শুল্ক নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত; এ নিয়ে একধরনের অস্থিরতাও আছে। তবে অ্যাপল, এনভিডিয়া, মাইক্রোসফটসহ গোটা প্রযুক্তি খাতে এখন অনেকটাই স্বস্তির হাওয়া বইছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হয়ে উঠেছেন। ট্রাম্পের অভিষেক উপলক্ষে অ্যাপলের সিইও টিম কুক একটি প্রাক্-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে গিয়েও তাঁকে শুভেচ্ছা জানান টিম কুক।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প শিগগিরই সেমিকন্ডাক্টর খাত নিয়ে একটি জাতীয় পর্যায়ের নিরাপত্তা তদন্ত শুরু করবেন। ফলে আবারও নতুন করে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা আসতে পারে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্য যেমন চিপ, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভর করতে পারে না, ট্রাম্প এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ক্যারোলাইন লেভিট আরও জানান, ট্রাম্পের নির্দেশে অ্যাপল, এনভিডিয়া ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বুঝতে পারছে, এই শুল্ক ভোক্তা পর্যায়ে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের প্রযুক্তিপণ্য বা স্মার্টফোনে ৫৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক থাকলেও আইফোনের দাম ১ হাজার ৫৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৩০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক থাকবে দুই দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে স্মার্টফোন; মোট ৪ হাজার ১৭০ কোটি ডলারের স্মার্টফোন আমদানি করেছে তারা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি করা পণ্য ছিল ল্যাপটপ, যার অর্থমূল্য ৩ হাজার ৩১০ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার সপ্তাহের শেষে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে খ্যাত সোনার দাম নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের সুদ হার ২০০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে; কমেছে ডলারের মান। এতে বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন অর্থনীতির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, শুল্কের চাপ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ঘাড়ে বর্তাতে পারে। সেই ভাবনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিক গাড়ি এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো বড় অঙ্কের পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রে আরও উৎপাদনমুখী চাকরির সুযোগ তৈরি করবে এবং কয়েক দশকের অর্থনৈতিক পতনকে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দেবে।