
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :শান্তি আলোচনার সম্ভাব্য পথ খুঁজতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে চার ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। এটি চলতি বছরের মধ্যে তাদের তৃতীয় বৈঠক। ক্রেমলিন জানিয়েছে, বৈঠকে মূলত ইউক্রেইন সংকটের রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন রুশ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ।
তবে আলোচনার গতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, “রাশিয়াকে এগিয়ে আসতেই হবে। এই অযৌক্তিক যুদ্ধে প্রতি সপ্তাহে হাজারো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।”
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন ট্রাম্পের ইউক্রেইন বিষয়ক দূত কিথ কেলোগের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেলোগ বলেন, যুদ্ধ থামাতে ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনারা পশ্চিম ইউক্রেইন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আর রুশ বাহিনী থাকতে পারে পূর্বাঞ্চলে—একটা সাময়িক সমঝোতা হিসেবে। তিনি বার্লিন বিভক্তির ইতিহাস টেনে এ প্রস্তাব তুলে ধরলেও পরে সোশাল মিডিয়ায় বলেন, তার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধ বন্ধের আশা না দেখেই ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেইনের জন্য আরও ২১ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার) সামরিক সহায়তা অনুমোদন করেছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলেও এই মুহূর্তে আলোচনায় বড় কোনো অগ্রগতির আশা করা যাচ্ছে না। পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে সম্ভাবনার প্রশ্নে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “সব নির্ভর করছে উইটকফ কী বার্তা নিয়ে এসেছেন তার ওপর।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বৈঠকের আগে রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি সম্মেলনে অংশ নেন উইটকফ। ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেইন আগ্রাসনের পর তিনিই প্রথম রুশ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
অন্যদিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজের শহর ক্রিভি রিহে পরিদর্শনে গিয়ে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর সঙ্গে শত শত চীনা নাগরিক যুদ্ধ করছে। ইউক্রেইনের হাতে আটক হওয়া দুই চীনা নাগরিকের ভিত্তিতে তিনি এই দাবি করেন।
জেলেনস্কি এক আবেগঘন মুহূর্তে রুশ হামলায় নিহত শিশুদের ছবির সামনে ফুল দেন এবং আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “শুধু শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েই জীবন রক্ষা সম্ভব—বিশেষত যখন আপনার প্রতিবেশী রাশিয়া।”
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, তার সময় এমন যুদ্ধ কখনো হতো না। “আমি হোয়াইট হাউসে থাকলে এটা ঘটত না,” বলেন তিনি।
সম্প্রতি ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যকার সম্পর্কও তিক্ত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে দুজনের বৈঠক ‘বিপর্যয়কর’ ছিল বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম।
সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা অগ্রগতি দেখালেও রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করায় আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে সাম্প্রতিক একটি বিষয় খানিকটা ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে—চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে বন্দি বিনিময় হয়েছে।
২০২২ সালে মাত্র ৫১ ডলার অনুদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া রুশ-আমেরিকান কেসেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তার বদলে মুক্তি পেয়েছেন আর্থার পেত্রভ, যিনি ২০২৩ সালে সাইপ্রাসে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং রাশিয়ার পক্ষে মাইক্রোইলেকট্রনিক্স পাচারের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।