ইউকে শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
হেডলাইন

সব পক্ষের মন জোগাতে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ছে নতুন দলে

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষায়। কিন্তু যাত্রা শুরুর আগেই দলের শীর্ষ পদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির এই দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতাদের পদ দাবি করাকে কেন্দ্র করে বিরোধের সূত্রপাত হয়। শেষপর্যন্ত সব পক্ষকে খুশি রাখতে বা সবার মন জোগাতে সমঝোতা করে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এরই মধ্যে গত কয়েক দিনে কয়েকদফা সমঝোতা বৈঠক হয় বিরোধে জড়িয়ে পড়া পক্ষগুলোর মধ্যে। এসব বৈঠকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এই দুটি পদ বা তার অধিক নতুন পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। পদ তৈরির মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের নতুন দলে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

যদিও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, বিকেন্দ্রীকরণ ও নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্যই নতুন পদ তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

“বেসিক্যালি ডিসেন্ট্রালাইজেশন করতে চাচ্ছি ও নিউ লিডারশিপ নিয়ে আসতে চাচ্ছিলাম দলের এ পোস্টগুলোতে। যদিও এখনো কোনো কিছু ফিক্সড হয়নি। আমাদের এখানে লিডারশিপ বেশিতো, মূলত লিডারশিপের একটা প্রতিযোগিতা আছে,” বলেন মি. পাটওয়ারী।

দুই – তিনজন নেতৃত্বের কাছে সীমাবদ্ধ না থেকে যাতে ‘বেস্ট লিডার’ পাওয়া যায়, সে বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান মি. পাটওয়ারী।

তিনি বলেন, “যাতে আমরা বেস্ট লিডার পাই, যিনি এ সময়ে সংগঠিত করে সংগঠনটা গঠন করতে পারবেন; ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারবেন। দুই-তিনজন নেতার কাছে সীমাবদ্ধ না থেকে ১০-১৫ জন নেতাকে আমাদের স্ট্রাকচারে কো-অপ্ট করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তা করছি আমরা।”

তবে, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র আহ্বায়কের পদে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি পদগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান মি. পাটওয়ারী।

দলটির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। গত কয়েকদিনে এই বিরোধ এতটাই প্রকাশ্যে আসে যে, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোস্ট দিয়েছেন প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ। এখন সবার মন যোগাতে দলে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

এদিকে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের উদ্যোগে নতুন এই দল আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানের জায়গাও এখনও ঠিক হয়নি; দুটি স্থানের ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থানকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে।

নতুন দলের সাংগঠনিক কাঠামো কেমন হবে?

জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের কাঠামোতে বর্তমানে যেসব পদ আছে, সেগুলো যথারীতি থাকবে।

আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখ্য সংগঠক এবং মুখপাত্র- এ চারটি পদের পাশাপাশি নতুন পদ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কে কোন পদে থাকবেন সেটি চূড়ান্ত হয়নি।

নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সংগঠনটির বর্তমান সদস্য সচিবের পদে থাকা আখতার হোসেনকে নতুন দলেও একই পদে রাখার জন্য সদস্যদের একটি পক্ষের চাপ রয়েছে।

একই পদে নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর নামও প্রস্তাব করেছেন কেউ কেউ। আবার বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকেও এই পদে চায় একটা পক্ষ।

অন্যদিকে, ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা চান নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জোনায়েদকে যেন নতুন দলের সদস্য সচিব করা হয়।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মি. পাটওয়ারী জানান, আহ্বায়ক পদ বাদে কোনো পদেই এখনো নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। একইসাথে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাঠামো দেখা হচ্ছে।

“আমরা বিশ্বের যে কাঠামো আছে, সেগুলো দেখে স্ট্রাকচার রেডি করছি। তবে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি” বলেন মি. পাটওয়ারী।

শিবিরের সাথে বিরোধ মেটাতে সমঝোতা ?

পদ নিয়ে দলে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণেই এই নতুন পদের কথা ভাবা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন নাকচ করে দেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

বরং যারা পদ নিয়ে দর কষাকষির চেষ্টা করছে, তারাই এ বিষয়টিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন মি. পাটওয়ারী।

শিবির নেতাদের সাথে সমঝোতা নয় বরং সবার কাছে নতুন দলটিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার আলোচনার ক্ষেত্রে নতুন পদের বিষয়টি এসেছে বলে জানান তিনি।

মি. পাটওয়ারী বলেন, “ওদের জন্যই কোনো পোস্ট তৈরি করা হচ্ছে, এরকম না বিষয়টি। এটা অনেকে প্রচার করতেছে, কথা তোলার জন্য চেষ্টা করছে বা দর-কষাকষি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা ওইটাতে সাড়া দেই নাই। আমরা ইয়াং জেনারেশনকে ঐক্যবদ্ধ করে কীভাবে শক্তিশালী একটা দল তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছি।”

মি. পাটওয়ারী এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে সংস্কারপন্থী শিবির নেতাদের নতুন দলে যুক্ত করার বিষয়টি ‘বিবেচনায়’ রেখেছে নাগরিক কমিটি।

এর ব্যাখ্যায় মি. পাটওয়ারী বলেন, “আশির দশক থেকে বাংলাদেশে ছাত্রশিবিরের একটা বড় অংশ যারা রাজনীতি সচেতন কিন্তু জামায়াতে অংশগ্রহণ করে নাই দলটির ৭১ এর ভূমিকার কারণে। এই সেকশনটা যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে হয়তো দেশপ্রেম রয়েছে, ভালো চিন্তা রয়েছে।”

“এবং তারা ওই চিন্তার কারণেই নিজেদের জামায়াতে যুক্ত করতে পারতেছে না। ফলে আমরা এখানে মনে করছি, দেশ গঠনে তরুণ প্রজন্মেরএকটা বড় অংশকে যদি কাজে লাগানো যায়, এটা দেশের জন্যই ভালো হবে। ওই জায়গা থেকেই আমরা এটা বিবেচনায় নিচ্ছি,” বলেন মি. পাটওয়ারী।

তিনি বলেন, “দলের সিনিয়র পোস্টগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী, সংখ্যালঘু, জ্যেষ্ঠ নাগরিক- সবাইকে রাখার বিষয়টি রয়েছে। এই সেকশনের মধ্যে শিবিরকে রাখতে হবে এরকম করে আমরা চিন্তা করি নাই। কারণ আমরা শিবির ট্যাগটাই তুলে দিতে চাচ্ছি। কারণ তিনি যখন দলে যাবেন, তখন তো আর শিবির থাকবেন না।”

“ফলে আমরা জেনারেশন আকারে চিন্তা করতেছি, নট দ্যাট একটা সেকশন। এই যে বাইনারি জিনিস এটা থেকে বের হতে চাচ্ছিলাম,” বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

আত্মপ্রকাশ কবে, কোথায়?

আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলটির জন্য কয়েকটি নামের প্রস্তাবনা বিবেচনায় থাকলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ মাসেই দলটি আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সর্বোচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে ২৬শে ফেব্রুয়ারি।

তিনি বলেন, “আত্মপ্রকাশের সময় আমরা এ মাসের মধ্যেই নির্ধারণ করেছিলাম। প্রাথমিক আলোচনায় ২৬ তারিখ রয়েছে। তবে, ২৪, ২৭ এবং ২৮ তারিখও আলোচনায় আসছে। আমরা এ মাসের মধ্যেই দলটা ঘোষণা করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।”

তবে, আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নিলে কবে নাগাদ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন, এমন প্রশ্নে মি. পাটওয়ারী জানান, এ বিষয়ে মি. ইসলাম এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।

জাতীয় নাগরিক কমিটি সবকিছু গুছিয়ে চূড়ান্ত করার পরই এ বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানে নতুন দলটি আত্মপ্রকাশ করতে পারে, এমন বিবেচনায় দুইটি স্থান এগিয়ে রয়েছে।

গণ অভ্যুত্থানের এক দফার ঘোষণা শহীদ মিনার থেকে আসায় ওই স্থান বিবেচনায় রয়েছে।

এছাড়া মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচই অগাস্ট পালিয়ে যাওয়ার দিন মানুষের ঢল নেমেছিল, ওই স্থানও অগ্রাধিকারে রয়েছে।

দলের অর্গানোগ্রাম, ঘোষণাপত্র, সময় সব কিছু যখন চূড়ান্ত হবে, তখন সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ