ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :এবারের বিপিএলে পুরো আসরজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দুর্বার রাজশাহী। একদম শুরু থেকেই তাদের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। যত সময় গড়িয়েছে, পদ্মাপাড়ের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি নিয়ে তত বেশি বিতর্কের দাবানল ছড়িয়েছে।
ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধে ব্যর্থতা, প্রাকটিস বর্জন, বিদেশি ক্রিকেটারদের ম্যাচ বয়কট, খেলোয়াড়দের দেওয়া চেক বাউন্স থেকে শুরু করে সবই দেখা গেছে এই সময়ের মাঝে। আর সবশেষে দেখা গেল বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশে ফেরার অনিশ্চয়তার চিত্র।
বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত নামটাও দলটির মালিক শফিকুর রহমান। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা এমডি পদের চেয়ে এখন তার বড় পরিচয় তিনি দুর্বার রাজশাহীর মালিক।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক শফিকুর রহমানকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাতে দোষ স্বীকার করে নির্ধারিত ডেডলাইনে ক্রিকেটারদের সকল পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ২৫ শতাংশ হারে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজশাহী ক্রিকেটারদের সকল পাওনা বুঝিয়ে দেবে বলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নূর আলম স্বাক্ষরিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ৩, ৭ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ২৫ শতাংশ করে প্রতি কিস্তি পারিশ্রমিক প্রদান করবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। প্রতি কিস্তিতে খেলোয়াড় ছাড়াও দল সংশ্লিষ্ট সকলেই অর্থ বুঝে পাবেন বলেও নিশ্চয়তা দিয়েছেন শফিক। অন্যথায়, তার বিরুদ্ধে যে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে মর্মে জানিয়েছেন তিনি। বিপিএলে নানা অনিয়মের আদ্যোপান্ত অনুসন্ধানে কাজ করছে একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিটিতে।
চলতি আসরে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে রাজশাহী। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক শফিকুর রহমানও তাই চলে এসেছেন লাইমলাইটে। এর আগে সমালোচিত ঢাকা ডমিনেটর্সও ছিল এই একই গ্রুপের অধীনে। তবে কে এই শফিকুর রহমান? বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের বাইরেও তার রয়েছে আরও একটি পরিচয়। মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তিনি। ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন শফিকুর রহমান। এ ছাড়া উত্তরার হাজী ক্যাম্প, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মিলন অডিটোরিয়াম, বিজয় স্মরণীর ফোয়ারাসহ বেশকিছু স্থাপনার রেকর্ড রয়েছে এই কোম্পানির। ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ রিহাবের (রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) এর নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান।
এখানেই শেষ নয়, বিতর্ক আছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মূল মালিকানা নিয়েও। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজশাহীর মালিকানা অন্তত তিন জনের কাছে ছিল। সূত্রে বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতে কবির নেওয়াজ নামের বিসিবির এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার ব্যবসায়ী বন্ধু রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজিটি কিনে নেন। টিম এন্ট্রি ফির দেড় কোটি টাকার অর্ধেক তিনিই পরিশোধ করেন। এরপর মালিকানায় আসেন তারই ভাগ্নে রাজশাহীর ক্রীড়া সংগঠক ইমতিয়াজ জামিল দীপন ও সিসিডিএম কো-অর্ডিনেটর আমিন খান। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য অনুযায়ী, চল্লিশ লাখ টাকা দিয়ে মালিকানার অংশ হন তারা।
এরপর ভ্যালেন্টাইন গ্রুপকে আনেন আমিন খান। তারপরই বিসিবির কাছে পূর্ণ মালিকানা দাবি করেন ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের এমডি। ড্রাফটের আগের রাতে রাজশাহীর একক মালিক হিসেবেই আবির্ভূত হয় ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ। এরপর বিপিএলে এবারের পুরো আসরজুড়েই বিতর্কের জন্ম দেয় দুর্বার রাজশাহী। পারিশ্রমিক নিয়ে একের পর এক বিতর্ক শুরু হয়।
পারিশ্রমিক বিতর্কে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি রাজশাহীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। এরপর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গেও বৈঠক হয় তাদের। আর সেখানে ফেব্রুয়ারির ২ তারিখের মধ্যে সব ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। তবে তারিখ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়নি।
আর এই কারণে আজ সোমবার ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক শফিকুর রহমানকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।