ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :জনরোষ, গুজব, সন্দেহ, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, অসতর্কতা, অতিউৎসাহ যে কারণেই হোক, কারো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। মহান আল্লাহর নবি হজরত মুসার (আ.) আগমন প্রতিহতকরণে ফেরাউন কর্তৃক বনি ইসরাইলের ছেলেশিশুদের হত্যার নির্দেশনা, নির্বিচার গণহত্যার প্রকাশ্য ঘোষণা মাত্র। পবিত্র কুরআনে আছে…. ফেরাউন বলল, আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব… (সুরা আরাফ, আয়াত: ১২৭)।’ তাদের হত্যার কারণে ফেরাউনের পরিণতি হলো ভয়াবহ। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং ওরা মনে করেছিল যে, ওরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না। অতএব আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম… (সুরা কাসাস, আয়াত: ৩৯, ৪০)।’
ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায় হত্যাকাণ্ড মহাপাপ। বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই কারো গায়ে হাত তোলা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শামিল এবং অন্যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো নরহত্যা কিংবা পৃথিবী বা সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে বিচারের রায় ছাড়া যদি কেউ কোনো মানুষকে হত্যা করে, তা হলে সে যেন সমস্ত মানুষকে (মানবতাকে) হত্যা করেছে (সুরা: মায়েদা, আয়াত: ৩২)।’ মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘যে লোক কোনো মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম… (সুরা: নিসা, আয়াত: ৯৩)।’
মহান আল্লাহর আদেশ ও প্রিয় নবির (স.) আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন হলো সামাজিক শান্তি, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা। প্রিয় নবি (স.) বিদায় হজে বলেন, ‘তোমাদের এই মাস, এই শহর, এই দিন যেমন পবিত্র; নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের জীবন-সম্পদ, সম্মান, সম্ভ্রম তোমাদের পরস্পরের কাছে তেমনি পবিত্র (বুখারি)।’ গণপিটুনি সম্পর্কে প্রিয় নবি (স.) বলেন, ‘আসমান-জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সবাই মিলিত হয়ে যদি একজন মুমিনকে মেরে ফেলার কাজে শরিক হয়, তাহলে আল্লাহ তাদের সবাইকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন
তিরমিজি)।’
প্রিয় নবি (স.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে প্রথমেই যে বিষয়ে ফয়সালা হবে;
তা হলো রক্তপাত বা হত্যাকাণ্ড (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।’
হজরত ওমর (রা.) তার শাসনামলে গণপিটুনির অপরাধে ইয়েমেনবাসী সাত জন অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে বলেছিলেন, ‘যদি ইয়েমেনের রাজধানী ‘সানাআ’র সব মানুষ মিলে হত্যা করত তবে আমি সানাআর সব মানুষের ওপর আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতাম (মুআত্তা ইমাম মালেক)।’
গণপিটুনির বিরুদ্ধে সাহাবা কিরাম, বিভিন্ন মাজহাবের ইমাম, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিনের সর্বসম্মত ঐকমত্য হলো- যদি একসঙ্গে সারা পৃথিবীর হাজারো মানুষ একত্র হয়ে কোনো একজন নিরপরাধ মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে, তাহলে তাদের সবাই অপরাধী এবং এ অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।