ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :সমতল থেকে ৫ শত ফুট উপরে মেঘালয় সীমান্ত ঘেষাঁ বারেকটিলায় বসবাস করছে তিন হাজার পরিবার। শিক্ষা প্রতি সচেতনতা বাড়লেও উচু টিলা বেড়ে দূরের স্কুলে যাওয়াও অনেক কঠিন।
প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক ঝড়-ঝঞ্ঝাট ও পারিবারিক অসচ্ছলতার সাথে যুদ্ধ করেছে তারা। এসব পরিবার গুলোতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সেই সব পরিবারের ঝড়ে পড়া শিশুদের মধ্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল। বাঙালি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের শতাধিক কোমল মতি শিশুদের মনে স্কুলটি আলোর বাতি ঘরের মতই আলোর ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে গত দুই বছর ধরে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ বিদ্যালয়টি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা বারেকটিলায় বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থ্যায়নে পরিচালিত বিদ্যালয়টির অবস্থান।
সরজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখাগেছে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও সকালে স্কুল থেকে দেয়া বই,খাতা,ব্যাগ আর পোষাক পরেই স্কুলে এসে নিজ নিজ শ্রেণী কক্ষে বসে আছে শিক্ষার্থীরা। আর আগত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকগন।
এসময় প্রথম শ্রেণীতে পড়ুয়া মাসকুরা বেগম(৭), সাইয়িদ মিয়া(৭) ও মোহাম্মদ সুলতান (৫)সহ অনেকের সাথে কথা বললে তারা সব কিছু ভাল ভাবে বুঝিয়ে বলতে না পারলেও তারা জানায়, তাদের পিতা যাদুকাটা নদীতে কাজ করে সংসার চলায়। টিলায় স্কুল না থাকায় ও অভাবের কারনে লেখা পড়া বন্ধ ছিল। স্কুলটি চালু হওয়ার পর থেকে বিনা মূল্যে দেয়া বই,খাতা,কলম,স্কুল ব্যাগ ও স্কুলের পোশাক দিয়েছে,তাদের বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে পড়ে ভাল লাগে বলেও জানায়।
কথা হয় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া হুইসান দিও(৮), আক্তার হোসেন (৭),নাহিদ মিয়া(৮)সহ শিক্ষার্থীরা জানায়,অভাবের সংসারের কারনে স্কুলে যাওয়া বন্ধের সময় লেখাপড়া করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ছিল সেই সময় বসুন্ধরা গ্রুপের অথ্যায়নে পরিচালিত শুভসংঘের স্কুলটি চালু করায় লেখা পড়া করার সুযোগ পেয়েছি। আর বিনা মূল্যে শিক্ষা উপকরণ পাওয়া সংসারে অভাব থাকলেও তাদের লেখা পড়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারা আরও জানায় স্কুলটি চালু না হলে স্কুলেই আসা হত না। তাদের চাওয়া স্কুলের সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,একটি সময় গেছে বারেকটিলার আশপাশে দুই কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল না থাকায় লেখা পড়া করার কোনো সুযোগ ছিল না। স্কুলটি চালু হওয়ায় যারা একটি সময় স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সেই সব শিশুদের অভিভবকগন তাদের সন্তানদের সকাল হলেই এখন বই খাতা কলম দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে আর মনের আনন্দে শিশুরাও চলে আসছে স্কুলে দল বেঁধে। তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লেখাপড়া করছে অনেক সাচ্ছন্দ্যে হাঁসি মুখে। আর কর্মরত শিক্ষকরা খুব যত্ন সহকারে শিশু শ্রেণী,প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন।
টিলায় বসবসাকারী এরশাদ আলী জানায়, ১৯৮৮সালে বারেকটিলায় গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন(জিবিসি)একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে। ২০বছর পর আর্থিক সংকটে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় জিবিসি। পরববর্তী সময়ে বেসরকারি সংস্থা সানক্রেড বিদ্যালয়টি পরিচালনা শুরু করে। ২০১৮সালে সানক্রেড ও বিদ্যালয়টি পরিচালনা থেকে সরে যায়। শিশুদের পড়ালেখার মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। বেড়ে যায় ঝরে পড়ার হার। এর পর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আবারও নতুন ভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থ্যায়নে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল নামে চালু হয়। আমাদের দাবি স্কুলটিতে যেন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা যায় সেই দিকে বসুন্ধরা গ্রুপ সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নজর দেন।
উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান,বারেকটিলা একটি দুর্গম অঞ্চল। এখানে ৫ শত বসত বাড়িতে প্রায় ৩ হাজার লোক বাস করে। দুই হাজার ৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় কোনো স্কুল না থাকায় বসুন্ধরা গ্রুপ স্কুল চালানোর কারনে এই এলাকার শিশুরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। আশা করি বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় যেন পাশে থাকে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মর্জিনা আক্তার ও প্রমিতা নখরেখ জানান,এলাকার সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও আদিবাসী শিশুরা লেখা পড়া করার সুযোগ পাচ্ছে বিদ্যালয়টি চালু করায়। আরও সুযোগ সুবিধা পেলে শিশুদের মধ্যে লেখা পড়ার আগ্রহ বাড়বে। বর্তমানে ১২০ জন ছেলে মেয়ে লেখা পড়া করছে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলটিতে। আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের ভাল ভাবে পড়া শুনা করাতে পাঠদানে মনোযোগী হতে।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রত্যাশা বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে পরিচালিত বসুন্ধরা শুভসংঘ বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিন্মবিত্ত পরিবারের শিশুরা লেখা-পড়ার সুযোগ পেয়ে উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত হবে।
শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান জানান,ব সুন্ধরা গ্রুপের শুভসংঘ দেশে সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চল যেখানে স্কুল নেই সেখানেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায়। বারেকটিলার আশেপাশে লেখা পড়া করার জন্য কোনো স্কুল না থাকায় বাংঙ্গালী ও আদিবাসী সন্তানসহ অনেক সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ ছিল। সেই খবরটি জেনে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুল শুরু করেছি,বর্তমানে ১২০ জন শিশু এখন লেখা পড়া করছে,এটাই আমাদের স্বার্থকতা। বিদ্যালয়টি নিয়ে আমারা আরও ভাল কিছু করার চেষ্টা করেছি।