ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :সোমবার (৪ আগস্ট) বিকালে সরকার পতনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সিলেটে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ছাত্র- জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এক পর্যায়ে সিলেটের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অফিস, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থকদের বাসা বাড়িতে হামলা করা হয়।
সরকারি স্থাপনার মধ্যে সিলেট সার্কিট হাউস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি দপ্তরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
যদিও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিলেট জামায়াতের পক্ষ থেকে এসব সহিংসতা, হানাহানি, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানারো হয়।
সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত এসপি অফিস ভবনের প্রতিটি কক্ষ থেকে আগুনের ধোঁয়া উঠছিল।
কার্যালয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখা যায়নি। সব ফাইল কাগজপত্র পুড়ে ছাই। আঙ্গিনায় থাকা কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অফিসটির সামনে রাস্তায় ছিল শ শ উৎসুক জনতার ভীড়।
দুপুর ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে ধোঁয়ায় পানি দিতে শুরু করে।
এর আগে গতকাল শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকালে এসপি অফিসে আগুন দেয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন হামলাও ভাঙচুর চালান। এছাড়া কতোয়ালী থানা, বন্দরবাজার, লামাবাজার ও সোবহানিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, জালালাবাদ থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এ হামলা চালানো হয়।
জানা যায়, টিলাগড়স্থ সেখানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনের হাফিজ কমপ্লেক্সেও হামলা ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। নগরীর পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, গোপালটিলা এলাকায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রণজিত চন্দ্র সরকার এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়া, নগরীর আম্বরখানা এলাকায় মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, নগরীর শেখঘাটে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের বাসায়ও হামলা ভাঙচুর চালানো হয়।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ইসলামের মেজরটিলাস্থ বাসায়ও হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। হামলা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বাসায়ও।
এছাড়া নগরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাহাতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। বিকাল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয় । রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লুটপাটকারীরা চলে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নগরীর চৌহাট্টায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের মালিকানাধীন ইউনিক ফার্মেসীতেও লুটপাট হয়েছে। সিটি কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর, কাউন্সিলর রুহেল, অনেকের বাসায় হামলা চালানো হয়। নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ আওয়ামী লীগ নেতা ও সিলেট জেলার অতিরিক্তি পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলামের বাসায় দুই দফা হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ যুবকরা।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ তাঁর বাসায় ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করেন। নগরীতে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি