ইউকে শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
হেডলাইন

বিভিন্ন আদালত থেকে ৭৮ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদসহ শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তাদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অসংখ্য শিক্ষক, অভিভাবক ও আইনজীবী এতে যোগ দেন। এ ছাড়া অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এতে অংশ নেয়। গণমিছিলে খুলনা, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বাধার মুখে পড়ে; অনেক স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গত রাতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সংঘর্ষে খুলনায় এক পুলিশ কনস্টেবল এবং হবিগঞ্জে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।

এদিকে গতকাল রাতে নতুন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-নাগরিকদের

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও কাল রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আপামর জনসাধারণকে অলিতে-গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, মো. মাহিন সরকার, আব্দুল হান্নান মাসউদ, সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদসহ বেশ কয়েকজন তাদের ফেসবুক পোস্টে নতুন কর্মসূচির ডাক দেন। তারা ফেসবুক লাইভে এসেও এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন এবং সারাদেশের আপামর জনসাধারণকে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।

ব্যুরোপ্রধান, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে সুমন ঘরামি নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত এবং অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক আহত হন।

গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই পক্ষের সংঘর্ষে নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র শফিক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আফরান, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ফাইয়াজ, নর্থ ওয়েস্ট বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ, সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র মুগ্ধ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইউসুফ, স্কুলছাত্র জাহিদুল (১৫), মাদ্রাসাছাত্র সৌরভ (১৩), রনির (২০), নীরব (২১) এবং পুলিশ সদস্য সোহাগ, রাজু আহমেদ ও মাজহারুল ইসলাম রয়েছেন। আহতদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একজন ছাত্রী, একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল সুমনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। নিহত সুমন খুলনা পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে মাইকে ঘোষণা করেন- খুবির বেশকিছু শিক্ষার্থী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় আটকা পড়েছেন। আপনারা তাদের উদ্ধার করে খুবি ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিন। জানা গেছে, খুবির ৬ ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে খুলনা ক্যাম্পাসে আটকা পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের সহপাঠীরা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য সহযোগিতা চান।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। নিহত মোস্তাক মিয়া (৩২) পিডিবির এক ঠিকাদারের কর্মী বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ফোরম্যান নূর বখত। তিনি সিলেটের টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা। সংঘর্ষ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ও বিএনপির অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া হবিগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসার সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কার ও ৯টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল আন্দোলনকারীদের ঘোষিত প্রার্থনা ও গণমিছিলের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর খ- খ- মিছিল নিয়ে টাউন হলের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় তারা পালিয়ে যান। এ সময় টাউন হল রোডে আওয়ামী লীগের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রায়ট কার নিয়ে যাওয়ার সময় টাউন মসজিদের সামনে প্রধান সড়কের দুই দিক থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে পুলিশ। তখন দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতাধিক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।

পিডিবির ঠিকাদারের কর্মী মোস্তাক মিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানি না। হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালের আরএমও মঈন উদ্দিন চৌধুরী জানান, মোস্তাককে আহত অবস্থায় আনা হয়। তার ডান হাতের বগলের পেছনে কিছু অংশের মাংস উড়ে গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি গুলির আঘাত। ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে, বলেন এই চিকিৎসক। পিডিবির মেইন লাইন কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ফোরম্যান নূর বখত বলেন, তারা শহরতলির ভাঙ্গাপুল এলাকায় থাকেন। মোস্তাক জুতা কেনার জন্য শহরে যান। দীর্ঘসময় তিনি বাসায় না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, হবিগঞ্জ আধুনিক হাসাপাতালে একজন মারা গেছেন। পরে সেখানে গিয়ে তারা মোস্তাকের লাশ শনাক্ত করেন।

নরসিংদী : নরসিংদীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তার; শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার গণমিছিলে বাধা দেয় পুলিশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।

গতকাল বিকাল ৩টায় নরসিংদী সদর প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, দুপুরের আগে থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নরসিংদী উপজেলা মোড় এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। পৌনে তিনটা নাগাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপজেলা মোড় এলাকায় প্রবেশ করলে প্রথমেই পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেখানে একে একে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও বাধা দেন। এ সময় সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের অনেকেই আহত হন এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে।

নরসিংদী মডেল থানার ওসি তানভীর গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি পুরোপুরি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল কেএম শহিদুল ইসলাম সোহাগের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মাধবদীর সাইডে আছি, সংঘর্ষের কোনো খবর আমরা পাইনি।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গতকাল যুবলীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা যায়। গতকাল দুপুর ২টার দিকে তমিজ মার্কেট এলাকায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের চকবাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ্ উদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাজার সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তারা জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের মিছিল শেষেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাজার ব্রিজ থেকে মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি চকবাজার মসজিদের সামনে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশের বাধা ভেঙে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনার পর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

অরিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারাই উসকানি দিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের গুরুতপূর্র্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ