ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :তিন মাস ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কয়েক দফা বন্যায় অনেকটা বিধ্বস্ত। এরই মধ্যে কোটা আন্দোলন, কারফিউ এসবে জর্জরিত সিলেটবাসীর জীবনযাত্রা। গত এক সপ্তাহ ধরে থমকে আছে জনজীবন।
তবে এত কিছুর পরও নিজস্ব ছন্দে ফেরার চেষ্টায় আছেন সিলেটবাসী। তিন মাস ধরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সিলেট নগরী।
ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কোটা আন্দোলনে সিলেটের ক্ষয়ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মতে, পর্যটন খাতেই অন্তত পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতেই সিলেটে কৃষি ও ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর রেশ কেটে ওঠার আগেই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সিলেটের ব্যবসা বাণিজ্যকে থমকে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার। সিলেটের ১৩ বর্ডার দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। শুধু পর্যটনেই পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট চেম্বারের পরিচালক শান্ত দেব বলেন, বন্যার পর আন্দোলনে পর্যটকশূন্য হয়ে গেছে সিলেট। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সারা বছরই সিলেটে পর্যটকরা আসেন কিন্তু এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সরকারি প্রণোদনা ছাড়া হোটেলসহ সিলেটের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান রিপন বলেন, সিলেট নগরে সাড়ে সাত হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত, অথচ এ পরিস্থিতিতেও ভ্যাট অফিস থেকে ফোনে ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। কর্মচারীর বেতন, নানা বিলের পরও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আছেন ঋণের চাপে। তাদের মাথার ওপর কিস্তির খড়্গ। আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৮-৯ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে গত মে মাস থেকে সিলেটে শুরু হয় বন্যা। অতি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের কারণে তিন দফা বন্যায় স্থবির হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি খাত। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় সিলেটের ব্যবসায় সফল পর্যটন খাতও। যার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত সিলেটের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ব্যবসায়।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করার আগেই শুরু হয় দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন। থেমে যায় গাড়ির চাকা, অফিস-আদালত, কর্পোরেট জীবন। ফের মুখ থুবড়ে পড়ে সিলেটের বিপর্যস্ত পর্যটন খাত।
গত কয়েক দিনের আতঙ্কের মধ্যে গত বুধবার থেকে ৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয় অফিস-আদালত। সেই হিসেবে প্রথম কর্মদিবসে অস্বস্তি কাটিয়ে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক না হলেও তুলনামূলক গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় কর্মদিবস ছিল প্রায় স্বাভাবিক। গতানুগতিক ছন্দে ফেরার চেষ্টায় দ্বিতীয় দিনে অন্যদিনের তুলনায় বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায় নগরীর রাস্তা-ঘাটে। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট খুলে রাখেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পেরেছেন। তবে আন্দোলনকারীদের আলটিমেটাম গত বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ায় আবারো সহিংসতার ভয়ে ছিলেন অনেকে। ভয় নিয়েও অনেকে পেটের দায়ে আবার অনেকে ক্ষতি সামলাতে কাজ-কর্মে ফিরে যাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গত বুধবার থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গার দূরপাল্লার যান ছেড়ে গেছে সিলেট বাস টার্মিনাল। তবে আগের মতো যাত্রী দেখা যায়নি।
সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল হোসেন বলেন, সংকট চলাকালীন নিরাপত্তার স্বার্থে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি। এখন অনেকটা স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলছে। তবে যাত্রী সংকট রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে সর্বদা প্রস্তুত।