ইউকে শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
হেডলাইন

প্রাইভেটকারে ধাক্কা দিয়ে পুলিশের ফাঁদে আটকা চিনিভর্তি ট্রাক

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দিয়ে পুলিশের ফাঁদে ফেঁসে গেল চোরাই চিনিভর্তি একটি ট্রাক। পরে অভিযানে থাকা পুলিশ পরিত্যাক্ত অবস্থায় ১১৭ বস্তা ভারতীয় চিনি বোঝাই ট্রাকটি জব্ধ করে। তবে, প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেওয়ার ক্ষতিপূরণের টাকা আনতে গিয়ে পালিয়ে যায় ট্রাক চালকসহ ৩ চোরাচালানী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেটকারের মালিকের পক্ষে ঘটনাস্থলে আসা লোকজনএমন তথ্য জানিয়েছেন । শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে এই ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, শনিবার ভোররাত পৌনে ২টার দিকে সিলেট নগরের আম্বরখানা পয়েন্টে মসজিদের সামনে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। এমন সময় বিমানবন্দর সড়ক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার পুলিশের সিগন্যাল পেয়ে চেকপোস্টে থামে। প্রাইভেটকারটি রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক।েএতে ক্ষুব্ধ হয়ে কারের চালকের আসনে থাকা সাবেক কাউন্সিল সাজ্জাদুর রহমান সুজ্জাদের ছেলে সুমনসহ কয়েকজন ট্রাকটির চালকের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেট স্টেশনক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহিতুল বারী, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহানসহ আরও কয়েকজন। তাঁরাও ট্রাকচালককে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার চাপ দেন। মোবাইল ফোন করে বিষয়টি জানানো হয় সিলেট মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে। এসময় চেকপেস্টে থাকা পুলিশ ট্রাকে তল্লাশি শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্ষতিপূরণের টাকা আনতে গিয়ে পালিয়ে যান ট্রাকচালকসহ ৩ জন।

ঘটনাস্থলে থাকা সিলেট ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহিতুল বারী গণমাধ্যমকে জানান, রাতে সিলেট ক্লাবের একটি অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ক্লাব সদস্য সুমন তার প্রাইভেটকার নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে পুলিশের সিগন্যাল পেয়ে তিনি রাস্তার পাশে কার থামান। এসময় বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে আস একটি ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়ানো সুমনের কারকে ধাক্কা দেয়। প্রাইভেটকারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি তাকে সুমন জানালে তিনিও ঘটনাস্থলে আসেন। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহানসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। তারা সবাই ট্রাকচালকে কারের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে আসতে চাপ দেন। বিষয়টি সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবার আলী শেখকে জানানো হয়। এর পর পরই পুলিশ ট্রাকে তল্লাশি চালায়। এসময় ট্রাকভর্তি চোরাই চিনির বস্তা মেলে।

অভিযানে ট্রাক ভর্তি ভারতীয় চিনির চালান আটক করার বিষয়টি গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। অপরদিকে, চোরাই চিনির চালানটি ধরিয়ে দিয়েছেন, এমন দাবি করে গণমাধ্যমে ফলাও হয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরব। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে নগরে কৌতুহল বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে শনিবার (২৯ জুন) দিনগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানাধীন আম্বরখানা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সুজিত চক্রবর্তী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এদিন ভোররাত ৩টার দিকে আমরা আম্বরখানা মসজিদের চেকপোস্ট বসাই। এসময় এয়ারপোর্টের দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেটকারকে সিগন্যাল দেই। কারটির মালিক সিলেট স্টেশন ক্লাবের সদস্য শম্ভু বোস। প্রাইভেটকারটি তল্লাসীকালে পেছন দিক থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে প্রাইভেট কারের মালিক শম্ভু বোস ও চালকসহ ৩ জনের সঙ্গে বানানুবাদ হয়। এমন সময় কারটির মালিক মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতিকে ফোন দেন। এ অবস্থায় ট্রাকটি তল্লাসী চালাতে গেলে চালকসহ ৩ জন সটকে পড়েন। পরে ওই গাড়ি থেকে ১১৭ বস্তা চিনি জব্দ করা হয়। এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভও ঘটনাস্থলে আসেন। পরে প্রাইভেট কারটি মেরামতের জন্য সিলেট ক্লাবের সভাপতি মহিতুল বারীর জিম্মায় দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্তদের কাউকে আটক করা যায়নি। তবে ট্রাকটির মালিকানা বের করার জন্য বিআরটিএ সিলেট কার্যালয়ে তল্লাসী চালানোর মাধ্যমে গাড়ির প্রকৃত মালিক ও চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করা হবে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, জানান আম্বরখানা ফাঁড়ির ইনচার্জ।

এদিকে, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) শনিবার দিনগত রাত ১০টা ১৭ মিনিটে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, এদিন ভোররাত ২টা ৫০ মিনিটে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ি পুলিশ কর্তৃক ১টি ট্রাকে ১১৭ বস্তায় ৫ হাজার ৮৫০ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য ৭ লাখ ২ হাজার টাকা। অভিযানে নেতৃত্ব দেন আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সুজিত চক্রবর্তী।

কোম্পানীগঞ্জ থেকে সিলেটগামী রোডে ভারত হতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে চিনি নিয়ে একটি ট্রাক প্রবেশ করছে।ট্রাকটি গোয়াইনঘাট হতে সিলেট শহরের দিকে আসছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আম্বরখানা পয়েন্ট সংলগ্ন জামে মসজিদের সামনে চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়। এসময় একটি ট্রাক পুলিশের চেকপোষ্ট দেখে থামিয়ে চালকসহ অজ্ঞাত ২/৩ জন আসামী নেমে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর তল্লাশী করে ট্রাক হতে ১১৭ বস্তা ভারতীয় চিনি প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে জব্দ করা হয়। ট্রাকের রেজিঃ নং-সিলেট-ড-১১-১৪২৩, চেসিস ও ইঞ্জিন নং দৃশ্যমান অবস্থায় পাওয়া যায় নাই। এ অবস্থায় জব্দ তালিকা করে পুলিশ। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার মামলা (নং-২৪(৪)২০২৪) রুজু করা হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ