ইউকে রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হেডলাইন

সিলেটে ফের ভারী বৃষ্টির পূর্ভাবাস, স্তব্ধ কুশিয়ারার পানি

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :এখনো বন্যা কবলিত সিলেট। পানিবন্দি মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। সুরমার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যার পানি নামলেও কুশিয়ারা নদীর পানি যেনো স্তব্ধ হয়ে আছে। গত তিনদিন বৃষ্টি না হলেও মাত্র এক সেন্টিমিটার করে পানি কমেছে কুশিয়ারায়। এ অবস্থায় সোমবার সকালের বৃষ্টিতে সিলেটজুড়ে আবারো আতংক দেখা দেয়।

এরমধ্যেও ফের সিলেটের জন্য দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামি ২৮ জুন থেকে সিলেটে আবার ভারী বর্ষণের পূর্ভাবাস দেওয়া হয়েছে।

বন্যার মধ্যে এমন পূর্ভাবাসে আরও ভীতি ছড়াচ্ছে সিলেটে মানুষের মনে। ভারী বর্ষণ হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে নগরজুড়েও ফের জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

সিলেটে গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়া কিংবা সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও প্রতি ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে পানি কমতে শুরু করেছিল। সুরমা, কুশিয়ারা নদীসহ অন্যান্য নদীর সবকটি পয়েন্টেই পানি কমতে থাকে।

তিন দিনে ৪০ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমে। কিন্তু সোমবার সকালে সিলেটে বৃষ্টিপাতের কারণে থমকে গেছে বিভিন্ন পয়েন্টের পানি প্রবাহ। কোথাও পানি কমা অপরিবর্তিত রয়েছে, আবারও কোথাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সিলেটের আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইনের দেওয়া তথ্যমতে, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর আগের দিন রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২ মিলিমিটার।

তবে ২৮ জুন থেকে সিলেটে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারী বর্ষণে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এজন্য জেলা প্রশাসন থেকেও আগাম সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যমতে, এখনও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সকালে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার, দুপুরে ১২টায় ও বিকেল ৩টায় ১৯ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর উপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল।

তবে সুরমা সিলেট পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টায় সুরমার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহমান ছিল। এদিন সকালে সিলেট পয়েন্টে সুরমার পানি ১০ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান ছিল। সন্ধ্যা ৬টায় আরো ৫ পয়েন্ট কমে ১০ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি সকালে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। বিকাল ৩টায় আরো ৩ পয়েন্ট বেড়ে ‍বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর সন্ধ্যা ৬টায় ১ এক পয়েন্ট কমে ৩৬ সেন্টিমিটারে গিয়ে দাঁড়ায়।

তবে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে সন্ধ্যা ৬টায় ৯৭ সেন্টিমিটারে এসে দাঁড়ায়।

এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বিকাল ৩টায় ৪ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৩ সেন্টিমিটারে নেমে আসে।

এদিকে, রোববার সারা দিন কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। একদিন পর সোমবার মাত্র ২ সেন্টিমিটার কমে আছে। ফলে ওই উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর এখনো পানিতে তলিয়ে আছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে এক লাখ ১৪ হাজার ২৮৬ জনের জনসংখ্যার মধ্যে ১৮ হাজার ৭৫৬ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্রের ১৩টিতে এখনো ১ হাজার ৮৭২ জন মানুষ আশ্রয়ে রয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের হালনাগাদ তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের ২টি ৫টি পৌরসভাসহ ১৩টি উপজেলার ১১০টি ইউনিয়নের এক হাজার ৩৫৫টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। মহানগরসহ জেলার ৪১ লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ জনের জনসংখ্যার মধ্যে বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন ৭ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬ জন। আর মহানগরসহ জেলার ৭৩৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রের ২৫৮টিতে ১৩ হাজার ১৫৪ জন অবস্থান করছেন।

বন্যা আক্রান্তদের অনেকে জানান, বন্যার পানি কমে যাওয়াতে বাড়ি ঘরে ফিরলেও ভারি বর্ষণ হলে আবারো আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে আসতে হবে। কিন্তু গবাদি পশু ও মালামাল টেনে নিয়ে আসা যাওয়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেই সঙ্গে বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর নগরের প্লাবিত এলাকাগুলোর বাসা-বাড়িতে সেফটি ট্যাঙ্কিতে ময়লা পানি প্রবেশ করায় খাবার পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করলেও তা অপ্রতুল বলেও জানান বন্যা আক্রান্তরা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com