ইউকে রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হেডলাইন

সিলেটে গ্রামাঞ্চলে কমলেও নগরে বাড়ছে পানি

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি কিছুটা কমেছে। ঢল থামায় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, তবে গ্রামাঞ্চলের পানি কমলেও নগরে পানি বাড়ছে।

ঢলের পানি সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো থেকে নগরের দিকে আসায় নগরের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গ্রামাঞ্চলের পানি কমতে শুরু করায় দৃশ্যত হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষত বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কৃষিতেও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে এ বন্যা।

উজান থেকে আসা ঢলের কারণে মঙ্গলবার থেকে সিলেটে পানি বাড়তে শুরু করে। বুধবার এক রাতেই তলিয়ে যায় জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট এ পাঁচ উপজেলা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিয়ানীবাজার এবং জকিগঞ্জ উপজেলায়ও পানিতে প্লাবিত হয় বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার সকাল থেকে ডুবতে শুরু করে নগরের অনেক এলাকা। আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত নগরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নগরের অন্তত ১৫টি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে সাতটি আক্রান্ত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে সাত উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন। বন্যা মোকাবিলায় এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন চার হাজার ৮০২ জন।

এদিকে নগরের পানি বাড়ায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ‘কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ও পার্শ্ববর্তী একটি পাঁচ তলা খালি ভবন এবং একটি কলোনিতে শুক্রবার বিকেলে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি করপোরেশন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৪০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়াও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, নগরে বন্যায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার পরিবার। নগরের ১৫, ২২ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১৫টি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, ‘বন্যার পানি শহরের দিকে চলে আসছে। বন্যা মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা।’

গত ২৪ ঘণ্টায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে জানিয়ে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘বৃষ্টি ও ঢল কমায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে। এ রকম আবহাওয়া থাকলে আগামী সাত থেকে আট দিনের মধ্যে পানি পুরোপুরি নেমে যাবে।

দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর একটি গোয়াইনঘাট। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের লাগোয় এ উপজেলার বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায় পানিতে, তবে বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমতে শুরু করে। ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাটে তিনটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হচ্ছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় গোয়াইনঘাট-জাফলং ও সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক। এ দুই সড়কের পানি নেমেছে, তবে অনেক জায়গায় সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীন সবগুলো সড়কই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি পুরো নামলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে, তবে যেসব সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছি।’

সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা কানাইঘাটের পানিও শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করে।

যেসব এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে সেসব এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ছে কাঁচা ঘর-বাড়ি।

কানাইঘাটের দিঘীরবাক এলাকার দিনমজুর কামাল আহমদের ঘর ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘তিনদিন ঘরের ভেতরে পানি ছিল। পানির মধ্যেই পরিবার নিয়ে ছিলাম। এ কষ্ট সহ্য করেছি ঘরটা রক্ষা করার জন্য, কিন্তু কাল পানি নামার পর ঘরের বেড়াও ভেঙে পড়েছে।’

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘আপাতত পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও তাদের খাদ্য সহায়তার দিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। পানি পুরো নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com