ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বলছে, এই সফরে লু বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ আরও অনেকের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন।
এই সফরে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তার বৈঠকের কর্মসূচি নেই। কিন্তু তারপরও ডোনাল্ড লু’র এই সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। লু’র এই সফর নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিচ্ছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
ডোনাল্ড লুকে নিয়ে মাতামাতির কিছু নেই: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ডোনাল্ড লুকে দাওয়াত করে আনা হয়নি। তিনি নিজ দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আলোচনা করতে এসেছেন। তাকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন? কোনো ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না বাংলাদেশ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, লুকে বিএনপি উপরে উপরে পাত্তা না দিলেও তলে তলে আবার কি করে কে জানে!
এদিকে, গত শনিবার (১১ মে) এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘লু আসছে, তাই বিএনপি নেতারা আবার চাঙা হয়ে গেছে। আবার ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেছে।’
ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলি, বাংলাদেশে জনগণ কারো ওপর নির্ভর করে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে-এটা আমরা মনে করি না। বাংলাদেশের জনগণ সবসময় নিজের শক্তিতে নিজের পায়ের ওপর ভর করে ’৭০ সালের পূর্বেও আন্দোলন করেছে, ’৭০ এ আন্দোলন করেছে, ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং পরবর্তিকালেও আমরা যে আন্দোলন করছি তা সম্পূর্ণ জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে আন্দোলন করছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা বেশি কিছু বলতে চাই না।
মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র আরও ভালো সম্পর্ক করতে চায়: সালমান এফ রহমান
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
সালমান এফ রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচনের আগে ভুলবুঝাবুঝি নিয়ে কোনো পক্ষ কথা তুলিনি। তবে নির্বাচনের পরে বাইডেনের চিঠির পরেই আমরা বুঝেছি তারা আমাদের সরকার মেনে নিয়েছে। জলবায়ু নিয়ে এবং বিদ্যুৎ নিয়ে তারা আমাদের সাথে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডোনাল্ড লু। মায়ানমারের ওপরে রোহিঙ্গা ফেরত নিতে চাপ দিতে বলেছি। শ্রমনীতি আর শ্রমআইন পরিবর্তনে আমরা অনেক অগ্রগতি করেছি বলে জানিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, র্যাবের স্যাংশন নিয়ে কথা বলেছি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত দেওয়ার বিষয়েও বলেছি। এছাড়া ফিলিস্তিন বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। হাইড্রো পাওয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন লু।
তিনি আরও বলেন, এটি অফিসিলয়াল কোনো মিটিং না, ঘরোয়া মিটিং। আমার বাসায় এ নিয়ে চারবার এসেছেন লু।
লু’র সফর আমাদের কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়: নজরুল
ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিএনপি। লুর আসার খবরে বিএনপি চাঙা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এমন দাবি তোলা হলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না দলটির নেতারা। লুর এই সফরের চেয়েও সীমান্তের সমস্যাকে বিএনপি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে এটা (ডোনাল্ড লুর সফর) অতটা গুরুত্বপূর্ণ না, যতটা গুরুত্বপূর্ণ কুকি-চিনের আক্রমণ—যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। ডোনাল্ড লু তো অনেক দূরের মানুষ। আমরা শঙ্কিত আমাদের নিজের দেশের অবস্থা নিয়ে।’
সোমবার (১৩ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।