ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :ব্রিটেনের এমবিই (মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাবে ভূষিত ব্রিটেনের বাংলাদেশী কমিউনিটির সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ও ব্রিটেন-বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. এম জি মৌলা মিয়া তার এমবিই খেতাব গ্রহণ করেছেন ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার। উইন্ডসর ক্যাসলে অনুষ্ঠিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে রাজকুমারী প্রিন্সেস অ্যান তার হাতে এমবিই খেতাব তুলে দেন। খেতাব প্রদান অনুষ্ঠানে তার স্ত্রী ফারহানা বেগম চৌধুরী, তার দুই পুত্র ট্রেইনী চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট তৌসিফুর রহমান ও ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট মুস্তাফিজুর রহমন এবং দুই কন্যা ব্যারিস্টার সালিহা সুলতানা ও ফ্যাশন ডিজাইনার ফাবিহা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশী কমিউনিটির সেবা ও সমাজকল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য ব্রিটেনের মহামান্য রাজা তাকে এ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনায় ব্রিটেনের মহামান্য রাজার পক্ষ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য লন্ডন গেজেট’-এ নববর্ষ ২০২৪ এর সম্মাননা তালিকায় এ খেতাবের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। ২০২৩ সালে বার্মিংহাম থেকে একমাত্র ড. এম জি মৌলা মিয়া-ই সম্মানজনক এ খেতাব লাভ করেন।
বৃটেনে মূলধারার ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যবসায়িক সংস্থা, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ইউকেবিসিসিআই সভাপতি ড. এম জি মৌলা মিয়া বার্মিংহাম ও সলিহুল এর একজন সফল উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এবং রাজনগর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ গ্রুপের রয়েছে- রেস্টুরেন্ট, হোটেল, প্রোপার্টিজ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, এমবিএম এগ্রো ইন্ডার্স্টিজ, এমবিএম বিল্ডার্স মার্ট সুপারস্টোর, এমবিএম ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট এন্ড ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা এবং সাপ্তাহিক সুরমার ঢেউ পত্রিকা প্রকাশনা।
এমবিই হচ্ছে সম্মানসূচক ব্রিটিশ পদবি বা খেতাব। রাজা ৫ম জর্জ ১৯১৭ সালে এ পদবীর প্রবর্তন করেন। খেতাব অর্জনকারীদেরকে রাজপ্রাসাদে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবার উইন্ডসর ক্যাসলে অনুষ্ঠিত জমকালো এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের রাজকুমারী প্রিন্সেস অ্যান। এ জমকালো অনুষ্ঠানে ড. এম জি মৌলা মিয়া স্বপরিবারে অংশ নেন।
ড. এমজি মৌলা মিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। এটা পারিবারিকভাবে পরিচালিত চ্যারিটি সংস্থা। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে এ সংস্থার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে তার রাজনগর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস গ্রুপ স্বতন্ত্র ভূমিকার মাধ্যমে বাংলাদেশী কমিউনিটির কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ক্রিয়েটিভ ধারণা, নান্দনিক উপস্থাপনা এবং পরিবেশনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে মূলধারায় বাংলাদেশী খাবারের স্বতন্ত্র পরিচিতি তুলে ধরতে ড. এমজি মৌলা মিয়ার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ‘ডাইন বাংলাদেশী ক্যাম্পেইন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। যুক্তরাজ্যে ইন্ডিয়ান খাবার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত বাংলাদেশী খাবারের স্বতন্ত্র পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করতে এ ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছিল। ড. এম জি মৌলা মিয়া গিল্ড অব বাংলাদেশী রেস্টুরেটার্স এসোসিয়েশন, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ সংগঠন বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশুনা করে থাকে। তার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচারিত হয়। বিশেষকরে হসপিটালিটি খাতে স্টাফ সংকটে ড. এম জি মৌলা মিয়ার গৃহিত পদক্ষেপ ব্রিটেনের পার্লামেন্টসহ দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইউকে-বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। এটি মূলধারার একটি ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যবসায়িক সংস্থা- যার সদর দপ্তর লন্ডনে অবস্থিত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য কাজ করা এবং দুইদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করাই এ সংগঠনের উদ্দেশ্য। সোশ্যাল ডাইভার্সিটি এবং কমিউনিটির পারষ্পরিক যোগাযোগ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ১৯৮০ সাল থেকে ড. এম জি মৌলা মিয়ার রেস্টুরেন্টসমূহ স্থানীয় কাউন্সিলের সাথে অত্যন্ত ঘণিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। দীর্ঘদিন তিনি প্রাচীনতম বাংলাদেশী কমিউনিটি সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে নতুন স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আসা লোকদেরকে সহায়তা করতে ভূমিকা রেখেছেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জোরালো ভূমিকা রাখে। দাতব্যমূলক তৎপড়তা, বিশেষ করে- সলিহুলে স্থানীয় স্কুলে সহায়তা, ওক্সফাম, পিহ্যাব, সিআরপি, শাইন, দ্যা আলজাইমার্স সোসাইটি, ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট, ফ্লাড রিলিফ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থসংগ্রহে ফান্ড রেইজিং ডিনার আয়োজনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছেন। পরিবারিকভাবে পরিচালিত মৌলা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে, বিশেষ করে বন্যার্তদের সহায়তা, কোভিড-১৯সহ বিভিন্ন আপতকালীন সময়ে নিরলসভাবে কাজ করেছে।
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন বাহাদুরগঞ্জ গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব মোস্তফা মিয়া ও ময়মুনা খাতুনের জৈষ্ঠপুত্র ড. এম জি মৌলা মিয়া দুই কন্যা ও দুই পুত্রের গর্বিত জনক। তার স্ত্রী ফারহানা বেগম চৌধুরী। তার ৪ ভাই ও ১ বোন সবাই যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হয়েছেন।
এমবিই খেতাব গ্রহণ করার প্রতিক্রিয়ায় ড. এম জি মৌলা মিয়া বলেন- আমি আমার পরিবারের সাথে আমার এমবিই সম্মান গ্রহণে অত্যন্ত আনন্দিত। এটি ঈদ উদযাপনের আনন্দের সাথে মিলে গেছে। এ সম্মান আমার এবং আমার পরিবারের তথা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা আরো সামাজিক ও মানবিক কাজে উৎসাহী হবেন। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে আমার সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড আজীবন অব্যাহত থাকবে।