
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :মোহাম্মদ আব্দুস শাহিদ (৫৭) প্রতি বছরের মত এবারও শাহ আরেফিন (রহ.) এর আস্তানায় যাবার মেঘালয় পাহাড়ে জন্য এসেছিলেন লাউড়েরগড় সীমান্ত নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায়।কিন্তু গত ২৫ বছরের মত এবারও যাবার কোনো সুযোগ পেল না দু’দেশের মধ্যে কাটা তারের বেড়া আর বিএসএফ এর বাধায়।
তিনি বলেন, যেতে না পারায় মনে কষ্টে কেদেঁছি। জোর করে ত আর যাওয়া যাবে না। তাই জিরো পয়েন্টে ১২০৩ পিলারের কাছে দাঁড়িয়েই অনেক দূরে মাজারের মেঘালয় পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে মোনাজাত করেই ফিরছেন তিনি।
শুধু তিনিই নন আগত দেশ ও বিদেশী ভক্ত আশেকানগনও। তার পরও মেঘালয় পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ভক্তরা কষ্ট নিয়ে কেউ দাড়িয়ে কেউবা বসে অপেক্ষায় আছেন যদি ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের শাহ আরেফিন (রহ.)এর আস্তানায় যাবার আশায়। তবে এই বার ওরসে বক্ত আশেকানগনের আগমন নেই বললেই চলে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বাদাঘাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা লাউড়েরগড় শাহ আরেফিন (রঃ) এর বাংলাদেশে সীমান্তে গত দু’দিন ধরে কোন সুযোগ পাননি মেঘালয় পাহাড়ে ভারতের অংশে শাহ আরেফিন (রহঃ)-এর আস্তানায় যাবার।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে মিলাদ মাহফিলের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে ওরস।চলবে রবিবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত।
মোহাম্মদ আব্দুস শাহিদ (৫৭) আক্ষেপ করে বলেন, ২৫বছর ধরে এভাবেই দুর থেকে দেখেছি বর্ডার খুলে না দেয়ায় এবারও শাহ আরেফিন বাবার মূল আস্তানায় যেতে পারছিনা।
আমার দাবী ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের শাহ আরেফিন (রহ.) এর আস্তানায় যেন যেতে পারি বাংলাদেশের সরকার যেন সে দেশের সরকারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করেন।
কষ্টের কথা শুধু মোহাম্মদ আব্দুস শাহিদ (৫৭) এরেই নয় ওরসে আসা জহির উদ্দিন,সাহাজ মিয়াসহ ওরসে আগত দেশ-বিদেশের ভক্তগনসহ অনেকের। তারা জানান, পাকিস্তান আমলে শাহ আরেফিন (রহ.)এর আস্তানায় যাওয়া যাইত। সংগ্রামের পর কাটা তারের বেড়া দেয়ার পর থেকে বাধা সৃষ্টি হয় এর মধ্যেও যেতাম। সর্বশেষ ২০০১সাল থেকে একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে বিএসএফ। এর পর থেকে আর যাওয়া যায়না।
তারা আশা নিয়ে আসেন মেঘালয় পাহাড়ে শাহ আরেফিন (রহ.)-এর আস্তানায় যাবার জন্য যেতে না পারলেও শেষ দিন রবিবার(৭ এপ্রিল) পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বক্ত আশেকানগন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হজরত শাহজালাল (রহ.) এর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম জিন্দাপীর শাহ আরোফিন (রহ.) বাংলদেশ সীমান্তে লাউড়েরগড় গ্রাম নিকটবর্তী ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে পাথরের গুহায় ইবাদত করতেন। তবে তিনি আজও জীবিত বা মৃত তার কোন চিহ্ন পায়নি কেউ। আর এ ধারণা থেকেই যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর ওরস মোবারক পালন করে আসছেন হাজার হাজার ভক্ত। তবে বাংলাদেশ কোনো আস্তানা নেই। মেঘালয় পাহাড়ের ঘুহায় যেতে না পারায় লাউড়েরগড় সীমান্ত নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় অস্থায়ী শাহ আরেফিন (রহ.)এর আস্তানা তৈরী করে বক্ত আশেকানগন ওরস পালন করে।
লতিফ মিয়া জানান, ভক্ত আশেকানগন কষ্ট করে আসেন, কিন্তু আশা পূরণ হয় না। বাবার আস্তানায় যাওয়ায় স্বাধ মিটল না এবারও আগত বক্ত আশেকানগনের। অন্তত ওরসের সময় ভক্ত আশেকানগনের আশা পূরন করতে পারত ভারত সরকার। এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর বর্ডার বন্ধ করে দেয় ভারতীয় বিএসএফ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে যাওয়া আসা।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাহ আরেফিন মাজার পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি নিজাম উদ্দিন জানান, প্রতি বছরেই আশা নিয়ে আসেন বক্ত আশেকানগন। কিন্তু ওরস উপলক্ষে বর্ডার উন্মুক্ত করেনি বিএসএফ। তাই সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছে দাঁড়িয়েই অনেক দূরে মাজারের মেঘালয় পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে ভক্তরা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন দীর্ঘ ২৫বছর ধরে।
শাহ আরেফিন মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভিন জানান, লাউড়েরগড় সীমান্ত নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে শাহ আরেফিন (রহঃ) ওরস উপলক্ষে। প্রতি বছরেই মেঘালয় পাহাড়ে শাহ আরেফিন (রহঃ) আস্তানায় যাবার আশায় আসেন ভক্তরা। ভারতের অংশে সেই আস্তা থাকায় কেউই যেতে পারেন না। আর দু’দেশের বিষয় এছাড়াও কোন অনুমতি নেই তাই আমাদের ও কিছু করার নেই।