ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :ঘরের মাঠে ফিলিস্তিনকে হারানোর লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। চেনা আঙিনায় অতিথিদের হারানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন জামাল ভূইয়ারা। স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীকে দেবেন আনন্দের উপলক্ষ। সে লক্ষে প্রথমার্ধে সফলতা দেখায় দল। দ্বিতীয়ার্ধে তো বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর যোগ করা সময়ে খেই হারালো বাংলাদেশ। শেষ মুহূর্তের গোলে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল হাভিয়ের কাবরেরার দল।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারল বাংলাদেশ। খেলায় একমাত্র গোলটি করেন মাইকেল তেরমানিনি। এ নিয়ে টানা সাত ম্যাচে হার দেখলো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পরের রাউন্ডে ওঠাও এখন স্বপ্নই থেকে গেলো। এই হারে ‘আই’ গ্রুপ থেকে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে গেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন। তাদের পয়েন্ট ৭। বাংলাদেশের পয়েন্ট ২।
দুটি পরিবর্তন এনে এদিন শুরুর একাদশ সাজান কাবরেরা। সোহেল রানা (জুনিয়র) ও ইসা ফয়সালের বদলে নামেন সোহেল রানা (সিনিয়র) ও শাকিল হোসেন। প্রথম লেগে ৫-০ গোলের হারের ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিল মিতুলের পারফরম্যান্স। এদিনও প্রথমার্ধে পোস্টের নিচে বিশ্বস্ত দেয়াল হয়ে থাকলেন এই গোলরক্ষক। দ্বাদশ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে ফিলিস্তিন। মোহাম্মেদ রাশিদের ফ্রি কিক ড্রপ খেয়ে পড়ার পর কোনোমতে ফেরান মিতুল। অষ্টম মিনিটে খেলার প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন বাংলাদেশি ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ।
খেলার ১২তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ফ্রি কিক থেকে পিছিয়ে পড়তে পারতো বাংলাদেশ। গোলরক্ষক মিতুল মারমার দিকে সোজাসুজি নেওয়া শটটি তার এক কদম দূরে ড্রপ খেয়ে বল লাফিয়ে ওঠে। তবে দ্বিতীয় প্রচেষ্টার বল ক্লিয়ার করেন তিনি। ২১তম মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে হঠাৎ আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। তপু বর্মণের বাড়ানো বল ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তবে বামপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢোকা সতীর্থের কাছে ঠিকঠাক ক্রস দিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড।
২৯ মিনিটে ভালো একটি আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের কর্ণার কিক থেকে পাল্টা আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। রাকিব হোসেন একাই বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সে। তবে ব্যাক পাস ধরে জনি আটকে পড়েন জটলার মধ্যে। শট নেওয়ার আগেই কিংসের এই খেলোয়াড়ের থেকে বল কেড়ে নেয় ফিলিস্তিন। দারুণ আক্রমণ প্রতিহত হয় জনির ভুলে। ২ মিনিট পর ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি কিক বক্সের ডানপাস ঘেষে বেড়িয়ে যায়। তিন মিনিট পর বক্সের সামনে থেকে অন টার্গেটে শট নেন ওদয় দাবাগ। তবে সহজেই তার নেওয়া কোনাকুনি শটটি ধরে ফেলেন মিতুল।
খেলার ৩৯ মিনিটে বক্সের কয়েক গজ দূর থেকে মুসাব ভাট ফ্রি কিক নিতে আসেন। বক্সে দাঁড়িয়ে হেড নেন শিহাব কুম্বোর। তবে দুর্দান্ত মিতুলকে পরাস্ত করা যায়নি। এ যাত্রায় বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন তিনি। এক মিনিট পর আরও ভয়ানক বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে ফাকা জায়গায় বল পায় ফিলিস্তিন। তবে বাংলাদেশি ডিফেন্ডারদের অসাধারণ ণৈপুন্যে বিপদমুক্ত হয় বাংলাদেশ।
৪৩ মিনিটে রাকিবের হেড বুক দিয়ে ঠেকিয়ে পায়ে নেন জামাল। ডানপ্রান্ত দিয়ে এগিয়ে যান প্রতিপক্ষের বিপদসীমায়। মাঝ মাঠ দিয়ে তাকে অনুসরণ করে বক্সে ঢুকে পড়েন ফাহিম। জামাল সেটি দেখেই কি না পাস দিলেন তাকে। প্রতিপক্ষের দুজন খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে জামাল বল ক্রস দেন ফয়সালকে। কিন্তু সামনে থাকা গোলরক্ষককে বোকা বানাাতে পারেননি তিনি। ওয়ান ওয়ান খেলায় পারলেন না ফয়সাল। খেলার প্রথমার্ধে এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ, যেটি মিস করল বাংলাদেশ। গোলশূন্য ড্র মেনে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর একাধিক পরির্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে এই অর্ধে খেলা শুরু করেন জামালরা। দ্রুতই দারুণ কিছু সুযোগও তৈরি করেন তারা। তবে গোল মিসের হতাশা সঙ্গী হয় তাদের। গোল মিস করেছে ফিলিস্তিনও। যদিও তাদের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব পাবেন গোলবারের সামনে অতন্দ্র প্রহরী মিতুল। খেলা জমে ওঠে।
৭০ মিনিটে জামালকে তুলে নেন কোচ। তার বদলি হিসেবে নামেন মোহাম্মদ সোহেল রানা (জুনিয়ার)। এক মিনিট পর ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রাকিব। তবে দুই সোহেল যেন মাঝমাঠে দাড়িয়ে তার খেলাই দেখছিলেন। পাস দেওয়ার জন্য কাউকে না পেয়ে মেজাজই হারিয়ে বসলেন এই ফরোয়ার্ড। খেলার ৭৩ মিনিটে ব্যাথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন মিতুল। তার পরিবর্তে নামেন মেহেদি হাসান শ্রাবন। ৮৮ মিনিটে জনিকে তুলে ইসা ফয়সালকে মাঠে নামান কোচ।
খেলার শেষ মিনিটে অল্পের জন্য গোল পায়নি বাংলাদেশ। ইসা ফযসালের পাস ধরে বক্সে গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি রাকিব। দশ জনের দলে পরিণত হয় ফিলিস্তিন। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন আমিদ মাহাজনি।
যোগ করা সময়ের চার মিনিটের মাথায় গোল হজম করে বাংলাদেশ। মুসাবের পাস থেকে হেড নেন বদলি খেলোয়াড় ইসলাম বাতরান। বক্সের বাম প্রান্তে ফাকায় বল পেয়ে যান তেরমানিনি। ডান পায়ের কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডিফেন্ডার। ১-০ গোলে লিড নেয় অতিথিরা।
খেলার বাকি সময় চেষ্টা করেও ফলাফলে পরিবর্তন আনতে পারেনি বাংলাদেশ।