
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে একটি চিতা বাঘের মরদেহ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার তড়িয়া ইউনিয়নের দাড়খোর সীমান্ত এলাকায় নদীর পাড়ে মৃত বাঘটি পাওয়া যায়। বাঘটিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার আলামত মিলেছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে আটোয়ারী উপজেলা প্রশাসন।
শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য মৃত বাঘটিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিতা বাঘটি দৈর্ঘ্যে ৫২ ইঞ্চি ও উচ্চতায় ৩০ ইঞ্চি বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, দাড়খোর সীমান্তের ভারতীয় অংশের চা বাগান ও জঙ্গলে চিতা বাঘসহ অনেক বন্যপ্রাণী রয়েছে। সীমান্তের বাংলাদেশের অভ্যন্তরের চা বাগান ও ভুট্টা ক্ষেতে মাঝেমধ্যে এমন প্রাণী দেখা যায়। বৃহস্পতিবার ওই সীমান্ত এলাকার দাড়খোর গ্রামের এক কৃষকের একটি গরুকে আক্রমণ করে চিতা বাঘটি। বাঘের খবর পেয়ে কয়েকশত গ্রামবাসী সেখানে ভিড় শুরু করে। এরই মধ্যে মারা যাওয়া গরুর সঙ্গে কে বা কারা বিষ মিশিয়ে রাখেন। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সীমান্তের কাছে নাগর নদীর পাড়ে বাঘটির মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিজিবি, পুলিশ ও বনবিভাগের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান। এর আগে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বোদা উপজেলার রহমতপুর গ্রামে একটি চিতা বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
দাড়খোর গ্রামের কৃষক মনতাজ আলী বলেন, ‘বাঘটি এখানকার একটি গরুকে আক্রমণ করেছিল। পরে মৃত গরুর মধ্যে বিষ দেয়া হয়েছিল। পরে বাঘটি আবারও ওই গরুর মাংস খেয়ে বিষের কারণে মারা গেছে বলে শুনেছি। তবে কে বিষ দিয়েছে আমি জানি না।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে দড়খোর আকবর আলীর একটি গরু হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে মারা যায়। তখনো কেউ বাঘের কথা জানত না। পরে মৃত গরুটিতে বিষ প্রয়োগ করে নাগর নদীর পাড়ে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয়দের ধারণা, শেয়াল বা অন্য কোন প্রাণী গরুটিকে মেরে ফেলেছে। শুক্রবার সকালে বাঘটিকে নদীর পানিতে পড়ে থাকতে দেখে বনবিভাগে খবর দেয়া হয়।
বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মধুসুধন বর্মণ বলেন, ‘এলাকায় চিতা বাঘটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয়রা। তবে বাঘটি কীভাবে মারা গেছে, তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় বাঘটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বন বিভাগের মাধ্যমে আমাদের হাসপাতালে একটি মৃত বাঘ আনা হয়েছে। আমাদের উপজেলা পর্যায়ে সাধারণত ময়নাতদন্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব নেই, নমুনা পাঠানোর তেমন ব্যবস্থাও নেই। আমরা ময়নাতদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পারব। আর বনবিভাগ যদি প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়, তাহলে ময়নাতদন্তের পর যথাযথ ল্যাবে নমুনা পাঠানো হবে।’
আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেদুল হাসান বলেন, ‘চিতা বাঘটির মুত্যুর ঘটনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’