ইউকে রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

উত্তপ্ত শুনানিতে শিশুদের পরিবারের কাছে জাকারবার্গের ক্ষমা প্রার্থনা

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমন অভিযোগ তোলা পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটের এক উত্তপ্ত জেরায় অংশ নিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মালিক জাকারবার্গ সেনেটে উপস্থিত অভিভাবকদের বলেছেন, ‘এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কারো যাওয়া উচিৎ নয়।’

তিনিসহ টিকটক, স্ন্যাপ, এক্স ও ডিসকর্ডের প্রধান কর্মকর্তাদের প্রায় চার ঘণ্টা ধরে উভয় পার্টির সেনেটররা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আইনপ্রণেতারা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষার জন্য তারা কী করছেন। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট হর্তাকর্তাদের প্রশ্ন করার এটি একটি বিরল সুযোগ ছিল মার্কিন সেনেটরদের জন্য।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাকারবার্গ এবং টিকটকের সিইও শাও জি চিউ স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতে রাজি হলেও স্ন্যাপ, এক্স (আগের টুইটার) এবং ডিসকর্ডের প্রধানরা প্রাথমিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর তাদের প্রতি হাজিরার নির্দেশ জারি করে সরকার।

পাঁচজন প্রযুক্তি প্রধানের পেছনে বসে ছিল সেসব পরিবারগুলো, যারা বলে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কন্টেন্টের কারণে তাদের সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা আত্মহত্যা করেছে।

শুনানির পর অভিভাবকদের বিক্ষোভ

প্রযুক্তি কর্তারা যখন সেনেট কক্ষে প্রবেশ করছিলেন, তখন পরিবারগুলোকে রাগাণ্বিত দেখাচ্ছিল। সেইসাথে, আইনপ্রণেতারা যখন তাদেরকে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করছিল, তখন হাততালি দিচ্ছিল।

এই শুনানির প্রধান বিষয়বস্তু ছিল, অনলাইনে যৌন হয়রানি থেকে শিশুদেরকে কীভাবে রক্ষা করা যায়। কিন্তু এর বাইরেও পাঁচ ক্ষমতাশালী প্রযুক্তি কর্তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়, কারণ সিনেটররা তাদের এভাবে পাওয়ার সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাননি।

বাইটডান্স নামক একটি চীনা কোম্পানির মালিকানাধীন টিকটক-এর সিইও শাও জি চিউকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে তার প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ব্যবহারকারীদের তথ্য চীন সরকারকে দেয় কিনা। উত্তরে তিনি তথ্য পাচারের বিষয়টি ‘অস্বীকার’ করেন।

চিউ সিঙ্গাপুরের। কিন্তু তারপরও ইউএস সেনেটর টম কটন, চিউকে জিজ্ঞেস করেন, যে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে কখনও যুক্ত ছিলেন কিনা। উত্তরে চিউ বলেন, সেনেটর, আমি সিঙ্গাপুরিয়ান।

তিনি বলেন, “তিনটি ছোট সন্তানের বাবা হিসেবে আমি বুঝতে পারছি আমরা, আজ যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আলোচনা করছি, তা ভয়ংকর এবং অনেক বাবা-মায়ের জন্য দুঃস্বপ্ন।”

এসময় তিনি এটাও স্বীকার করেন, তার নিজের সন্তানরা টিকটক ব্যবহার করে না। কারণ হিসেবে তিনি সিঙ্গাপুরের নিয়মকে দায়ী করেন। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী, ১৩ বছরের কম বয়সী কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না।

মেটা প্রধান জাকারবার্গকে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এই নিয়ে তিনি আটবার কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একপর্যায়ে, রিপাবলিকান সেনেটর টেড ক্রুজ মেটাপ্রধানকে একটা ইন্সটাগ্রাম প্রম্পট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “জাকারবার্গ, আপনি কী ভাবছিলেন?”

মূলত এই প্রম্পটির কাজ হলো শিশু যৌন নিপীড়নের দৃশ্য বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করা এবং জানতে চাওয়া তারা এটি দেখতে চান কিনা। যদিও জাকারবার্গ এর পেছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ হিসেবে বলেন, তাদের একেবারে ব্লক করে দেয়ার বদলে এমন কিছুর দিকে ধাবিত করা, যা তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তারপরও বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগতভাবে দেখার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন তিনি।

রিপাবলিকান সেনেটর জোশ হলে’র সাথে আরেকটি মতবিনিময়ের সময় জাকারবার্গকে তার পিছনে বসে থাকা পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

তখন তিনি উঠে দাঁড়ান এবং শ্রোতাদের দিকে ফিরে বলেন, “আপনারা যা কিছুর মাঝ দিয়ে যাচ্ছেন, তার জন্য আমি দুঃখিত। এটি ভয়ানক। আপনাদের পরিবার যে যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে গেছেন, তা আর কোনও পরিবারের ভোগ করা উচিত নয়।”

শুনানিটির মূল লক্ষ্য ছিল আইন প্রণয়নের প্রতি কোম্পানিগুলোর মনোভাব কী, সেটি বোঝার চেষ্টা করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব কন্টেন্টের জন্য কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। এদিন ডিসকর্ডের জ্যাসন সিট্রন এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা লিন্ডসে গ্রাহামের মধ্যে আইন নিয়ে বেশ উত্তপ্ত একটি আলোচনা হয়। গ্রাহাম অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কিত কংগ্রেসের কিছু বিল তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং সিট্রনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে তিনি এগুলো সমর্থন করেন কিনা।

যদিও উত্তর দেয়ার জন্য সিট্রনকে খুব বেশি সময় দেননি মি. গ্রাহাম। তবে এই স্বল্প সময়ে এটুকু মনে হয়েছে যে প্রায় সবগুলো বিল নিয়ে আপত্তি আছে ডিসকর্ড প্রধানের।

গ্রাহাম শেষ করেছিলেন এভাবে, “সুতরাং, আপনারা যারা এখানে আছে, আপনারা যদি মনে করেন যে এই লোকগুলো সমস্যা সমাধান করবে, তাহলে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে করতেই মরতে হবে।”

সোশ্যাল মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা বিবিসিকে বলেন, এই শুনানিটি অনেকগুলো শোডাউনের অনুরূপ, যেখানে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি মার্ক জাকারবার্গের ক্ষমা চাওয়ার মতো নিখুঁত ছবির সুযোগ। তিনি আরও বলেন, এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উভয় পক্ষের সেনেটররা একমত হয়েছেন বটে, কিন্তু এরপর কী হবে, সেটা এখনও অস্পষ্ট রয়ে গেছে। আমরা এই শুনানিগুলো বারবার দেখেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তারা এখন পর্যন্ত কোনও উল্লেখযোগ্য নিয়ম তৈরি করতে পারেনি।

“আমরা এখন ২০২৪ সালে বসবাস করছি এবং সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্যত কোনও নিয়ম নেই।”

প্রযুক্তি কর্মকর্তারা এসময় ‘কন্টেন্ট মডারেট’ করার জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কত সংখ্যক কর্মী আছে সেটি তুলে ধরেন।

বিশ্বে মেটা এবং টিকটকের ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি। এই প্রতিষ্ঠান দু’টো বলছে, কন্টেন্ট মডারেশনের জন্য তাদের প্রত্যেকের ৪০ হাজার করে কর্মী আছে। এছাড়া, স্ন্যাপের আছে দুই হাজার ৩০০ জন এবং এক্স-এর আছে দুই হাজার। ডিসকর্ড জানিয়েছে, তাদের কর্মী সংখ্যা এরচেয়ে কম, সেটি শতাধিক হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ