ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

সিলেটের পর্যটনশিল্পে নতুন বছরে নতুন আশায় ব্যবসায়ীরা

ijoipko - BD Sylhet News

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : গত বছরের হরতাল-অবরোধ, এ বছরের শুরুতেই নির্বাচনসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার বড় প্রভাব পড়ে সিলেটের পর্যটনশিল্পের ওপর। ফলে পর্যটননির্ভর ব্যবসাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে নতুন বছরে নতুন আশা বুনছেন ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সিলেটের বড় পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটের একটি হচ্ছে জাফলং। জল, পাথর, পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে এখানে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। এই জাফলং এলাকার নৌকার মাঝি বাসির মিয়া। তিনি বলেন, ‘হরতাল, অবরোধ, নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক মাস জাফলংয়ে খুব বেশি পর্যটক আসেনি। এমনও হয়েছে অনেক দিন একটা ভাড়াও পাইনি। বছরের শুরুতে যেহেতু নির্বাচন হয়ে গেছে তাই মনে হচ্ছে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হবে। নতুন বছরে আশা করছি পর্যটকরা আসবেন। আমরাও ভালো ব্যবসা করতে পারব।’

সিলেটের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট রাতারগুল। মিঠাপানির জলাবন রাতারগুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জল, গাছ আর প্রাণী। স্বচ্ছ জল সঙ্গে হিজল, করচ, মুর্তা গাছের সারি। ছোট নৌকাতে বসে গাছে গাছে নানা প্রজাতির পাখি দেখতে পর্যটকরা এখানে আসেন। রাতারগুলকে কেন্দ্র করে এখানের আশপাশে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি রিসোর্ট। যেসব রিসোর্টগুলোয় সারা বছরেই থাকে পর্যটকদের ভিড়।

রাতারগুলের সোহেল স্কয়ার রিসোর্টের পরিচালক শাহ আলম সোহেল বলেন, ‘পুরোনো সব ক্ষয়ক্ষতি ভুলে গিয়ে নতুন বছরে আবার নতুন উদ্যমে ব্যবসা শুরু করছি। নতুন বছর পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আমরা রিসোর্টের ডেকোরেশন নতুনভাবে করছি। আশা করছি পর্যটকরা আসবেন। তবে এখন চিন্তায় আছি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে। কারণ মাত্র নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখন যদি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও দেশে অস্থিরতা শুরু হয় তাহলে আমাদেরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।’

তবে সিলেটের ব্যবসায়িক নেতারা মনে করেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সিলেটের ব্যবসা খাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত পরিবর্তন। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের সুদৃষ্টি না থাকার কারণে সিলেটের ব্যবসা খাতে উন্নয়ন হচ্ছে না।

পর্যটননগরী সিলেটে সারা বছরই পর্যটকরা আসেন। পর্যটননির্ভর ব্যবসাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। তাই পর্যটক আসলে যেমন এ খাতের ব্যবসায়ীরা লাভবান হন। তেমনি পর্যটক না আসলে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সিলেট নগরীর মিরের ময়দানের ফারমিছ গার্ডেন হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের চেয়ারম্যান ফারমিছ আক্তার বলেন, ‘গত বছর পর্যটনের ভরা মৌসুমে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় সিলেট পর্যটকশূন্য ছিল। নতুন বছর মাত্র শুরু হয়েছে। নির্বাচনও শেষ হয়েছে। তাই আবারও আশায় বুক বেঁধেছি। এ বছর যেন দেশে শান্তি বিরাজ করে। তাহলে মানুষজন ঘুরতে আসবে সিলেটে। আমাদের ব্যবসাও চাঙ্গা হবে।’

নগরীর জিন্দাবাজারের ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটিতে ম্যাক ট্যুরিজম অব সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাত পাল বলেন, ‘গত সিজনে আমরা যেরকম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, আশা করছি এই শীত সিজনে আমরা আবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। গত ১ জানুয়ারি তাঁবুবাস ক্যাম্পে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এই নতুন বছরে অবশ্যই আমরা ব্যবসায়ীরা সাফল্যের মুখ দেখব।’

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হোসেন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা হচ্ছে পর্যটননির্ভর। এখানে মানুষজন না আসলে আমাদের ব্যবসা হয় না। গত বছর হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটন সিজনে সিলেটে কোনো পর্যটক আসেনি। ফলে দেখা গেছে জাফলংয়ের অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলে সারা দিন বসে থাকার পরও কোনো পণ্য বিক্রি হয়নি। অনেক ব্যবসায়ীর পণ্য দোকানে থেকে থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকানে মালামাল তুলেছেন। গত বছর তাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে সেটা নিয়েই অনেক চিন্তিত আমরা। সরকারের উচিত আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করা। আমরা চাই আবারও নতুনভাবে শুরু করতে। কারণ এখানকার ব্যবসায়ীদের রুটিরুজি সব পর্যটনকে কেন্দ্র করে। তাই নতুন বছরে দেশে শান্তি বিরাজ করবে ও পর্যটকরা সিলেটে আসবেন আমরা তা প্রত্যাশা করছি।’

এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘করোনা মহামারিতে একবার ধস নেমেছিল ব্যবসা খাতে। এরপর যখন ব্যবসায়ীরা কিছুটা উঠে দাঁড়ালেন তখন আবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়লাম আমরা। সবাই শুধু দেখেন ব্যবসায়ীরা সবাই মুনাফা করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের লোকসান কেউ দেখেন না।

তাহমিন আহমদ আরও বলেন, সিলেটে ব্যবসা খাতের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। যেমন সিলেটে একটি বিভাগীয় স্টেডিয়াম করে দেওয়ায় এটাকে কেন্দ্র করে অনেক হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। তেমনি সরকারের উচিত সিলেটে আরও অবকাঠামো তৈরি করা। সিলেটে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি নেই। এসবের উন্নয়নের জন্য দরকার রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের সুদৃষ্টি। কিন্তু সিলেটে এখন পর্যন্ত কারও সুদৃষ্টি নেই। তাই ব্যবসা খাতে যুগোপযোগী উন্নয়ন হচ্ছে না।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ