ইউকে রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

২০২৩ সালে যেসব বিশ্ববরেণ্য মুসলিম ব্যক্তিত্ব ইন্তেকাল করেন

Untitled 9 copy 2 - BD Sylhet News

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :২০২৩ সালে অনেক বিশ্ববরেণ্য আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইন্তেকাল করেন। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো-

শায়খ ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ : এ বছরের ৮ এপ্রিল মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী আলেম শায়খ ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি ৯৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯২৯ সালের ১৭ মে মিসরের গারবিয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।

৯৭২ সালে তিনি বালাগাত ও নাকদশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর করেন এবং ১৯৭৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ১৯৮০ সালে সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি এবং ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন।

শায়খ আবদুল্লাহ কামিল : গত ২৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামিল মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। সুরেলা কণ্ঠে কোরআন পাঠের জন্য সবার কাছে পরিচিত ছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ হাফেজ।

তিনি ১৯৮৫ সালে মিসরের আল-ফাইউম প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে পুরো কোরআন হিফজ করে ২০০৫ সালে দারুল উলুম কলেজ থেকে স্নাতক করেন। ২০১৫ সালে তিনি টিভি প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। কর্মজীবনে তিনি কুয়েত, সৌদি আরব, যক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ইমাম ছিলেন।সর্বশেষ তিনি ব্রুকলিনের মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারে ইমাম ছিলেন।

মাওলানা মুহাম্মদ রাবে হাসানি : গত ১৩ এপ্রিল ভারতের লখনৌয়ের দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার প্রধান মাওলানা মুহাম্মদ রাবে হাসানি নদভি ৯৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের (এআইএমপিএলবি) সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯২৯ সালের ১ অক্টোবর উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় পড়াশোনা করেন। তাঁর মামা আল্লামা আবুল হাসান আলী নদবি (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর থেকে তিনি দারুল উলুমের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারতীয় কাউন্সিল উত্তর প্রদেশ ও রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি রিয়াদভিত্তিক রাবিতা আল-আদব আল-ইসলামীর সহসভাপতি ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

শায়খ মুহাম্মদ তাহির আয়াত : গত ১৪ জুন আলজেরিয়ার প্রভাবশালী আলেম শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ১০৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ফরাসি উপনিবেশবিরোধী বিপ্লবের অন্যতম নেতা এবং আজীবন আলজেরিয়ান ফতোয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯১৭ সালে আলজেরিয়ার বেজাইয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পড়াশোনার পাশাপাশি ফরাসি উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৭ সালে মাতৃভূমির স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন গড়তে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে যান। ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীন হওয়ার পর নিজ দেশে ফিরে আসেন। তিনি আজীবন ইসলাম প্রচার, মালেকি ফিকাহ চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন।

শায়খ আবদুল বাকি : গত ১২ জুলাই তুরস্কের নকশবন্দি তরিকার শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন নকশবন্দি ধারার প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি ১৯৪৯ সালের ১ মে আদিয়ামান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি জামাতে মানজিলের মুরশিদ ছিলেন। সামাজিক প্রভাব ও শিষ্যের সংখ্যার দিক থেকে মানজিল দলটি তুরস্কের বৃহত্তম আধ্যাত্মিক দলগুলোর অন্যতম।

শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি : এ বছরের ২৬ আগস্ট সিরিয়ার প্রভাবশালী আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ইন্তেকাল করেন। তিনি দোহাভিত্তিক মুসলিম সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের নানা বিষয়ে তাঁর বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হতো নানা শ্রেণির মানুষ। তিনি ১৯৩০ সালে সিরিয়ার হামা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। ইসলামী শরিয়াহ, সাহিত্য ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য ছিল।

শায়খ তাজুদ্দিন আল-হিলালি : গত ৫ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘ ৩১ বছর নিউ সাউথ ওয়েলসের বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি ১৯৪০ সালে মিসরের সাওহাজে জন্মগ্রহণ করেন। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিয়া বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ইমামতি ও শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২ সালে তিনি লাকেমবা মসজিদের ইমাম হন। ১৯৮৮ সালে তাঁকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করা হয়। সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় ২০০৫ সালে তাঁকে বর্ষসেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে তিনি লাকেমবা মসজিদ থেকে অব্যাহতি নেন।

শায়খ লুতফি দুগান : গত ৪ নভেম্বর তুরস্কের সাবেক ধর্মবিষয়ক প্রধান শায়খ লুতফি দুগান ৯৩ বছরে ইন্তেকাল করেন। লুতফি দুগান ১৯৩০ সালে তুরস্কের গুমুশানে প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দিন এরবেকানের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি :
গত ৬ অক্টোবর ভারতের প্রাচীন মাদরাসা মাজাহেরুল উলুম সাহারানপুরের মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভি (রহ.)-এর নাতি ও মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.)-এর জামাতা। সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি (রহ.) ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসায় পড়াশোনা করে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি মাদারাসাটির ‘আমিন আম’ (মহাপরিচালক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন অনন্য যোগ্যতার অধিকারী নিভৃতচারী একজন আলেম। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসার উন্নতি ও অগ্রগতি এবং দ্বিনি ইলম বিস্তারে গ্রন্থ রচনা ও গবেষণায় তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেন। ভারতের বৃহত্তম মুসলিম সংস্থা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও জমিয়ত উলামা হিন্দের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।

মাওলান এতহেরামুল হক থানভি :
গত ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আলেম মাওলান এতহেরামুল হক থানভি। তিনি ছিলেন মাওলানা এহতেশামুল থানভির বড় ছেলে। মাওলানা ইহতিশামুল হক থানভি হাকিমুল উম্মত খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর ভাতিজা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি জামিয়া এহতিশামিয়্যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কিছু দিনের জন্য পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পিটিআই করাচির সাথে যুক্ত ছিলেন। মাওলান এতহেরামুল হক ১৯৪২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং পাঁচ ১৯৪৭ সালে বাবার সঙ্গে করাচিতে আসেন। তথ্যসূত্র : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অবলম্বনে

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ