ইউকে মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

পড়া-লেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে সেলাই মেশিন পেলেন তাঁরা

পড়া-লেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে সেলাই মেশিন পেলেন তাঁরা

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :পড়া-লেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে চান তানজিনা ও মুজিবুর। অভাবের সংসারে পড়াশুনা আগেই ছেড়ে দিয়েছেন সাবিনা। অভাবের সংসারে ওই তিন পরিবারের সব স্বপ্ন যখন ফিকে হয়ে যেতে লাগল, তখনই এই পরিবারের স্বপ্ন পূরণের সারথি হলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জগন্নাথপুর থানায় ওই তিন তরুণ-তরুণীদের সাবল্মবি হতে ওসি মিজানুর রহমান উদ্যোগে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া তানজিনা আক্তার, একই গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র মুজিবুর রহমান ও সাবিনা আক্তার। পড়া-লেখার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে উপজেলা যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নেন। সেই সুবাদে কিছুদিন আগে উপজেলায় যুব উন্নয়নের এক অনুষ্ঠানে ওসি মিজানুর রহমানের বক্তব্য শুনে তাঁরা অনুপ্রাণিত হন। পরে ওই তিনজন তাদের স্বপ্ন পূরণের কথা জানান ওসি মিজানুরকে।

এদিকে সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে চোখ মুছতে থাকেন সাবিনা আক্তার। তাঁর চোখেমুখে আনন্দ আর তৃপ্তি, যেন বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন পেলেন। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসারে জন্ম। দিনমজুর বাবার আয়ে খেয়ে না খেয়ে চলে আমাদের চার জন্যের সংসার। অভাবের কারণেই লেখাপড়া ছাড়তে হয়েছে। এবার বোধ হয় একটু ভালো থাকার রাস্তা খুঁজে পেলাম। কাপড় সেলাই করে উপার্জন করব। পরিবারের কষ্ট দূর হবে। ’

তানজিনা আর মুজিবুর এখন নিশ্চিন্তে লেখাপড়া করবে: আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। যদিও বা স্বপ্ন দেখে, দরিদ্রতা এসে ভর করে সেখানে।

তখন তারা একটু প্রশান্তি নিয়ে বেঁচে থাকার রসদও খুঁজে পায় না। আর যদি হয় কোনো অতিদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী, তাহলে তো কথাই নেই। নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তাদের ফেলে দেয় হতাশার সমুদ্রে।

এমন দুই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন ওসি মিজানুর রহমান। উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের মেধাবী দুই শিক্ষার্থী তানজিনা ও মুজিবুর। মেধাবী শিক্ষার্থী হলেও তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছিলেন তাঁরা। তানজিনা আক্তার গন্ধর্বপুর গ্রামের কৃষক ছয়ফুল উদ্দিনের তিন মেয়ের মধ্যে সে ছোট।

রানীগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বড় এক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অন্যজন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। একমাত্র ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তিনজনের পড়াশোনা চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন কৃষক বাবা। যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিখেছেন সেলাই মেশিন চালানো। কিন্তু অভাবের সংসারে কোথা থেকে আসবে সেই সেলাই মেশিন। একটি সেলাই মেশিন পেলে হয়তো নিজের পড়া-লেখার খরচসহ সাবল্মবি হয়ে উঠতে পারবেন। তানজিনার এমন স্বপ্ন শুনে তাক সেই স্বপ্নপূরণের সারথি হলেন ওসি মিজানুর রহমান। একইভাবে ইমামের ছেলে নবম শ্রেণির মাদ্রাসা মুজিবুর রহমান এহিয়াও উপহার পেলেন সেলাই মেশিন।

এতে খুশি হয়ে ওসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তানজিনা, মুজিবুর ও সাবিনা আক্তার।

জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলা যুব উন্নয়নের কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনজন হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীর কথা শুনে খারাপ লাগছিল। পরে উপজেলার পাইলাগাঁও গ্রামের এক প্রবাসীর সঙ্গে এ বিষয়টি আলোচনা করলে, তিনি স্বপ্রনোদিত হয়ে তাদেরকে তিনটি নতুন সেলাই মেশিন উপহার দেন। গতকাল তাদের থানায় এতে এ উপহার তুলে দিতে পেরে ভালো লাগছে। ওই প্রবাসী তাঁর পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ