ইউকে মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাশ

Screenshot 20231024 033729 Facebook - BD Sylhet News

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ। কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ ভাই, কেউ বোন, কেউ স্বামী, কেউ স্ত্রী আবার কেউ সন্তান হারিয়ে বিলাপ করছেন। স্বজনহারাদের আহাজারি দেখে কাঁদছেন দর্শনার্থীরাও। সব মিলিয়ে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেলে হাজারো মানুষ ভিড় করেছে।

নিহত আছির উদ্দিনের স্ত্রী আছিয়া আক্তার বলেন, আমরা একই পরিবারের পাঁচজন ট্রেনে ছিলাম। আমার স্বামী ও আমার ১০ বছরের ছেলে, পুত্রবধূ ও ৪০ দিনের নাতি। আমরা সবাই নরসিংদীর উদ্দেশ্য ট্রেনে উঠেছিলাম আমরা সবাই ভেতরে ছিলাম। আমার স্বামী ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে ট্রেন হেলে পড়ে। তখন আমার ছেলেকে জানালা দিয়ে বের করি। একে একে সবাই বের হই। কিন্তু আমার স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এখন হাসপাতালে এসে আমার স্বামীর মরদেহ পেলাম।

নিহত আছির উদ্দিন বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের ভুইয়াগাও গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি।

স্বামীকে হারিয়ে আছিয়া আক্তার বিলাপ করছেন। শুধু আছিয়াই না, অন্যান্য নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরাও হাসপাতালে এসে আহাজারি করছেন। এতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

ভৈরব থেকে নরসিংদীর উদ্দেশ্য ট্রেনে ওঠেন সবুজ চন্দ্রশীল (৪৫)। কিন্তু হঠাৎ এক বিকট শব্দ যেন সব উলটপালট হয়ে যায়। নিহতের মামা সঞ্চিত চন্দ্রশীল জানান, সবুজ সেলুনে কাজ করতো। নরসিংদী যাওয়ার জন্য ট্রেনে ওঠে, তখনই এমন দুর্ঘটনায় আমার ভাগনে মারা যান। আমরা হাসপাতালে মরদেহ চিহ্নিত করেছি। এখন অপেক্ষা করছি। নিহত সবুজ চন্দ্রশীল ভৈরবের টিনবাজার এলাকার প্রফুল্ল চন্দ্র শীলের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী আছমা খানম নামে এক নারী বলেন, আমার চাচির বাসা স্টেশনের কাছেই। সেই সুবাদে আমি সেখানে ছিলাম। একপর্যায়ে বিকট শব্দ পাই। চারদিকে ছোটাছুটি শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ছুটে আসে। আমি আছিয়া আক্তারকে কান্নারত অবস্থায় পাই। তারপর মাথায় পানি দিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।

এর আগে রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার আছেন। যাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী ট্রেন দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী ট্রেনটি উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে। খুব তাড়াতাড়ি ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের কাছাকাছি জগন্নাথপুর এলাকায় ঢাকাগামী এগারসিন্দুর ও ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী একটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল, আর যাত্রীবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায়। ভৈরব জংশনের আউটার পয়েন্ট ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়।

এতে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক যাত্রী। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ