ইউকে সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
হেডলাইন

সুনামগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে আ.লীগের নেতারা

সুনামগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে আ.লীগের নেতারা

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :হাওর-ভাটির রাজনীতি সচেতন এলাকা সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা উপজেলা। এ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসন। এ আসনের ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও জাতীয় রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ২০১৭ সালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রয়াত হলে উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন তারই সহধর্মিণী ড. জয়া সেনগুপ্তা। একাদশ নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি।

ড. জয়া সেনগুপ্তার ‘বার্ধক্য’কে সামনে এনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একাধিক রাজনৈতিক শিষ্য। তাদের মধ্যে অগ্রভাগে রয়েছেন শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী) ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন। তারা ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় সভা-সমাবেশ ও প্রচার চালাচ্ছেন আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।

অপরদিকে ভোটযুদ্ধে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পরাজিত করে রাজনীতিতে জাতীয়ভাবে সাড়া জাগানো জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তবে দল নির্বাচনে এলে

এবং মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও শক্ত প্রার্থী হিসাবে তার ওপর ভরসা রাখতে চান। তিনি ছাড়াও এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল ও জেলা বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী। মাহদীন চৌধুরী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছেÑ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীও বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন।

শাল্লা উপজেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হলেও দলে জনপ্রিয়। আমাদের ধারণা, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনিই দলের প্রার্থী হবেন।’

সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি শারীরিকভাবে একটু অসুস্থ। তবে কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। দলের কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে এবং আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেব।

নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। আল আমিন চৌধুরী ও অনুকূল তালুকদার ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন দলের জেলা কমিটির উপদেষ্টা ও শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের সভাপতি ড. মো. শামসুল হক চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সাবেক সহসম্পাদক সুবীর নন্দী দাশ, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর তুলি ও সাবেক যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান।

দিরাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায় বলেন, জয়া সেনগুপ্তা আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তবে তিনি বয়ষ্ক ও অসুস্থ। গত পাঁচ বছরে দিরাই-শাল্লায় তিনি মাত্র কয়েকবার এসেছেন। একটি চক্র তাকে এলাকায় এনে সুস্থ বলে প্রমাণ করানোর চেষ্টা করছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী পাশের উপজেলার বাসিন্দা। তার পরও সমন্বয়ের অভাবে আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। তিনি (জয়া) শেখ হাসিনার উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারছেন না। এ কারণে দিরাই-শাল্লার মানুষ পরিবর্তন চান।

তবে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, জয়া সেনগুপ্তা সুস্থ। তিনি সুস্থ না হলে কীভাবে মাসে ৫-৬ বার এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন? দিরাই-শাল্লায় তাকে ছাড়া আর কাউকে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না। এমন যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে বলে আমার জানা নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও এলাকার সাধারণ মানুষ জয়া সেনকে আবারও এমপি দেখতে চান। যারা জয়া সেনকে বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী চাচ্ছেন, তারা এলাকার সামাজিক সম্প্রতি নষ্ট করতে প্রণ। যারা জয়া সেনের কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছেন না, তারাই পরিবর্তন চাইছেন।’

ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন বলেন, আমি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে, এর পর কেন্দ্রীয় যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। আমি প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনৈতিক অনুসারী। ২০১৭ সালে উপনির্বাচনে প্রার্থী ছিলাম। ২০১৮ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম, না পেয়েও মাঠে কাজ করেছি। একবার সুযোগ পেলে দিরাই-শাল্লার পরিবর্তন করে দেব।

শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী বলেন, আমি সেনবাবুর রাজনৈতিক শিষ্য। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর জয়া সেনকে নিয়ে দুবার নির্বাচন করেছি। উনার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক অসুস্থ। সে জন্য আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। এলাকার উন্নয়নের জন্য ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের দাবিতে প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছি এবং মাঠে গণসংযোগ করছি।

অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যকে নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তিনি দলীয় মনোনয়ন আনতে পারলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে চাই।

সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। নির্বাচন করার আকাক্সক্ষা থাকতেই পারে। তবে আমি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলব না। অসুস্থ থাকায় আমি কিছু দিন হাসপাতালে ছিলাম। এখন আমি সুস্থ এবং এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার করে যাচ্ছি। দিরাই-শাল্লার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি ও নানা জরিপ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাব বলে আমি আশাবাদী।

এ ছাড়া এ আসনে বাসদ নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী (আজহার চৌধুরী), জাতীয় পার্টির নেতা দুলদুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা শুয়াইব আহমদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ১৯ হাজার ৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৮ এবং নারী এক লাখ ৫৫ হাজার ২৯৯ জন। এ আসনে গত নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ১১০, আগামী নির্বাচনে কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৩টি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ