
ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :“আনাচে-কানাচে” বাড়ির আঙ্গিনায়, উঠোনে, শীমের মাচায় কিংবা লাউ গাছের মাচায়, লেবু তলায় প্রচুর পরিমাণে দোয়েল পাখি দেখা যেত। সকাল বেলায় সূর্য ওঠার সাথে সাথে দোয়েল পাখির সুমধুর শিসে ঘুম ভাঙ্গতো এ অঞ্চলের মানুষের। সবুজ প্রকৃতি জুড়ে ছিল দোয়েল পাখির অবাধ বিচরণ। দোয়েল পাখি ছিল সুরের পাখি। মিষ্টি সুরে মানুষের মনকে বিমোহিত করতো পাখিটা। মাটিতে যখন দোয়েল পাখি নেচে নেচে চলতো দেখতে তখন ভীষণ ভালো লাগতো। দোয়েল পাখির আনাগোনায় প্রকৃতি যেন আরো সৌন্দর্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতো।দোয়েল পাখি ছিল কৃষকের উপকারী বন্ধু। ফসল বিনষ্টকারী পোকামাকড় ছিল দোয়েল পাখির প্রধান খাদ্য। এ পাখিটি জাতীয় পাখি হিসেবে পরিচিত।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই ইতিহাস-ঐতিহ্যে এবং স্মৃতিতে জড়িয়ে থাকা দোয়েল পাখি বর্তমানে হারিয়ে যাওয়ার পথে।নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের অবাধে ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট পাখি বিলুপ্তির কারণ।
নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা ও অচেনাই রয়ে যাবে এসব পাখি। তবে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে বই-পুস্তক আর জাদুঘরে স্থান পাবে এ পাখির এমন আশংকায় করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া গ্রামের সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, এক সময় দোয়েল, ময়না, কোকিলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙিনায় আসত।
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙত অনেকের। কিন্তু এখন আর শোনা যায় না পাখির কিচিরমিচির। টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙা, ইত্যাদি পাখি বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না।
পাখি পালনকারী মাধবপুর পৌরসভার আলাকপুর গ্রামের মোঃ জজ মিয়া বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পায় না। বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পাখি পালনকারী বলেন, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সচেতন মহল মনে করেছেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি,তাছাড়া জনসংখ্যা প্রভাবেও কোথাও না কোথাও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ কেটে বন উজার করে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।
তাই আগের মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না। এছাড়া মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচতে জীবন রক্ষার্থে পাখিরা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোন তৎপরতা নেই।
উপজেলা পরিষদদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীধাম দাশগুপ্ত জানান, ‘যেসব পাখির ডাক ও সুর মানুষকে মুগ্ধ করত, সেই পাখিই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে দোয়েল পাখির এখন আর দেখাই মিলছে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সাত্তার বেগ জানান, ‘শীত মৌসুমে পাখি শিকারের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। বন্যপ্রাণী ও পশু-পাখির আবাসস্থলে সামান্য খাদ্যের সংকট রয়েছে। কৃষিতে অবাধে কীটনাশক প্রয়োগে আক্রান্ত পোকা-মাকড় খেয়ে বহু পাখি মারা যায় বলে জানান তিনি।