ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের খোয়াই নদীর গোলগাঁওয়ে একটি সেতুর দাবি পূরণ হয়নি অর্ধশতাব্দীতেও। ফলে চুনারুঘাট সীমান্তবর্তী গোলগাঁও, হাসারগাঁওসহ ওই এলাকার ১৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু করার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও। এতে উপজেলা শহরসহ ১৫ গ্রামের মধ্যে সহজ যোগাযোগ স্থাপন হয়নি। সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যখন উন্নয়নের বিপ্লব, তখন এখানের মানুষ নদী পারাপারে ব্যবহার করছেন রশিটানা নৌকা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আবেদন করলেও কাজ হয়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, জনস্বার্থ বিবেচনায় খোয়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে সময় লাগবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত হাসারগাঁও-গোলগাঁও এলাকা অত্যন্ত অবহেলিত। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, এমনকি একাধিক মন্ত্রী এসে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে গেলেও এর প্রতিফলন ঘটেনি। তাই ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হচ্ছেন সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ভারী বর্ষণে নদীর পানি বাড়লে বন্ধ থাকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী নিয়ে যাওয়াও প্রায় দুঃসাধ্য। গোলগাঁও ও হাসারগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে ছোট নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। নদীর ওপারে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। জরুরি প্রয়োজনে রশিটানা ছোট খেয়া নৌকাতেই পারাপার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। স্থানীয়রা জানান, এখানের গ্রামগুলোতে ধান ও শাকসবজির ব্যাপক চাষ হয়। এসব ফসল সুষ্ঠুভাবে পরিবহনের অভাবে উপজেলা ও জেলা শহরে বাজারজাত করা যাচ্ছে না। এতে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষক সুরুজ মিয়া জানান, পারাপারের অসুবিধার কারণে তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না। পাঠাতে পারেন না উপজেলা শহরসহ বড় বাজারগুলোতে। গোলগাঁও গ্রামের শিক্ষক ফয়সাল আহমেদ তুষার জানান, সেতুটি না হওয়ায় বিকল্প একটি ছোট নৌকা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন অসংখ্য মানুষ। এতে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নৌকায় যাতায়াতকারীরা। এ ছাড়া গোলগাও গ্রামবাসীর শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ওই নৌকা। বিকল্প পথে বাহুবল উপজেলা হয়ে দীর্ঘ সড়ক পাড়ি দিয়ে যেতে হয় চুনারুঘাট শহরে।
চুনারুঘাট সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাওছার বাহার ও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, গোলগাঁও গ্রামবাসী দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। একটি সেতু নির্মাণ করা হলে ১৫টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করা হবে যাতে এই নদীর ওপর দ্রুত একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করা যায়। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর জানান, গোলগাঁও খোয়াই নদীতে সেতু নির্মাণে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিতে তিনি প্রস্তুত।










