ইউকে শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
হেডলাইন

মৌলভীবাজারে কাশফুলের চোখজুড়ানো মায়ায় মুগ্ধতা

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :খুব বেশি দিন হয়নি। ওখানে বিন্না ঘাস, বুনো লতা-গাছের ঝোপই ছিল। খুব দরকার ছাড়া কেউ ওদিকটায় যেতেন না। কিন্তু দেখতে দেখতে কয়েক বছর ধরে শরৎ এলেই আকাশে যেমন সাদা মেঘের ভেলা ভাসে, এখানে মনু নদের পাড়ে ফোটে কাশফুল। থোকা ধরা সাদা ফুলের চাদরে ঢেকে যায় স্থানটি।

ক্লান্তশ্রান্ত জীবনের একফাঁকে অনেকেই ছুটে আসছেন এই স্থানে একটুখানি মায়া, একটুখানি মুগ্ধতার কাছে। মনের মধ্যে শুভ্রতার রেশ নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরছেন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার রায়শ্রী এলাকায় মনু নদের উত্তর পাড় এখন কাশফুলের সাদায় উজ্জ্বল, নজরকাড়া, মনভোলানো মুগ্ধতা নিয়ে কাশফুলের স্পর্শে ঘুরছেন অনেকেই।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাশবনে গিয়ে দেখা গেল, ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধবসহ, কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কেউ কাশফুলকে জড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ছবি তুলছেন দল বেঁধে। একদল কিশোর-কিশোরী সেজেগুজে এসেছে। কাশফুলের সঙ্গে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছিল তারা। পাশেই মনু নদ থেকে উত্তোলন করা বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেই বালুর মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছেন অনেকে। শিশুদের কেউ কেউ কাশফুল ছিঁড়ে হাতে নিয়ে ঘুরছে। মনু নদে বইছে জলের প্রবাহ। সেদিকেও মুগ্ধ চোখে অনেকে তাকিয়ে ছিলেন। দীর্ঘ সাদা কাশবনে তখন বিকেলের আলোতে বিহ্বল করা রূপ খুলেছে কাশফুল।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রূপক দাস স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কাশবনে ঘুরতে এসেছেন। পুরো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খুশি খুশি ভাব। সেই উচ্ছ্বাসের কথা তাঁদের কথাতেও ঝরে পড়ছিল। রূপক দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাশবনের জায়গা থেকে আমার বাসা খুব দূরে না, নদের (মনু নদ) অপর পাড়ে। কিন্তু জানতাম না এখানে এ রকম একটি কাশবন আছে। আজকেই প্রথম এসেছি। এসে তো বিস্মিত! এই প্রথম এত বড় কাশবন দেখলাম। পরিবারের সবাইকে দেখাতে নিয়ে এসেছি।’

মৌলভীবাজার শহরের সৈয়ারপুর এলাকা থেকে এসেছেন গৃহিণী সোমা সেন। তিনি নানাভাবে কাশফুলের সঙ্গে অনেক ছবি তুললেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কাশবনে কাশফুল দেখতে আসলেই অনেক সুন্দর। খুবই মনোমুগ্ধকর।’

নবম শ্রেণিপড়ুয়া অরিন্দম দাসের চোখে তখনো কাশফুল দেখার বিস্ময়, মুগ্ধতা লেগে আছে। সে প্রথম আলোকে বলে, ‘একসঙ্গে আর কোথাও এত কাশফুল দেখছি না।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মনু নদের রায়শ্রী এলাকার এই পাড়টি আগে অনেকটাই খালি ছিল। বিন্না ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের ঘাস হতো। কিছু বুনো গাছগাছড়া, লতাপাতার ঝোপ হতো। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যেত, বালুর নিচে চাপা পড়ত সেই ঝোপ-লতা। চার-পাঁচ বছর ধরে এই এলাকায় নদের পাড়ের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাশফুল ফুটছে। ফুলে ফুলে পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। ভাদ্র মাসের শেষ থেকে ফুটতে শুরু করে। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে। তবে কার্তিকের দিকে সাদার উজ্জ্বলতা কিছুটা হালকা হয়ে আসে।

প্রতিদিনই এই কাশবনে ঘুরতে আসেন অনেক মানুষ। ছুটির দিনে এই সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এই পর্যটকদের বেশির ভাগই স্থানীয়। মৌলভীবাজার শহর, শহরতলি ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁরা ঘুরতে আসেন। মনু নদের উত্তর পাশে পড়েছে এই কাশবন। মনু নদের দক্ষিণ পাশে মৌলভীবাজার শহর। তিন দিক থেকেই এই স্থানটিতে যাওয়া যায়। চাঁদনীঘাট মনু সেতু থেকে পূর্ব দিকে চাঁদনীঘাট-মনু ব্যারেজ সড়ক গেছে। সেই সড়ক ধরে দেড়-দুই কিলোমিটার পথ গেলেই কাশফুলের বন। অন্যদিকে মাতারকাপন মনু ব্যারাজ থেকে পশ্চিম দিকে মনু সেতুর দিকে যেতে পড়েছে কাশবনটি। এ ছাড়া মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের ইসলামপুর এলাকার পেট্রল পাম্প থেকে চাঁদনীঘাট-মনু ব্যারাজে সড়কে আসা যায়। রায়শ্রীর কাশবনের স্থানটিতে গেলেই চোখে পড়ে কাশফুলের সাদা সাম্রাজ্য।

পরিবেশকর্মী রাজন আহমদ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকৃতিতে প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো ফুল ফুটে থাকে। রায়শ্রীতে কাশফুলের বন সে রকমই একটি। একসঙ্গে এত নিবিড় হয়ে ফুটে থাকা কাশফুল খুব বেশি জায়গায় দেখা যায় না। মনু নদের পাড়ে শিমুল, পলাশ, জারুলসহ দেশি জাতের ফুল গাছ লাগানো গেলে ভালো হতো। তাহলে বারো মাস কোনো না কোনো ফুল থাকত।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com