ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :আগুন, জীবনের একটি অনিবার্য অংশ। রান্না করতে গিয়ে একবারও আগুনের ছ্যাঁকা লাগেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
কখনো এই পোড়া সামান্য হতে পারে, আবার কখনো গুরুতর। তবে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আর ছোটখাটো পোড়া যেমন ছ্যাঁকা লাগা, ফোসকা হওয়া কিংবা চামড়া ছিলে গেলে এসবের চিকিৎসা আপনি বাড়িতেই সেরে ফেলতে পারেন। সেজন্য কয়েকটি উপায় জানা থাকা প্রয়োজন।
ল্যাভেন্ডার অয়েল: ল্যাভেন্ডার জীবাণুনাশক হিসেবে চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে উপস্থিত লিনালাইল অ্যাসিটেট ও বেটা ক্যারিওফিলিন প্রদাহ কমাতে ও ব্যথা উপশমে কাজ করে।
২-৩ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল তুলোতে নিন। এবার পোড়া অংশের চারপাশে ভালোভাবে লাগান। ভালো ফল পেতে দিনে তিনবার এভাবে লাগান।
সরিষা বীজ: সরিষা বীজে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যালাইল আইসোথিওসায়ানেট রয়েছে। যা আক্রান্ত স্থানের ব্যথা কমায় ও রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করে।
১ টেবিল চামচ সরিষা বীজের সঙ্গে ১/২ টেবিল চামচ পানি ভালোমতো ব্লেন্ড করে নিন। পোড়া চামড়ায় পেস্টটি ঠিকভাবে লাগান। দিনে কমপক্ষে তিনবার ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা প্রদাহ কমায় ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও কাজ করে ফলে ক্ষত সারাতে, ফোসকা কমাতে ও দাগ সারিয়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল নিন। সমানভাবে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। দিনে অন্তত ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
মধু: প্রাকৃতিক এ অ্যান্টিবায়োটিকে পিএইচ রয়েছে, যা পুড়ে যাওয়া ক্ষতকে সংক্রমিত হতে দেয় না। এটি জ্বালাপোড়া কমায় ও এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্রুত ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
২ চা চামচ মধু নিন। আক্রান্ত স্থানে মেখে রাখুন। ফল পেতে দিনে ৩ বার প্রয়োগ করুন।
টুথপেস্ট: টুথপেস্টে মিন্ট থাকায় এটি পোড়া অংশের ব্যথা কমায় ও ক্ষত মসৃণ করতে সাহায্য করে।
মিন্টযুক্ত সাদা টুথপেস্ট নিন। ক্ষত স্থানটি ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে এর চারপাশে পেস্ট লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে দিনে তিনবার এটি করতে হবে।
টি-ব্যাগ: চা পাতায় প্রচুর পরিমাণে টনিক এসিড থাকে। যা পুড়ে যাওয়া স্থানের তাপ কমায়। এছাড়াও টি-ব্যাগ ক্ষত স্থানের ব্যথা ও যন্ত্রণা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
২-৩টি ব্যবহৃত টি-ব্যাগ নিন। ব্যবহারের পর ঠাণ্ডা ও ভেজা টি-ব্যাগটি আক্রান্ত স্থানের ওপর রাখুন। ১০-১৫ মিনিট রাখতে গজ ব্যবহার করতে পারেন। দিনে কমপক্ষে দুইবার এভাবে করুন।
বেকিং সোডা: জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্য থাকায় বেকিং সোডা ক্ষত স্থানকে সংক্রমিত হতে দেয় না। এটি ত্বকের স্বাভাবিক পিএইচ ধরে রাখতে পারে, ফলে পুড়ে যাওয়ার ব্যথা ও যন্ত্রণা দ্রুত কমে যায়।
১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা ১/২ টেবিল চামচ পানিসহ ব্লেন্ড করে নিন। পেস্টটি সরাসরি ক্ষত স্থানে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই তরিকা দিনে অন্তত ২-৩ বার অনুসরণ করা আবশ্যক।
নারিকেল তেল: বৈজ্ঞানিক নাম কোকোজ নসিফেরা। এটি চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। এটি ক্ষত স্থানের জ্বালাপোড়া কমাতে পারে। পুড়ে যাওয়া যন্ত্রণা, ফুসকুঁড়ি ও দাগ সারাতেও সাহায্য করে।
১-২ চা-চামচ নারিকেল তেল সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগান। আপনার ত্বক এটি শুষে নেওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। দ্রুত আরোগ্য পেতে দিনে তিনবার প্রয়োগ করুন।
দুধ: দুধে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও প্রোটিন থাকে যা পোড়া ক্ষত শীতল ও নিরাময় করতে দ্রুত কাজ করে।
১/৪ কাপ ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা দুধ তুলোর মধ্যে নিয়ে ক্ষত স্থানে লাগান। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্যথা ও পোড়া অনুভূতি না কমা পর্যন্ত দু’ঘণ্টা পরপর এটি করুন।
ভিনেগার: ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। ভিনেগারে রয়েছে অ্যাসেটিক এসিড যা প্রদাহ কমাতে ও ব্যথা উপশমের জন্য সুপরিচিত। ছোটখাটো পুড়ে যাওয়া ক্ষত কমাতে ভিনেগার ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
২ চা-চামচ ভিনেগার ও ২ চা-চামচ পানি একত্রে মেশান। মিশ্রণটি তুলোয় করে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। দিনে ২-৩ বার এটি করতে পারেন।
লবণ: লবণে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড। এর প্রাকৃতিক নিরাময় শক্তি ও অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল আছে যা ফোসকা সারাতে ও দ্রুত পুড়ে যাওয়া সারিয়ে তুলতে কাজ করে।
কয়েক ফোঁটা পানির সঙ্গে ১ চা-চামচ লবণ মিশিয়ে পেস্ট বানান। আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। দিনে কয়েকবার এটি করতে পারেন।