ইউকে শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
হেডলাইন

বউ-শাশুড়ির সুসম্পর্কের প্রভাব

ইউকে বাংলা অনলাইন ডেস্ক :বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক এবং প্রাপ্তিগুলো দ্বিপক্ষীয়। উভয়কেই নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও অধিকারের সীমারেখা সম্পর্কে ধারণা থাকা চাই। এর মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে মিষ্টি-মধুর সম্পর্ক তৈরি হবে, যা প্রশান্তিময় পারিবারিক জীবন গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

১. দায়িত্বসচেতন হওয়া : সবাই দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হলে পরিবারের শৃঙ্খলা অনেক অটুট ও সুন্দর হবে।

প্রায়ই দেখা যায়—অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, হটকারিতা ও জেদের বশে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের প্রতি খেয়াল রাখা হয় না। এভাবে সমস্যাগুলো তৈরি হতে থাকে। একপর্যায়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ বা হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সবার মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকলে এমন হতো না।

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। (বুখারি, হাদিস : ৮৫৩; মুসলিম, হাদিস : ৪৮২৮)

২. শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন : স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান-মর্যাদা প্রদান ও সমীহ করা কর্তব্য। যথাসাধ্য তাদের ভালোবাসা ও সেবাযত্ন করা কল্যাণ ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। শাশুড়ির অসুস্থতার সময় সবচেয়ে বেশি দরকার পড়ে তার ছেলের বউকে।

এ সময় পিছপা না হয়ে তার যত্ন নিতে হবে। তাকে নিজের মায়ের মতোই ভাবতে হবে। একসঙ্গে থাকতে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করা- পারিবারিক, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্বও বটে। এ রীতি সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও দেখা যায়। কাবশাহ বিনতু কাব ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি (কাবশাহ) ছিলেন আবু কাতাদাহ (রা.)-এর পুত্রবধূ।

একবার আবু কাতাদা (রা.) [কাবশা (রা.)-এর শ্বশুর] ঘরে প্রবেশ করেন। তখন কাবশা (রা.) শ্বশুরকে নিজ হাতে পানি ঢেলে দেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৫)

৩. স্বামীকে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্বশীল হতে বলা : অনেক স্ত্রী চায়—তার স্বামী শুধু তার দিকে খেয়াল রাখুক এবং তার মা-বাবাকে এড়িয়ে চলুক। এমনটি মোটেও কাম্য নয়। কারণ স্ত্রীর প্রতি যেভাবে স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে, তেমনি মা-বাবার প্রতিও সন্তানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীদের উচিত স্বামীদের তাদের মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে উৎসাহিত করা। একজন স্ত্রী চাইলে তাঁর স্বামীকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করতে পারে। এটি নেককার স্ত্রীর অন্যতম গুণ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুয়াজ বিন জাবাল (রা.)-কে বলেন, ‘হে মুয়াজ, শোকরকারী হৃদয়, জিকিরকারী জিহ্বা এবং পুণ্যময়ী স্ত্রী; যে তোমাকে তোমার দুনিয়া ও দ্বিনের কাজে সহযোগিতা করে—এ হলো মানুষের জন্য সঞ্চিত সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৪১১৬)

৪. সন্তানদের দাদা-দাদির মমতা লাভের সুযোগ দেওয়া : সন্তানদের দাদা-দাদির স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্ছিত করা যাবে না। সন্তানদের তাদের কাছে যাওয়ার, থাকার ও গল্প শোনার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে একদিকে নাতি-নাতনিদের কাছে পেয়ে তাদেরও একাকিত্ব দূর হবে, আবার পারিবারিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে। নবী (সা.) নাতিদের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্ত পার করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আটজন নাতি-নাতনির কথা জানা যায়। জয়নব (রা.) ও আবুল আসের ঘরে দুজন : আলী ও উমামা। রুকাইয়া ও উসমানের ঘরে একজন—আবদুল্লাহ। ফাতেমা (রা.) ও আলী (রা.)-এর ঘরে পাঁচজন: হাসান, হুসাইন, মুহসিন, জয়নব ও উম্মে কুলসুম। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৩০৬)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) হাসান-হুসাইনকে কাঁধে নিয়ে বের হলেন (দুই কাঁধে দুজন ছিল)। তিনি একবার হাসানকে চুমা দেন আরেকবার হুসাইনকে, এভাবে করতে করতে আমাদের কাছে আসেন। তখন এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি এদের খুব ভালোবাসেন? তখন তিনি বলেন, ‘যে তাদের (হাসান-হোসাইন) ভালোবাসবে, সে আমাকে ভালোবাসবে। আর যে তাদের রাগান্বিত করবে, সে আমাকে রাগান্বিত করবে।’ (মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ৪৭৭৭)

৫. শাশুড়ির সঙ্গে নিজের পছন্দের আচরণ করা : আজকের দিনের পুত্রবধূ আগামী দিনে শাশুড়ি হবেন। কাজেই নিজের জন্য যা পছন্দ, ভালো ও কল্যাণকর মনে হবে—শাশুড়ির জন্যও তা ভালো মনে করা। শাশুড়ির জায়গার নিজেকে চিন্তা করে, তার সঙ্গে নিজের পছন্দের বিবেচনায় আচরণ করা। এ ক্ষেত্রে শাশুড়ির পছন্দের বিষয় খেয়াল রাখা এবং শাশুড়ি পছন্দ করেন না—এমন বিষয় এড়িয়ে চলা। এতে শাশুড়ির সঙ্গে পুত্রবধূর সুমধুর সম্পর্ক তৈরি হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ না করে। (বুখারি, হাদিস ১৩; মুসলিম, হাদিস : ৪৫)

৬. শোনা কথায় কান না দেওয়া : শোনা কথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া পরিবারের পরিবেশ বিষাক্ত করে দেয়। তাই কোনো কথা শুনলে তা যাচাই করার আগে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। বউ-শাশুড়িসহ সবাই এসব এড়িয়ে চললে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যেন অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সমপ্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে না বস এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৬)

৭. পুত্রবধূকে সহায়তা ও মূল্যায়ন করা : আসলে পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো করে ভাবলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। পুত্রবধূর কাজে সাহায্যের হাত বাড়ালে তিনি খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। কাজেই পুত্রবধূকে সহায়তা করা ও তার কাজের মূল্যায়ন করা উচিত।

৮. পরস্পর উপহার বিনিময় করা : উপহার হলো—কোনো প্রকার শর্ত ও স্বার্থ ছাড়া কারো প্রতি অনুরাগী হয়ে উপঢৌকন প্রদান করা। উপহারদাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সম্মানিত করে। উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ফলে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, এতে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৪)

পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম ও নৈতিকতাবোধের দাবি হলো—স্ত্রী স্বামীর বাবা-মাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দেবেন। তাদের প্রতি সমীহের চোখে দেখবেন। আর শ্বশুর-শাশুড়ি পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও মমতায় আবদ্ধ করে রাখবেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন :

সর্বশেষ সংবাদ

ukbanglaonline.com